পৌষ সংক্রান্তির আগের দিন বুধবার চলছে ঘুড়ির বিকিকিনি।—নিজস্ব চিত্র।
লড়াইটা এতদিন ছিল লাল- সবুজে। এ বার ঘুড়ির বাজারেও ভাগ বসাল গেরুয়া! মেদিনীপুরের বাজারে এখন দেদার বিকোচ্ছে নরেন্দ্র মোদীর ছবি দেওয়া ঘুড়ি। আজ, বৃহস্পতিবার পৌষ সংক্রান্তি। পৌষ সংক্রান্তির পরের দিন অর্থাত্ কাল, শুক্রবার বড়াম পুজো। বড়াম পুজোর দিনই শহরে ঘুড়ির উত্সব। শহরে এই সময় ঘুড়ি ওড়ানোর চল রয়েছে। বিশেষ করে শহরের পুরনো পাড়াগুলোয়। ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয় ঘুড়ি কাটাকাটির খেলা।
অন্য বছরেও এই সময় বিকোয় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতীক দেওয়া ঘুড়ি। তবে এ বার সবাইকে টেক্কা দিয়েছে মোদী ঘুড়ি। শহরের ঘুড়ি ব্যবসায়ী মন্টি চন্দ বলেন, “এ বার ঘুড়ির বাজার ভালই। দেদার বিকোচ্ছে মোদী- ঘুড়িও।” তাঁর কথায়, “এক- একজনের এক- এক রকম চাহিদা। তাই আমাদের সব রকমের ঘুড়িই রাখতে হয়েছে।” অন্য এক ঘুড়ি ব্যবসায়ীর কথায়, “সবই হাওয়ার উপর নির্ভর করে! পরিবর্তনের হাওয়ায় গেল বার, তার আগের বার তৃণমূলের প্রতীক সাঁটানো ঘুড়িই ভাল কেটেছিল! এ বার সেখানে মোদী- ঘুড়িই হিট!”
এ বার ঘুড়িতে মোদী। পৌষ সংক্রান্তির আগের দিন বুধবার
মোদী-ঘুড়ি কেনার ভিড় মেদিনীপুরে। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।
আগে পৌষ-সংক্রান্তির দশ-বারো দিন আগে থেকেই শহরের ঘুড়ির দোকানগুলোয় ছেলেদের ভিড় জমত। তবে এখন ঘুড়ি ওড়ানো এক দিনের উত্সবে পরিণত হয়েছে। শহরের এক ঘুড়ি ব্যবসায়ীর কথায়, “আসলে এখন ছেলেদের হাতে সময় কম। ছোট ছোট ছেলেদের উপর প্রত্যাশার চাপ যেন বেড়েই চলেছে। বিকেলে মাঠে খেলতে যাওয়ারই সময় পায় না তো ঘুড়ি ওড়াবে কখন?” তাঁর কথায়, “পাঁচ-ছ’বছর আগে এই সময়ও তেমন ঘুড়ি বিক্রি হত না। এ বার অবশ্য বাজার খুব একটা মন্দা নেই। হোক না একটা দিনের উত্সব। ঘুড়ি বিক্রি বাড়ছে।” এক ঘুড়ি বিক্রেতার কথায়, “কেউ দশটা ঘুড়ি কিনলে তার মধ্যে চার-পাঁচটাই মোদী ঘুড়ি চাইছেন।”
বছর দেড়েক আগেও ভোটারদের সচেতন করতে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। সেখানে জুড়ে ছিল ঘুড়ি ওড়ানোও। ঘুড়িতে ভোটারদের কর্তব্য সম্পর্কে কিছু লেখা থাকবে। যেমন, ‘চলো, নাম তুলি, দেশ গড়ি’, ‘আমজনতার শ্রেষ্ঠ অধিকার, সর্বজনীন ভোটাধিকার’ প্রভৃতি। এ বার মোদী- ঘুড়িই হিট তা মানছে বিজেপি। দলের শহর সভাপতি অরূপ দাস বলেন, “এটা খুব স্বাভাবিক। নরেন্দ্র মোদীকে নিয়ে সর্বত্রই উন্মাদনা রয়েছে। বিশেষ করে যুব সমাজের মধ্যে। মানুষই ধরেই নিয়েছেন এই মুহূর্তে প্রকৃত বিরোধী রাজনৈতিক দল বিজেপি।” তৃণমূলের শহর সভাপতি আশিস চক্রবর্তী অবশ্য বলেন, “ব্যাপারটাকে এ ভাবে দেখলে ভুল হবে। আনন্দ লাভের জন্যই মানুষ ঘুড়ি ওড়ান। শুধু কী মোদী- ঘুড়ি, তৃণমূলের প্রতীক আঁকা ঘুড়িও তো ভাল বিক্রি হচ্ছে বলে শুনেছি।”