এই জমি নিয়েই ঝামেলা। —নিজস্ব চিত্র।
ভোট মিটলেও রাজনৈতিক চাপানউতোর চলছেই। এ বার বাম আমলে পাট্টা প্রাপকদের জমিতে তৃণমূলের পতাকা পুঁতে দেওয়ার অভিযোগ উঠল খড়্গপুরে। খড়্গপুর-১ ব্লকের হরিয়াতারা গ্রাম পঞ্চায়েতের তেলিঘানা গ্রামের ৩৪ জন পাট্টা প্রাপক মঙ্গলবার খড়্গপুরের মহকুমাশাসক ও বিডিওর কাছে এই মর্মে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন। অভিযোগ, লোকসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর থেকেই তাঁদের উপর আক্রমণ চলাচ্ছে তৃণমূলের লোকজন। পাট্টার জমিতে দলের পতাকা লাগিয়ে চাষের কাজে বাধা দেওয়া হচ্ছে।
এ দিন পাট্টা প্রাপকেরা মহকুমাশাসক সঞ্জয় ভট্টাচার্য ও বিডিও কৃষ্ণেন্দু মন্ডলের কাছে অভিযোগ জানিয়ে বিনা বাধায় চাষ করার দাবি জানান। মহকুমাশাসক বলেন, “অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি বিএলআরও-কে দেখতে বলবো। তারপর পদক্ষেপ করবো।” এ প্রসঙ্গে খড়্গপুর-১ ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক (বিএলআরও) সব্যসাচী মণ্ডল বলেন, “কেউ জমির পাট্টা পেয়ে রেকর্ড না-ও করতে পারেন। মহকুমাশাসক জানালে নিশ্চয়ই বিষয়টি খতিয়ে দেখবো।”
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বাম আমলে স্থানীয় কয়েকজন সিপিএম সমর্থক কিছু জমি দখল করে চাষাবাদ করছিলেন। দখল করা প্রায় ৭৩ একর জমি খাস করে ২০০০ সালের ১২ জুলাই গ্রামের ১১৬ জনকে সরকারিভাবে পাট্টা দেওয়া হয়। তবে এখনও পাট্টা প্রাপকদের নামে ওই জমির নথিভুক্তি হয়নি। তবে পাট্টার কাগজপত্র প্রাপকদের কাছে রয়েছে। অভিযোগ, ২০১১ সালে রাজ্যে পালাবদলের পর থেকেই ওই তৃণমূল সমর্থকদের জমি ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিল তৃণমূলের লোকজন। তা অগ্রাহ্য করেই এত দিন ওই জমিতে চাষাবাদ করছিলেন পাট্টা প্রাপকেরা।
এ বার লোকসভা নির্বাচনের প্রচার-পর্বে বামেদের মিছিলে সামিল হয়েছিলেন ওই পাট্টা প্রাপকদের একাংশ। এ নিয়ে এলাকায় ফের উত্তেজনা ছড়ায়। ভোটের গণনার পরদিন থেকেই ওই পাট্টা প্রাপকদের মারধরের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। পাট্টা প্রাপক গুরুচরণ সিংহ, দুলাল সিংহরা বলেন, “ফল ঘোষণার পর থেকেই তৃণমূলের লোকেরা আমাদের মারধর করে। তারপর আমাদের জমিতে কয়েকশো ঝান্ডা লাগিয়ে দিয়েছে। বলছে ওরা জমির মালিক। তাই আমরা চাষ করতে পারবো না।” পাট্টা প্রাপকদের মধ্যে আছেন সিপিএমের লোকাল কমিটির সদস্য নিখিল রণবাজ। তিনি বলেন, “এখন জমি থেকে খড় তোলা, লাঙল দেওয়ার সময়। অথচ জমিতে গেলেই তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা মারছে।” একই অভিযোগ খড়্গপুর-১ ব্লকের সিপিএমের জোনাল সম্পাদক কমল পলমলের। অভিযোগ প্রকারান্তরে মেনে নিয়েছে তৃণমূল। দলের ব্লক সভাপতি শক্তি মণ্ডলের দাবি, এক সময় ওই জমি সিপিএম জোর করে দখল করেছিল। তা ফিরে পেতে জমির মালিকেরা তৃণমূলের ঝান্ডা নিয়ে লাগিয়ে দিয়েছেন। বিষয়টি তাঁরা সমর্থন করেন না বলেও জানান শক্তিবাবু। তাঁর কথায়, “ঝান্ডা লাগানো আমরা সমর্থন করি না। তাই ওই জমির মালিকদের আইনগত লড়াই করতে বলবো।”