জখম ও অচৈতন্য অবস্থায় এক তৃণমূল নেতাকে উদ্ধারের ঘটনায় দুই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করল পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত শঙ্কর পাঁজা ঘাটাল থানারই বালিডাঙার বাসিন্দা। ঘটনায় সাহায্য করার দায়ে সমীর কুলসি নামে আর এক যুবককেও ধরা হয়েছে। ধৃতদের মঙ্গলবার ঘাটাল আদালতে তোলা হলে বিচারক তিন দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন।
রাতভর নিখোঁজ থাকার পর রবিবার কুরান গ্রাম সংলগ্ন এনায়েতপুরের একটি পাম্পঘর থেকে অচৈতন্য অবস্থায় খোঁজ মিলেছিল উত্তম দিকপতি নামে ওই তৃণমূল কর্মীর। তাঁর গলায় জখমের চিহ্নও ছিল। ঘটনার দিন থেকে কলকাতার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন উত্তমবাবু। ঘটনার পর তৃণমূল অভিযোগ তুলেছিল, সিপিএম ও বিজেপি যৌথ ভাবেই ওই কাণ্ড করেছে। তবে ওই দু’পক্ষই অভিযোগ অস্বীকার করেছিল। এমনকী উত্তম দিকপতির স্ত্রী তথা দলের মহিলা শাখার এনায়েতপুর বুথের সভানেত্রী কমলা দিকপতিও স্বামীকে হামলার বিষয়ে মামলাও করেন। এরপরই ঘটনার তদন্ত শুরু করে পুলিশ।
এই ঘটনার পরই তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, আগে উত্তম দিকপতি সোনার কাজ করতেনআর মুম্বইতে। তাঁর সঙ্গেই শঙ্কর কাজ করতেন। সেই থেকেই আলাপ। এই সূত্রেই শঙ্করের সঙ্গে বিবাহ-বহির্ভুত সম্পর্ক তৈরি হয় উত্তমবাবুর স্ত্রী কমলাদেবীর। বিষয়টি নজর এড়ায়নি উত্তমবাবুরও। স্বাভাবিকভাবেই বিষয়টি ভালভাবে নেননি তিনি। প্রথামিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, সেই কারণেই উত্তমবাবুকে খুনের পরিকল্পনা করা হয়। জেরায় শঙ্কর জানিয়েছে, উত্তমবাবুকে খুনের পরিকল্পনায় শঙ্করের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ছিলেন কমলাদেবীও। ঠিক কী ঘটেছিল সে রাতে? পুলিশ জানিয়েছে,ওই রাতে প্রথমে স্থানীয় একটি মাঠে উত্তম দিকপতিকে নিয়ে মদ খায় শঙ্কর ও সমীর। মদের সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছিল ঘুমের বড়ি। ফলে ওই মদ খেয়ে অচৈতন্য হয়ে পড়েছিলেন উত্তমবাবু। এরপর সমীরের বাইকে উত্তমবাবুকে চাপিয়ে ওই পাম্প ঘরে নিয়ে আসা হয়। সেখানেই ছুরি দিয়ে কেটে দেওয়া হয় উত্তমবাবুর গলার নলি। সমীর-শঙ্করের অনুমান ছিল, উত্তমবাবু মারা গিয়েছেন। কিন্তু পরদিন সমীর-শঙ্করের অনুমান ছিল, উত্তমবাবু মারা গিয়েছেন।
পুলিশের দাবি, কমলীদেবীর সঙ্গে শঙ্করের পুলিশ জানিয়েছে,একটি বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কের প্রমাণ মিলেছে দু’জনের মোবাইল থেকেই। কিন্তু ঘটনার সঙ্গে কমলাদেবীর কতটা যুক্ত তা খতিয়ে দেখেই তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর এই বিষয়টি জানাজানি হতেই সিপিএম এবং বিজেপির হুঁশিয়ারি, “পুলিশ যদি না কমলা দিকপতিকে গ্রেফতার না করে তাহলে থানায় বিক্ষোভ হবে। চলবে আইনি লড়াইও।” বিড়ম্বনায় তৃণমূল নেতৃত্বও। তবে দলের কেউই এই বিষয়ে মুখ খুলতে নারাজ। দলের ঘাটাল ব্লকের সাধারণ সম্পাদক পঞ্চানন মণ্ডল বলেন, “বিষয়টি নিয়ে দলের পক্ষ থেকে তদন্ত চলছে। পুলিশ কাজ করছে। আমাদের কিছুই বলার নেই।”