তিন মাসেও চালু হয়নি কিসান বাজার

ঝাঁ চকচকে স্টল, গুদামঘর। স্টলের গায়ে পড়েছে নীল-সাদা রঙের প্রলেপ। বাজারের পাশেই রয়েছে পণ্যবাহী গাড়ি রাখার জায়গা। প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো তৈরি। উদ্বোধনও সারা। তবে চালু হয়নি কেশপুরের কিসান বাজার। কবে চালু হবে, নির্দিষ্ট করে তাও কারোর জানা নেই! সংশয় বাজারের ভবিষ্যৎ নিয়েই। রাজ্যের প্রতিটি ব্লকে একটি করে কিসান বাজার (ঘোষণার সময় নাম দেওয়া হয়েছিল কিসান মাণ্ডি) তৈরির পরিকল্পনা করে রাজ্য সরকার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কেশপুর শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০১৪ ০১:২৮
Share:

কেশপুরের কিসান বাজার।! ছবি: রামপ্রসাদ সাউ

ঝাঁ চকচকে স্টল, গুদামঘর। স্টলের গায়ে পড়েছে নীল-সাদা রঙের প্রলেপ। বাজারের পাশেই রয়েছে পণ্যবাহী গাড়ি রাখার জায়গা। প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো তৈরি। উদ্বোধনও সারা। তবে চালু হয়নি কেশপুরের কিসান বাজার। কবে চালু হবে, নির্দিষ্ট করে তাও কারোর জানা নেই! সংশয় বাজারের ভবিষ্যৎ নিয়েই।

Advertisement

রাজ্যের প্রতিটি ব্লকে একটি করে কিসান বাজার (ঘোষণার সময় নাম দেওয়া হয়েছিল কিসান মাণ্ডি) তৈরির পরিকল্পনা করে রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগেই এই পরিকল্পনা। সেই মতো জেলায় জেলায় নির্দেশ আসে। বিভিন্ন ব্লকে কিসান বাজার তৈরির তোড়জোড় শুরু হয়। বছর দুয়েক আগে কেশপুরেও এই বাজার তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়। কাজ শুরু হয়। প্রায় পনেরো বিঘা জমির উপর গড়ে উঠছে এক-একটি বাজার। খরচ হয়েছে প্রায় সাড়ে ছ’কোটি টাকা।

এখানে ঠিক কী কী থাকছে? কৃষিপণ্য বিক্রির স্টল, গুদামঘর, ওজনঘর, পণ্যবাহী গাড়ি রাখার জায়গা, কৃষক সহায়ক ভবন প্রভৃতি। কৃষি বিপণন দফতরের এক কর্তার কথায়, “এখানে চাষিরা উৎপাদিত পণ্য নিয়ে সরকারি স্টলে বসে বিক্রি করতে পারবেন, তেমনি পাইকারি ব্যবসায়ীরা সরাসরি চাষিদের থেকে পণ্য কিনতে পারবেন। ফলে, ফড়েদের উপদ্রব কমবে।”

Advertisement

কেন? প্রশাসন সূত্রে খবর, সমস্যাটা অন্যত্র। কোন নীতিতে এগুলো পরিচালিত হবে তাই এখনও ঠিক হয়নি! কৃষি দফতরের এক কর্তার কথায়, “যে কোনও সরকারি বাজার চালু করার জন্য একটা ব্যবস্থা থাকা চাই। কিসান বাজার চালুর ক্ষেত্রেও একটা ব্যবস্থা থাকা দরকার। সেই ব্যবস্থাটাই এখনও তৈরি হয়নি।” তা হলে গড়ে ওঠা এই পরিকাঠামো কী এ ভাবেই পড়ে থাকবে?

সূত্রের খবর, ইতিমধ্যে এ নিয়ে রাজ্যস্তরে আলোচনা শুরু হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে, কিসান বাজারগুলোর জন্য একটি পরিচালন সমিতি থাকবে। সমিতিতে স্থানীয় বিধায়ক, সরকার মনোনীত দু’জন আধিকারিক, পাঁচ জন চাষি, তিন জন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এবং ব্যাঙ্ক ও সমবায় সমিতির এক জন করে প্রতিনিধি থাকবেন। পশ্চিমবঙ্গ নিয়ন্ত্রিত বাজার আইন মেনে পরিচালন সমিতি তৈরি হতে পারে। কৃষি বিপণন দফতরের ওই কর্তার কথায়, “শুনেছি পরিচালন নীতি তৈরি করে আগামী বছরের গোড়ায় বাজারগুলো চালুর চেষ্টা করা হচ্ছে।” এই অবস্থায় সরকারের সমালোচনা করতে ছাড়ছে না বিরোধীরা। সিপিএমের কৃষক নেতা হরেকৃষ্ণ সামন্ত বলেন, “সব দিক খতিয়ে না দেখেই জায়গা ঠিক করা হল। এ সব লোক দেখানো ছাড়া কিছু নয়।” জেলা পরিষদের কৃষি কর্মাধ্যক্ষ নির্মল ঘোষ অবশ্য বলেন, “শীঘ্রই বাজার চালু হবে।” কেশপুরের তৃণমূল নেতা চিত্ত গড়াইও বলেন, “আগামী বছরের জানুয়ারিতে কিসান বাজার চালু হবে।” বাজার নিয়ে আশায় চাষিরাও। কেশপুরের অজয় সাউ, শ্যামল মণ্ডল প্রমুখ চাষির কথায়, “বাজার নিয়ন্ত্রণ করে মূলত ফড়েরাই। কখনও তাদের লাভ হয়। কখনও খুব লাভ হয়। উপায় না থাকায় অনেকেই ফড়েদের কাছে কম দামে ফসল বিক্রি করতে বাধ্য হন। কিসান বাজার চালু হলে পরিস্থিতি কিছুটা পাল্টাতে পারে।” কেশপুরে চাষ খুব কম এলাকায় হয় না। এখানকার প্রায় ৩৩ হাজার হেক্টর জমিতে আমন চাষ হয়। প্রায় ১১ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়। প্রায় ১ হাজার হেক্টর জমিতে সব্জি চাষ হয়। প্রায় ৩ হাজার হেক্টর জমিতে সরষে চাষ হয়।

কেশপুরের ব্লক কৃষি আধিকারিক শিমূল ভট্টাচার্য বলেন, “কিসান বাজার চালু হলে এলাকার কৃষকেরাই উপকৃত হবেন।” শীঘ্রই এই বাজার চালু হবে বলে জানান কেশপুরের বিডিও মহম্মদ জামিল আখতারও। বাজার চত্বরের মধ্যে কিছুটা ফাঁকা জায়গা রয়েছে। কেন? প্রশাসন সূত্রে খবর, শুরুতে ঠিক ছিল, প্রতিটি বাজারে একটি করে হিমঘর থাকবে। তবে পরে ঠিক হয়, সরকারি উদ্যোগে আপাতত কোনও হিমঘর তৈরি হবে না। পরবর্তী সময় বেসরকারি উদ্যোগে হিমঘর তৈরি হতে পারে। পরিচালন সমিতি গড়ে কবে এই বাজার চালু হয়, সেটাই দেখার।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement