তৃণমূলের সংঘর্ষ, কেশপুরে জখম তিন

এলাকা দখল ঘিরে ফের উত্তপ্ত হল কেশপুর। এ বার তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষ বাধল আনন্দপুর থানার টাঙ্গাগেড়্যায়। জখম হলেন তিন জন। এঁদের মধ্যে দু’জন বোমায় জখম। শুক্রবার সকালে হঠাত্‌ এই সংঘর্ষ বাধে। ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশ। তৃণমূলের দাবি, গোষ্ঠী সংঘর্ষ নয়, সিপিএমের লোকজনই হামলা করে। জখমরা প্রত্যেকে তৃণমূলের কর্মী-সমর্থক। পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ বলেন, “একটা গোলমাল হয়েছে। এলাকায় পুলিশ রয়েছে। সব দিক খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করা হবে।”

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০১৪ ০১:২৪
Share:

মেদিনীপুর মেডিক্যালে জখম মুস্তাকিন আলি (বাঁ দিকে) ও শেখ আব্দুল রশিদ। —নিজস্ব চিত্র।

এলাকা দখল ঘিরে ফের উত্তপ্ত হল কেশপুর। এ বার তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষ বাধল আনন্দপুর থানার টাঙ্গাগেড়্যায়। জখম হলেন তিন জন। এঁদের মধ্যে দু’জন বোমায় জখম। শুক্রবার সকালে হঠাত্‌ এই সংঘর্ষ বাধে। ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশ। তৃণমূলের দাবি, গোষ্ঠী সংঘর্ষ নয়, সিপিএমের লোকজনই হামলা করে। জখমরা প্রত্যেকে তৃণমূলের কর্মী-সমর্থক। পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ বলেন, “একটা গোলমাল হয়েছে। এলাকায় পুলিশ রয়েছে। সব দিক খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করা হবে।” রাত পর্যন্ত এ ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, জড়িতদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।

Advertisement

কেশপুরের ঘটনায় বিড়ম্বনায় তৃণমূল নেতৃত্ব। কী কারণে টাঙ্গাগেড়্যার গোলমাল? দু’রকম বক্তব্য উঠে এসেছে তৃণমূল নেতাদের কথায়। তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোত্‌ ঘোষ বলেন, “এ দিন সকালে আচমকাই ওই এলাকায় সিপিএমের লোকজন হামলা করে। বোমাবাজি করে।” কিন্তু, বোমায় জখম গফফ্র খাঁ, এনামুল হক এঁরা তো তৃণমূলেরই নেতা? মেজাজ হারিয়ে শাসক দলেরই কেশপুর ব্লক সভাপতি সঞ্জয় পানের মন্তব্য, “দুই পরিবারের মধ্যে গোলমাল! এখানেও তৃণমূলকে জড়ানো হচ্ছে! কেশপুরে দলের কর্মী-সমর্থক তো কম নয়। তাই বলে কী কিছু হলেই ঘটনার সঙ্গে তৃণমূলকে জড়িয়ে দিতে হবে!”

কেশপুরের সিপিএম বিধায়ক রামেশ্বর দোলুই বলেন, “তৃণমূলের দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। গোষ্ঠী কোন্দল ধামাচাপা দিতে ওরা মিথ্যে অভিযোগ করছে।” তাঁর কথায়, “গোটা রাজ্যে যা চলছে, কেশপুরেও তাই চলছে। ওঁদের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা পঞ্চায়েতের অর্থ লুঠ করতে হামলে পড়ছে। লুঠ করা অর্থের ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়েও তুমুল দ্বন্দ্ব হচ্ছে। সাধারণ মানুষের জীবনও নাজেহাল।”

Advertisement

পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুর এক সময় সিপিএমের ‘লালদুর্গ’ বলে পরিচিত ছিল। রাজ্যে পালাবদলের পরপরই পরিস্থিতি বদলে যায়। তবে কেশপুরে তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দল নতুন কিছু নয়। কোন্দল রয়েছে একেবারে বুথস্তর পর্যন্ত। যদিও তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব কখনওই এই কোন্দলের কথা মানতে রাজি হন না। দলের জেলা কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোত্‌বাবুর কথায়, “এ সব কুত্‌সা- অপপ্রচার ছাড়া কিছু নয়।” স্থানীয় ও দলেরই এক সূত্রে খবর, টাঙ্গাগেড়্যাতেও তৃণমূলের দু’টি গোষ্ঠী রয়েছে। মাঝেমধ্যেই তাদের বাদানুবাদ বাধে। একদিকে রয়েছেন স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য এনামুল হক এবং তাঁর অনুগামীরা। অন্য দিকে, রয়েছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতা গফফ্র খাঁ এবং তাঁর অনুগামীরা। গফফ্র আবার দলের অন্দরে চিত্ত গড়াইয়ের অনুগামী বলে পরিচিত। এনামুল সঞ্জয় পানের অনুগামী। চিত্তবাবু তৃণমূলের প্রাক্তন কেশপুর ব্লক সভাপতি।

টাঙ্গাগেড়্যার আশপাশেই রয়েছে রণপাড়া, ঝাঁটিয়াড়া প্রভৃতি এলাকা। এই প্রথম নয়, আগেও এই সব এলাকায় রাজনৈতিক সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়েছে। উত্তেজনাও ছড়িয়েছে। জানা গিয়েছে, সম্প্রতি গফফ্র গোষ্ঠীর লোকেদের কিছু কাজকর্মের প্রতিবাদে দলের বাইরে-ভিতরে সরব হন এনামুল গোষ্ঠীর লোকেরা। দিন কয়েক আগে গফফ্র গোষ্ঠীর লোকেরা এলাকারই দু’জনের উপর কার্যত বয়কটের ফতোয়া জারি করে। সম্প্রতি এক উত্‌সব গিয়েছে। উত্‌সবের দিনেও ওই দু’জনের উপর বয়কটের ফতোয়া জারি ছিল। ফলে, তাঁর ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে সামিলই হতে পারেননি। এ সবের প্রতিবাদ করেন এনামুল গোষ্ঠীর লোকেরা। এর ফলে, দুই গোষ্ঠীর দূরত্ব আরও বাড়ে। অভিযোগ, এ দিন সকাল সাড়ে ছ’টা নাগাদ গফফ্র অনুগামী বলে পরিচিত বেশ কয়েক জন টাঙ্গাগেড়্যায় হামলা করে। সংঘর্ষ বাধে। বোমাবাজি হয়। কয়েক’টি বাড়িতেও ভাঙচুর হয়।

ঘটনার পর স্থানীয়রাই জখমদের হাসপাতালে ভর্তির করান। পৌঁছয় পুলিশ। পরে আসেন তৃণমূলের ব্লক নেতৃত্ব। আব্দুল রশিদ এবং মুস্তাকিন আলি নামে দু’জন বোমা ফেটে জখম হন। শেখ লখু নামে অন্য একজনের মাথায় লাঠির আঘাত লাগে। জখম তিন জনই তৃণমূলের কর্মী-সমর্থক বলে পরিচিত। শুরুতে তিন জনকেই উদ্ধার করে কেশপুর গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরে বোমায় জখম দু’জনকে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে স্থানান্তরিত করা হয়। পরে পরিজনেরা তাঁদের কটকের হাসপাতালে নিয়ে যান। মুস্তাকিনের ডান হাতে আঘাত রয়েছে। আব্দুলের বাঁ হাতে। হাসপাতাল সূত্রে খবর, মুস্তাকিনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। রাতের দিকে শেখ লখুর অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে এসএসকেএম-এ স্থানান্তর করা হয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement