ঝাড়গ্রামে বামেদের দেওয়াল লিখন। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।
নেতাইয়ের ৯ বনাম জঙ্গলমহলে সিপিএমের ২৯২! সঙ্গে স্লোগান, ‘ওরা ‘হাত’ ধরেছিল, আমরা ধরিনি’। তাই জঙ্গলমহলে শান্তি বজায় রয়েছে। দলীয় সূত্রে খবর, আসন্ন লোকসভা ভোটের প্রচারে গ্রামে-গঞ্জে এটাই সিপিএমের ‘ক্যাচলাইন’।
২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি নেতাই গ্রামে সিপিএম কর্মী রথীন দণ্ডপাটের বাড়ির ছাদ থেকে গুলি চালনার ঘটনায় চার মহিলা-সহ ৯ গ্রামবাসীর মৃত্যুর ঘটনায় তোলপাড় হয়েছিল রাজ্য রাজনীতি। সিপিএমের বিরুদ্ধে সশস্ত্র শিবির চালানোর হাতে গরম ‘প্রমাণ’ নিয়ে বিধানসভা নির্বাচনে অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছিল তৃণমূল। গত বছর পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূলের প্রচারের সিংহভাগ জুড়ে ছিল নেতাই-প্রসঙ্গ। সেই ভোটে জঙ্গলমহলে কার্যত ধুয়ে মুছে যায় সিপিএম। এমনকী টানা তিন দশকের বাম ঘাঁটি ঝাড়গ্রাম পুরসভাটিও গত নভেম্বরে নিরঙ্কুশ ভাবে দখল করে নেয় তৃণমূল।
তাই, লোকসভা নির্বাচনে জঙ্গলমহলে সিপিএমকে কার্যত অগ্নিপরীক্ষা দিতে হচ্ছে। সিপিএমও তাই এ বার পাল্টা প্রচারে জঙ্গলমহলের পুরনো সন্ত্রাস পর্বে নিহত নেতা-কর্মীদের সংখ্যাকে হাতিয়ার করছে। সিপিএম সূত্রে খবর, জঙ্গলমহলে মাওবাদী-জনগণের কমিটির সন্ত্রাসপর্বে সিপিএমের ২৬২ জন নেতা-কর্মী খুন হন। অপহৃত ৩০ জন নেতা-কর্মী। সব মিলিয়ে সংখ্যাটা ২৯২। তবে বিচারাধীন নেতাই-কাণ্ডের সম্পর্কে প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে চাইছেন না সিপিএমের নেতা-কর্মীরা। প্রতিপক্ষের নেতাই অস্ত্রকে ভোঁতা করতে রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে জঙ্গলমহলে নিহত ও অপহৃত মিলিয়ে ২৯২ জনের অঙ্ককে সামনে আনা হচ্ছে।
আদিবাসী সংরক্ষিত ঝাড়গ্রাম লোকসভা কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী তথা বিদায়ী সাংসদ পুলিনবিহারী বাস্কে নিজেও বলছেন, “আমাদের কয়েকশো কর্মী-সমর্থকের রক্ত ঝরিয়ে জঙ্গলমহলকে সন্ত্রাসের লীলাভূমি বানিয়ে তৃণমূল রাজ্যের ক্ষমতা দখল করেছে। ওরা বিরোধীপক্ষে থাকাকালীন মাওবাদীদের হাত ধরেছিল। কিন্তু আমরা দায়িত্বশীল বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করছি। সেই জন্যই জঙ্গলমহল শান্ত রয়েছে।” সিপিএমের একাধিক নেতা-কর্মীদের দাবি, বেলপাহাড়ি, লালগড় ও নয়াগ্রামের মতো এলাকাগুলিতে সাংগঠনিক ভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা ফলপ্রসূ হচ্ছে। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে ঝাড়গ্রামের লোধাশুলির মতো বেশ কিছু পঞ্চায়েতের আসনে সিপিএমের প্রতীকে দলীয় প্রার্থী দেওয়া যায় নি। এখন ওই সব অঞ্চলে সিপিএমের দলীয় কার্যালয় খোলা সম্ভব হয়েছে। প্রকাশ্যে বড় ধরনের প্রচারে না-গিয়ে গ্রামে বাড়ি-বাড়ি প্রচার, পাড়া বৈঠক, বুথস্তরের বৈঠকে হাজির থাকছেন প্রার্থী পুলিনবাবু স্বয়ং।
বর্তমান রাজ্য সরকারের উন্নয়ন ও জঙ্গলমহলে শান্তি ফেরানোর দাবির বিপক্ষে সিপিএমের পাল্টা দাবি, বাম সরকার ক্ষমতায় থাকার সময়, যৌথ বাহিনী প্রত্যাহার ও বিচারাধীন বন্দি মুক্তির দাবি তুলেছিল তৃণমূল। বিরোধী দলের ওই অবস্থান ও অসহযোগিতার কারণে মাওবাদীদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছিল বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সরকার। কিন্তু এখন বিরোধী আসনে থাকা সিপিএম মাওবাদীদের প্রশ্রয় দেয় নি। জঙ্গলমহলে শান্তি ফেরানোর ক্ষেত্রে সিপিএমেরও ভূমিকা রয়েছে, দাবি প্রচারে যাওয়া কর্মীদের।
পুলিনবাবুর প্রচার কমিটির অন্যতম আহ্বায়ক সিপিএমের ঝাড়গ্রাম শহর জোনাল কমিটির সম্পাদক প্রদীপ সরকারের কথায়, “অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হলে জঙ্গলমহলে ফের পরিবর্তন হবে বলে আমরা আশাবাদী। প্রচারে গিয়ে টের পাচ্ছি আমাদের প্রতি মানুষের ‘মৌন সমর্থন’ বাড়ছে।” তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সাধারণ সম্পাদক দুর্গেশ মল্লদেব বলেন, “জঙ্গলমহলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে শান্তি ফিরেছে। ওরাই দিনে হার্মাদ আর রাতে মাওবাদী।”