লোধাদের গৃহনির্মাণ প্রকল্পের প্রাপক বাছাই ঘিরে বিতর্ক দানা বাঁধল।
শুক্রবার পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদ সবং ব্লকের ৯টি লোধা পরিবারের হাতে প্রকল্পের অর্থ তুলে দেওয়ার চিঠি দিয়েছে ব্লক প্রশাসনকে। সেই সঙ্গে লোধাদের গৃহনির্মাণ প্রকল্পের নামও পাঠিয়েছে জেলা পরিষদ। তবে সবং পঞ্চায়েত সমিতির অভিযোগ প্রাপকদের নাম বাছাই পঞ্চায়েত সমিতিকে অন্ধকারে রেখেই করা হয়েছে। তবে জেলা পরিষদের দাবি, অনগ্রসর এলাকা উন্নয়ন তহবিলের (বিআরজিএফ) অর্থে হওয়া এই প্রকল্পের নাম বাছাইয়ের এক্তিয়ার তাদের হাতেই রয়েছে।
প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ব্যবস্থায় অধিকার, ইন্দিরা আবাস, গীতাঞ্জলি, লোধাদের গৃহনির্মাণ প্রকল্পের অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রাপকদের নামের তালিকা পাঠানো হয় গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির মাধ্যমে। গত সেপ্টেম্বরে খড়্গপুর-১ ব্লকের চারটি লোধা পরিবার ও কেশিয়াড়ি ব্লকের দু’টি পরিবার লোধাদের গৃহনির্মাণ প্রকল্পের টাকা পেয়েছে। ওই দু’টি ক্ষেত্রেই পঞ্চায়েত সমিতির মাধ্যমে নামের তালিকা পাঠানো হয়েছিল বলে খবর। অবশ্য অনেক ক্ষেত্রেই নিয়ম ভেঙে নানা প্রকল্পে হস্তক্ষেপ করে জেলা পরিষদ। কিন্তু সেক্ষেত্রেও প্রাপকদের নাম বাছাইয়ে জেলা পরিষদ সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত সমিতির সঙ্গে আলোচনা করেই প্রাপক তালিকা তৈরি করে।
সম্প্রতি সেই নিয়ম না মানার অভিযোগ উঠেছে পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা পরিষদের বিরুদ্ধে। গত ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে সবংই পশ্চিম মেদিনীপুরের একমাত্র জেলা, যেখানে ক্ষমতায় রয়েছে কংগ্রেস। কিন্তু জেলা পরিষদ থেকে বাকি পঞ্চায়েত সমিতি এখন সর্বত্র ক্ষমতায় রয়েছে তৃণমূল। কংগ্রেসের অভিযোগ, মাস দু’য়েক আগে সবংয়ের পঞ্চায়েত সমিতি ও বিধায়ককে অন্ধকারে রেখেই অধিকার প্রকল্পের প্রাপকদের নাম পাঠায় জেলা পরিষদ।
জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, সবং ব্লকের খাজুরি, বেনেদিঘি, বলরামপুর, সার্তা ও দভোগ এলাকায় লোধা পরিবার রয়েছে। এর মধ্যে গীতা কোটাল, অক্ষয় ভক্তা, স্বপন ভক্তা, লালু মল্লিক, নির্মল মল্লিক, গুরুপদ আড়ি, চিত্ত নায়েক ও বাদল আড়িকে এই গৃহনিমাণ প্রকল্পের টাকা দেওয়ার জন্য সবংয়ের বিডিওকে জানায় জেলা পরিষদ। এক্ষেত্রে প্রতিটি পরিবারের জন্য ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা করে মোট ১১ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা বরাদ্দ হয়েছে। সবংয়ের বিডিও বিকাশ মজুমদার বলেন, “জেলা পরিষদ থেকে গৃহনির্মাণের প্রাপকদের নামের তালিকা ও টাকা বিলির নির্দেশ এসেছে। আমি সেটি পঞ্চায়েত সমিতির কাছে হস্তান্তর করে দিয়েছি।” আর এই বিষয়ে জেলা পরিষদ কর্মাধ্যক্ষ অমূল্য মাইতির বক্তব্য, “লোধাদের গৃহনির্মাণের অর্থ জেলা পরিষদের কাছে থাকা বিআরজিএফ অর্থ থেকে দেওয়া হয়েছে। তাই ওই ৯টি লোধা পরিবারের নাম জেলা পরিষদই বাছাই করে দিয়েছে। মানুষ উন্নয়নের টাকা পেয়েছে সেটাই বড় কথা।”
বিরোধীদের দাবি, এক্ষেত্রে তৃণমূল নেতাদের ঠিক করে দেওয়া তালিকা মেনেই কাজ করছে জেলা পরিষদ। সবং পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কংগ্রেসের অমল পণ্ডা বলেন, “ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে পঞ্চায়েত সমিতির মাধ্যমে প্রকল্পের প্রাপকদের নামের তালিকা পাঠানোর নিয়ম। লোধাদের গৃহনির্মাণের প্রাপকদের নাম নিয়ে আমরা অন্ধকারে।” সুর চড়িয়ে সবংয়ের কংগ্রেসের বিধায়ক মানস ভুঁইয়ার অভিযোগ, “পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদ গণতন্ত্র বিরোধী কাজ করছে। ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েতের ক্ষমতা লোপ করে ক্ষমতা নিজেদের হাতে কুক্ষিগত করে রাখছে জেলা পরিষদ।” অভিযোগ উড়িয়ে জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তরা সিংহ বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী যেভাবে লোধাদের উন্নয়নে এগিয়ে এসেছেন, তা মাথায় রেখেই আমরা বিভিন্ন ব্লকে লোধাদের গৃহনির্মাণ প্রকল্পে টাকা দিচ্ছি। সবংয়েও ৯টি লোধা পরিবারকে দেওয়া হয়েছে। অঞ্চল থেকে আসা নামের ভিত্তিতেই প্রাপকদের বাছাই করা হয়েছে।”