ভোটের আগে জঙ্গলমহলে জঙ্গলের রাস্তায় পুলিশের গাড়ির দিকে চালানো হল গুলি। গাড়ি থেকে নেমে একে-৪৭ থেকে পাল্টা গুলি চালালেন এসডিপিও। এক সময় মাওবাদী উপদ্রুত পশ্চিম মেদিনীপুরের জামবনি ও বিনপুরের সংযোগস্থলে দিঘলপাহাড়ির জঙ্গলে বুধবার ভোরে ওই ঘটনার পরে হামলাকারীদের পাওয়া যায়নি। তবে ঘটনাস্থল থেকে মিলেছে একে ৪৭-এর গুলির খোল, ‘ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস’ (আইইডি)-সহ কিছু বন্দুক ও গুলি। এলাকা ঘুরে এসে ঝাড়গ্রামের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষের মন্তব্য, “ঘটনাস্থলটি ঝাড়খণ্ড সীমান্তের খুব কাছাকাছি। কারা এই ঘটনায় যুক্ত তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।”
তবে রাজ্যের এক গোয়েন্দা-কর্তা জানিয়েছেন, এই হামলার পিছনে মাওবাদী যোগাযোগের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না। তাঁর কথায়, “মাওবাদী নেতা জয়ন্তর স্কোয়াড ওই এলাকায় ঘোরাফেরা করছিল। প্রাথমিক ভাবে তারা এই ঘটনার পিছনে রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। কিন্তু বিভিন্ন দিক খুঁটিয়ে দেখার আগে পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। তবে ভোটের আগে এ ধরনের ঘটনা উদ্বেগ বাড়ায়।”
জেলার জঙ্গলমহলে বিভিন্ন সময় টহল দেয় পুলিশ। পুলিশ সুপারের দাবি, সেই কাজেই এ দিন ভোর সাড়ে ৩ টে নাগাদ এসডিপিও (ঝাড়গ্রাম) বিবেক বর্মা বেলপাহাড়ির নারাণপুরের দিক থেকে জামবনির ধড়সার দিকে যাচ্ছিলেন। গাড়িতে বিবেকবাবু, চার নিরাপত্তারক্ষী এবং চালক ছিলেন। নারাণপুর-ধড়সা পিচ রাস্তার মাঝে দিঘলপাহাড়ির জঙ্গল-রাস্তায় গাড়ির আরোহীরা জঙ্গলের ডান দিকে খুব কাছ থেকে পরপর আট বার গুলির আওয়াজ পান। তবে কোনও গুলিই গাড়িতে বা আরোহীদের লাগেনি।
বিবেক বর্মা এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে চাননি। তবে পুলিশ সুপারের বক্তব্য, “পুলিশই আক্রমণের লক্ষ্য বুঝে এসডিপিও গাড়ি থামাতে বলেন। ‘পজিশন’ নিয়ে পাল্টা কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়েন। ওই এলাকায় সব সময় মোবাইলের টাওয়ার পাওয়া যায় না। তাই ঘটনাস্থল থেকে কিছুটা এগিয়ে গিয়ে এসডিপিও ফোনে বিষয়টি আমাকে জানান। তার পরেই জামবনি, বিনপুর থানার পুলিশ এবং জামবনির ওড়ো ক্যাম্প থেকে সিআরপি ওই এলাকায় গিয়ে তল্লাশি চালায়। তাতে একটি আইইডি ও বেশ কিছু অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার হয়।”
পুলিশ সূত্রের খবর, যে পথ দিয়ে এসডিপিও-র গাড়ি যাচ্ছিল, তাতে ঘটনাস্থল থেকে সামান্য এগিয়ে একটি কালভার্ট পড়ে। তারই তলা থেকে নীল রঙের ব্যাগে রাখা আইইডি-টি পাওয়া যায়। একটি করে নাইন এমএম পিস্তল, একনলা দিশি বন্দুক, থ্রি-নট-থ্রি রাইফেল, নাইন এমএমের ম্যাগাজিন, দু’টি ডিটোনেটর, বিভিন্ন ধরনের ১৫টি তাজা কার্তুজ উদ্ধার হয়। জঙ্গল থেকে দু’টি একে-৪৭-এর গুলির খোলও মিলেছে। এ দিন দুপুরে স্পেশ্যাল আইজি (মেদিনীপুর রেঞ্জ) অজয় নন্দও ঘটনাস্থলে যান।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, হামলাকারীরা কালভার্টের তলায় আইইডি বসিয়ে নাশকতার ছক কষেছিল। কিন্তু ডিটোনেটর লাগানোর আগেই এসডিপিও-র গাড়িটি চলে আসে। পুলিশের গাড়ির দিকে গুলি ছুড়ে পালানোর আগে তাড়াহুড়োয় হামলাকারীরা কিছু অস্ত্র ফেলে যায়।
বিনপুরের দিঘলপাহাড়ির জঙ্গল থেকে সহজেই তিন কিলোমিটার দূরে ঝাড়খণ্ডের চাকুলিয়ায় যাওয়া যায়। মালাবতীর জঙ্গল হয়ে চলে আসা যায় জামবনির বুড়িশোলের জঙ্গলে, যেখানে ২০১১-র নভেম্বরে যৌথবাহিনীর গুলিতে নিহত হন কিষেনজি।