মন ভাল নেই বিকাশ মুদির! নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে দেশ গড়ার ডাক দিয়েছে দল। কথা ছিল তারকা প্রার্থীরা এসে তৃণমূলের ‘প্রচার-ফানুস’ ফাটিয়ে দেবেন! কিন্তু কোথায় কী! ঝাড়গ্রাম লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থীর সমর্থনে দলের বড় কোনও নেতা কিংবা তারকারা প্রচারে আসেন নি। ভোটের প্রচারে এবং তারকার ভোজবাজিতে এগিয়ে থাকল সেই তৃণমূলই। গত কয়েক দিন ধরে তৃণমূলের সভাগুলিতে মিঠুন চক্রবর্তী, দেব, হিরণ, রুদ্রনীলের মতো আম জনতার ‘স্বপ্নের নায়কেরা’ কপ্টারে ধুলো উড়িয়ে এসে ভোট চেয়েছেন। মাওবাদীদের এক সময়ের খাসতালুক বেলপাহাড়িতেও ‘টলিউড হার্টথ্রব’ দেবের পাশাপাশি, অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষ, পরিচালক রাজ চক্রবর্তীরা তৃণমূল প্রার্থী উমা সরেনের হয়ে ভোট ভিক্ষে করেছেন। জঙ্গলমহলে এই ক’দিনে তৃণমূলের নির্বাচনী সভাগুলিতে বক্তা হিসেবে তারকাদেরই প্রাধান্য ছিল চোখে পড়ার মতো। গত শুক্রবার বেলপাহাড়িতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভাতেও প্রথম তিন বক্তা ছিলেন রুদ্রনীল, রাজ চক্রবর্তী ও দেব।
তৃণমূলের তারকা প্রচারের ঝড়ে দিশেহারা অবস্থা বিজেপি’র। কেন না, জঙ্গলমহলে বিজেপির তরফে প্রতিশ্রুতি ছিল, হেমা মালিনী, শত্রুঘ্ন সিংহ, শত্রুঘ্ন-তনয়া সোনাক্ষী সিংহের মতো তারকারা জঙ্গলমহলে ভোটের প্রচারে আসবেন। কিন্তু কেউই আসেন নি। আজ প্রচারের শেষ লগ্নেও বিজেপি’র বড় মাপের নেতা-তারকার আসার খবর নেই। বরং রবিবার বিজেপি’র প্রচার-গাড়ি থেকে দলের রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের রেকর্ড করা বক্তৃতা বাজানো হয়েছে। কিন্তু তাতে কী আর চিঁড়ে ভেজে! বিজেপি নেতৃত্বের একাংশ ঘনিষ্ঠ মহলে স্বীকার করছেন, এবার জঙ্গলমহলে ভোটের প্রচারে একাধিক তারকাদের এনে বাজিমাত করেছে তৃণমূল। সেই সঙ্গে প্রচারের সুরটাও বেঁধে দিয়েছে শাসক-দল। কী সেই সুর? রুপোলি পর্দার তারকারা আদিবাসী অধ্যুষিত অনগ্রসর বলয়ে এসে রাজ্য সরকারের ‘সদিচ্ছা’র কথা জানাচ্ছেন। বলছেন, ৩৪ বছরে যা হয় নি, তা দু’বছর নয় মাসে নাকি, অনেকটাই হয়ে গিয়েছে। ফলে, বিরোধী দলগুলির উপর চাপ বেড়েছে। বিজেপির ঝাড়গ্রাম জেলা সাধারণ সম্পাদক সঞ্জিত মাহাতো বলেন, “তারকারা আসার ব্যাপারে আমরা আশাবাদী ছিলাম। কিন্তু শেষ মুহূর্তে কোনও তারকাই ঝাড়গ্রামের জন্য সময় দিতে পারলেন না। তবে রবিবার জঙ্গলমহলের পাশের জেলা বাঁকুড়ায় নজরকাড়া সভা করেছেন প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদীজি। তিনিই তো আমাদের সবচেয়ে বড় তারকা!” জঙ্গলমহলে কংগ্রেসের প্রচার-পারদও তেমন উর্ধ্বমুখী নয়। প্রচার শেষের ৩৩ ঘণ্টা আগে ঝাড়গ্রাম লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত গড়বেতা ও বেলপাহাড়িতে সভা করেছেন কংগ্রেসের বিধায়ক জোসেফ মুণ্ডা ও গুলাম রব্বানি। ঝাড়গ্রামে প্রচার করতে এসেছিলেন কংগ্রেস বিধায়ক অসিত মিত্র। প্রচারে খামতির বিষয়টি নিয়ে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কংগ্রেসের সহ সভাপতি সুব্রত ভট্টাচার্য়ের মন্তব্য, “তৃণমূল ও বিজেপির থেকে আর্থিক দৌড়ে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। তাই লোক দেখানো, চোখ ধাঁধানো প্রচার আমরা করছি না। আমরা ছোট ছোট পথসভা ও বৈঠক করে বিগত দশ বছরে কেন্দ্রীয় সরকার কী কী গ্রামোন্নয়নের কাজ করেছে তা মানুষের কাছে গিয়ে বলছি।” বামেরা অবশ্য তৃণমূলের তারকা-প্রচারকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। ঝাড়গ্রাম লোকসভা কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী পুলিনবহারী বাস্কের সমর্থনে কয়েক দিন আগে ঝাড়গ্রামে প্রচার করে গিয়েছেন সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য তথা বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। গড়বেতায় প্রচার করে গিয়েছেন সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মহম্মদ সেলিম। এসেছেন আরও অনেক বাম নেতারা। সিপিএম প্রার্থী পুলিনবিহারী বাস্কে বলছেন, “জঙ্গলমহলে তৃণমূলের উন্নয়নের ভাঁওতাবাজি ধরা পড়ে গিয়েছে। তাই ওরা পূর্ণিমার চাঁদ দেখানোর মতো তারকাদের এনে জনগণকে ধরে রাখার চেষ্টা করছে। অমাবস্যায় কিন্তু চাঁদ দেখা যায় না।” রবিবারও জঙ্গলমহলের সর্বত্র দলীয় প্রার্থী উমা সরেনের সমর্থনে ঝাঁপিয়েছে তৃণমূল। গোপীবল্লভপুর-২ ব্লকে প্রচার করেন মন্ত্রী সুকুমার হাঁসদা। তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি নির্মল ঘোষের নেতৃত্বে জামবনি ব্লকে মিছিল করা হয়। খোদ তৃণমূল প্রার্থী উমা সরেন এ দিন বিকেলে ঝাড়গ্রাম শহরে হুডখোলা গাড়িতে চেপে রোড-শো করেন। তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি নির্মল ঘোষ বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর জঙ্গলমহলের মানুষের ভরসা রয়েছে। দেব আমাদের প্রার্থী। মিঠুন আমাদের রাজ্যসভার সাংসদ। সকলেই চাইছেন ঝাড়গ্রাম কেন্দ্রে জোড়া ফুল ফুটুক। ভোটের বাক্সে কটা বাড়তি প্রভাব পড়বেই।”