পশ্চিম মেদিনীপুরের ভোটার সংখ্যা বেড়ে হল ৪১ লক্ষ ৫৩ হাজার ৯৩১। এর মধ্যে তরুণ প্রজন্ম, বিশেষ করে ১৮ থেকে ২৯ বছর বয়সী ভোটারের সংখ্যাই ১১ লক্ষ ৮৮ হাজার ৬৪৪। সোমবারই প্রকাশিত হয়েছে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা।
জেলা প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, গেল বছর জেলায় ভোটার সংখ্যা ছিল ৪০ লক্ষ ৮২ হাজার ৮৬৯। এ বছরে তা বেড়ে হল ৪১ লক্ষ ৫৩ হাজার ৯৩১। এঁদের মধ্যে পুরুষ ২১ লক্ষ ৩৩ হাজার ৭৯৭, মহিলা ২০ লক্ষ ২০ হাজার ১২৪ অন্যান্য ১০। সব মিলিয়ে জেলায় ভোটার বেড়েছে ৭০১ হাজার ৬২। তরুণ প্রজন্মের ভোটারদের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তুলতে নানা কর্মসূচি হয়ে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন দফতরের জেলা আধিকারিক বিশ্বরঞ্জন মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “আমাদের সকলেরই উচিত, গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করা। ভোট দেওয়া।”
প্রতি বছরই ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ হয়। গোড়ায় খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশিত হয়। তারপর নতুন নাম তোলার আবেদন জমা পড়ে। খসড়া তালিকা নিয়ে কোনও অভিযোগ থাকলে তা-ও জমা পড়ে। পরে সব দিক খতিয়ে দেখে জানুয়ারিতে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশিত হয়। ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ শুরু হয় সাধারণত সেপ্টেম্বর মাসে।
পশ্চিম মেদিনীপুরের একটা বড় এলাকা জুড়ে রয়েছে জঙ্গলমহল। একটা সময়ে এই এলাকার একাংশ মানুষ পুলিশ প্রশাসনের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলেন। পুলিশ বয়কটও শুরু হয়েছিল। স্থানীয় মানুষের সঙ্গে পুলিশ প্রশাসনের একটা দূরত্ব তৈরি হয়েছিল। স্বাভাবিক ভাবেই সেই সময় কয়েক’টি এলাকায় ভোটার তালিকায় নাম তোলার কাজ ব্যাহত হয়। তবে, এখন সেই সব অতীত। রাজ্যে পালাবদলের পর জঙ্গলমহল এলাকার মানুষকে কাছে পেতে নানা পদক্ষেপও শুরু করে পুলিশ প্রশাসন। এর ফলে, উভয়ের মধ্যে সম্পর্কেরও উন্নতি হয়। প্রতি বছর ২৫ জানুয়ারি দিনটি জাতীয় ভোটার দিবস হিসেবে পালন করা হয়। দেশ জুড়েই দিনটি উদ্যাপন করা হয়। সেই মতো এ বারও দিনটি উদ্যাপন করা হবে। পশ্চিম মেদিনীপুরেও দিনটি পালন হবে। ওই দিনই নতুন ভোটারদের হাতে সচিত্র পরিচয়পত্র তুলে দেওয়া হবে। জানা গিয়েছে, জেলার ভোটার তালিকা থেকে এ বার প্রায় ৪৮ হাজার নাম বাদ গিয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১৬ হাজারই ‘ভুয়ো’ ভোটার। এক ব্যক্তির নাম ভোটার তালিকার একাধিক জায়গায় থাকলেই তাঁকে ‘ভুয়ো’ ভোটার হিসেবে চিহ্ণিত করা হয়।
এ বার ভোটার তালিকা ত্রুটিমুক্ত করতে নির্বাচন কমিশন বিশেষ উদ্যোগী হয়েছিল। কমিশন ‘ডুপ্লিকেট’ ভোটারের তালিকা তৈরি করে জেলা প্রশাসনের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছিল। সেই তালিকা ধরে বিএলওরা (বুথ লেভেল অফিসার) বাড়ি বাড়ি যান। সব দিক খতিয়ে দেখেন। তারপর জেলায় রিপোর্ট আসে। ওই রিপোর্ট খতিয়ে দেখেই প্রায় ১৬ হাজার ‘ভুয়ো’ ভোটারের নাম বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আগের তালিকা থেকে বহু মৃত ভোটারের নামও বাদ গিয়েছে। অনেকে আবার এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে গিয়েছেন। অনেকে নিজে থেকেই নাম বাদ দেওয়ার আবেদন জানিয়েছিলেন। ফলে, তাঁদের নামও বাদ গিয়েছে। এই দুই ক্ষেত্রে সংখ্যাটা প্রায় ৩২ হাজার। জেলা প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, এ বার প্রকাশিত হওয়া চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় তরুণ প্রজন্ম, বিশেষ করে ১৮ থেকে ২৯ বছর বয়সী ভোটারের সংখ্যাই সব থেকে বেশি, ১১ লক্ষ ৮৮ হাজার ৬৪৪।
৩০-৩৯ বছর বয়সী ভোটারের সংখ্যা ৮ লক্ষ ৭৯ হাজার ৫১৯। ৪০-৪৯ বছর বয়সী ভোটারের সংখ্যা ৯ লক্ষ ২ হাজার ১৭। ৫০-৫৯ বছর বয়সী ভোটারের সংখ্যা ৬ লক্ষ ১৫ হাজার ৮৯৩। ৬০-৬৯ বছর বয়সী ভোটারের সংখ্যা ৩ লক্ষ ৪১ হাজার ৪৪৩। ৭০-৭৯ বছর বয়সী ভোটারের সংখ্যা ১ লক্ষ ৬৭ হাজার ১৯। এবং ৮০ বছর এবং এর বেশি বছর বয়সী ভোটারের সংখ্যা ৫৯ হাজার ৩৯৬। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, “আমাদের একটাই লক্ষ্য ছিল, পুরোমাত্রায় সঠিক ভোটার তালিকা তৈরি করা। সেই কাজই হয়েছে। ভোটার তালিকা ত্রুটিমুক্ত করার সব রকম চেষ্টাই চলেছে।”