খড়্গপুরে কর্মিসভায় সুব্রত বক্সী। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।
জেলায় এসে ফের শুদ্ধকরণের বার্তা দিলেন তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী। শনিবার দুপুরে খড়্গপুরে দলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে বৈঠকে এক দিকে যেমন পদ আঁকড়ে কলাগাছের মতো ফুলেফেঁপে ওঠা চলবে না বলে হুঁশিয়ারি দেন সুব্রতবাবু, তেমনই মনে করিয়ে দেন দুর্নীতি করলে মানুষ কখনও রেয়াত করবে না। তৃণমূল রাজ্য সভাপতির কথায়, “১৯৮৪ সালে লোকে যখন বলেছিল ইন্দিরা গাঁধীর সেন্টিমেন্ট মারা গিয়েছে, তখনও ৪১৪টি আসন নিয়ে রাজীব গাঁধী প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। কিন্তু ১৯৮৯ সালে একটা শুধু বোফর্সের আওয়াজ তুলে তাঁদের হারিয়ে দেওয়া হল। আর আজ তাদের ৪৪-এ (গত লোকসভা ভোটে গোটা দেশে কংগ্রেসের প্রাপ্ত আসন) নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। মনে রাখতে হবে ভারতের গণতন্ত্র মানুষের হাতে রক্ষিত।”
আগামী ১৯ নভেম্বর খড়্গপুরে দলের সাংগঠনিক সভা করতে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ দিন তারই প্রস্তুতি বৈঠক করলেন সুব্রতবাবু। এর আগে মেদিনীপুরে এক কর্মিসভাতেও দলের নেতা-কর্মীদের দুর্নীতির প্রশ্নে সতর্ক করে দিয়েছিলেন তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি। এ দিনও তিনি বলেন, “সার্বিক ভাবে দল যত প্রসারিত হয়, ক্ষমতাকে ঘিরে তত মানুষ আকৃষ্ট হয়। ক্ষমতায় থাকাকালীন দরজা খুললেই আপনার বাড়িতে দেড়শো লোক হাজির হয়ে যাবে। তবে মনে রাখবেন, ১৯৯৮ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত আপনার গাড়ি খোলা, বাজার বয়ে দেওয়ার লোক ছিল না।”
এরপরই সুব্রতবাবুর পরামর্শ, দলে দীর্ঘমেয়াদী আর স্বল্প মেয়াদী, এই বিভাজন যেমন মানুষের মনে রেখাপাত না করে। যাঁরা অল্প দিন হল তৃণমূলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন, তাঁদের উদ্দেশে রাজ্য সভাপতির বার্তা, “যাঁরা দলে অল্পমেয়াদী তাঁরা ভাবছেন, আমার একটা পদ, প্রশাসনে একটা আসন হয়েছে। চার-পাঁচ বছর দল থাকবে কি না জানি না, আমি তো থাকব। কলাগাছের মতো মোটা হব। হতে পারবেন না, সম্পদ ছেড়ে বাইরে থাকতে হবে। না হলে অনুজ পাণ্ডে, লক্ষ্মণ শেঠদের মতো অবস্থা হবে।” তাই বারবার মানুষকে উপেক্ষা না করার পরামর্শ দিয়েছেন সুব্রতবাবু। তাঁর কথায়, “প্রশাসনে আছেন কারণ মানুষের সমর্থন ও কর্মীদের ঘাম ঝড়ানো পরিশ্রমে আপনি নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন। কোনও কর্মী বা মানুষকে উপেক্ষা করবেন না। তাহলে নিজেই উপেক্ষিত হয়ে যাবেন।” অসামাজিক কাজে যুক্ত কেউ যাতে দলের ছত্রছায়ায় না আসতে পারে, সে ব্যাপারেও সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন শাসকদলের রাজ্য সভাপতি।
সারদা কেলেঙ্কারি, যাদবপুর, বর্ধমান থেকে মাখড়া-কাণ্ড একের পর এক ঘটনায় তৃণমূল এখন ধারাবাহিক বিড়ম্বনায়। তার উপর ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে বিজেপি। এই পরিস্থিতিতেই তৃণমূল রাজ্য সভাপতির এই হুঁশিয়ারি বলে দলের অন্দরের খবর। দুই মেদিনীপুরের নেতা-কর্মীদের নিয়ে মমতার সাংগঠনিক সভা আয়োজনে যাতে দুর্নীতির ছায়া না পড়ে, সেই সতর্কবার্তাও এ দিন শুনিয়েছেন সুব্রতবাবু। তাঁর কথায়, “অর্থ জোগাড় করবেন। কিন্তু কোনও জায়গায় হাত পাতবেন না যাতে সম্মেলন এক জায়গায় চলে গেল আর আপনাদের কেলেঙ্কারি আর এক জায়গায় চলে এল। খুব সতর্ক করে বলছি এই জায়গায় যাবেন না।”
সারদা প্রসঙ্গে সুব্রতবাবু এ দিন আরও অভিযোগ করেন, একদল সংবাদমাধ্যমের হাত ধরে কিছু রাজনৈতিক দল ঘোলা জলে মাছ ধরার চেষ্টা করছে। দলের স্বচ্ছ ভাবমূর্তির দাবি করে সুব্রতবাবু বলেন, “স্বাধীন ভারতে বহু চিটফান্ড তৈরি হয়েছে। কোটি কোটি মানুষ প্রতারিত হয়েছেন। কিন্তু বাংলার মাটিতে দাঁড়িয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম মানুষ যিনি প্রতারককে গ্রেফতার করেছেন। শ্যামল সেন কমিশন করে ৫ লক্ষ মানুষের অর্থ ফেরত দিয়েছেন।” একই সঙ্গে নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “অভিযোগ মানেই দোষী নয়। তৃণমূল কংগ্রেসের কেউ যদি কুকীর্তিতে জড়িয়ে দলের বিড়ম্বনা তৈরি করে আর সেই কুকীর্তি যদি প্রমাণিত হয়, তাহলে তৃণমূল কংগ্রেস তাঁকে ঘরে রাখবে না।”
এ দিন শৃঙ্খলাবদ্ধ ভাবে কাজ করার বার্তাও দিয়েছেন সুব্রতবাবু। এ দিনের বৈঠকে অবশ্য খড়্গপুরে তৃণমূলের বিবদমান দুই গোষ্ঠীর নেতা দলের শহর সভাপতি দেবাশিস চৌধুরী ও জেলা নেতা তথা প্রাক্তন পুরপ্রধান জওহরলাল পাল উপস্থিত ছিলেন। যদিও দু’জনে বসেছিলেন দুই প্রান্তে। তবে এ দিনও তৃণমূল নেত্রীর সভা কোথায় হবে, সেই সিদ্ধান্ত হয়নি। দেবাশিস গোষ্ঠী শহরের সুভাষপল্লি বিএনআর ময়দান ও জহর গোষ্ঠী ট্রাফিক ময়দানের পক্ষে প্রস্তাব দিয়েছে। এই প্রসঙ্গে সুব্রত বক্সি বলেন, “ওটা প্রশাসন ঠিক করে দেবে।”