মেদিনীপুরে হালকা মেজাজে জেলা সভাধিপতির সঙ্গে মন্ত্রী। —নিজস্ব চিত্র।
লোকসভা ভোট মিটে গিয়েছে। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যে আর বড় কোনও ভোট নেই। আাগামী দু’বছরে তাই গ্রামোন্নয়ন সংক্রান্ত যাবতীয় প্রকল্পে গতি আনতে তৎপর হলো রাজ্য সরকার। বৃহস্পতিবার চার জেলার (দুই মেদিনীপুর, পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া) প্রশাসনিক আধিকারিকদের মেদিনীপুরে এক বৈঠক করলেন পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, “কাজ হচ্ছে। তবে, আরও ভাল কাজ করতে হবে। গ্রামীণ উন্নয়নের সঙ্গে কোনও আপস করতে পারবো না।” মন্ত্রী জানান, কাজের ক্ষেত্রে অর্থের কিছু সমস্যা আছে। বিভিন্ন প্রকল্পে কেন্দ্রের কাছে রাজ্যের ৭-৮ কোটি টাকা পাওনা আছে।
এ দিনের বৈঠকে মন্ত্রী ছাড়াও ছিলেন পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের প্রধান সচিব সৌরভ দাস, পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা, পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক অন্তরা আচার্য, বাঁকুড়ার জেলাশাসক বিজয় ভারতী, পুরুলিয়ার জেলাশাসক তন্ময় চক্রবর্তী প্রমুখ। একশো দিনের কাজ, প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা, নির্মল গ্রাম-সহ বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হয়। উপস্থিত আধিকারিকেরা কাজের অগ্রগতি নিয়ে নিজেদের মতামত জানান। মন্ত্রী এবং সচিব প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেন। প্রশাসন সূত্রে খবর, পূর্ব মেদিনীপুরের প্রস্তাবিত একটি বৃহৎ জলপ্রকল্প নিয়ে আলোচনা হয়েছে বৈঠকে। কোলাঘাটে ৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই নলবাহী জলপ্রকল্প হওয়ার কথা। ইতিমধ্যে প্রকল্পের খসড়া তৈরি হয়েছে। স্থির হয়েছে, রূপনারায়ণ নদের জল জলাধারে ধরে রেখে পাইপ লাইনের মাধ্যমে আশপাশের এলাকায় সরবরাহ করা হবে। সুব্রতবাবু জানান, যত দ্রুত সম্ভব প্রকল্পের কাজ শুরু চেষ্টা চলছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দিয়ে প্রকল্পের সূচনার চেষ্টা চলছে।
একশো দিনের প্রকল্প নিয়ে নানা সমস্যার কথা উঠে আসে বৈঠকে। বর্ষায় কাজ এগোতে সমস্যা হবে। এমনিতেই এই প্রকল্পের কাজ এ বার আশানুরূপ হয়নি। পশ্চিম মেদিনীপুরের ক্ষেত্রে চলতি আর্থিক বছরে ৩ কোটি শ্রমদিবস তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু তা পূরণ হবে কি না সংশয়। পরিস্থিতি দেখে সুব্রতবাবু বলেন, “লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতেই হবে। বর্ষাকালে কাজ খুঁজতে হবে। একটু ধৈর্য ধরতে হবে।” একশো দিনের কাজে পশ্চিম মেদিনীপুরে দ্রুত বায়োমেট্রিক পদ্ধতি চালুরও নির্দেশ দেন মন্ত্রী। এ ক্ষেত্রে কাজ কতদূর এগিয়েছে খোঁজ নেন। বৈঠকে উপস্থিত জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তরা সিংহ বলেন, “১০ দিনের মধ্যে মেদিনীপুর সদর ব্লকে বায়োমেট্রিক পদ্ধতি চালু হবে।”
উল্লেখ্য, কেন্দ্রের নির্দেশে পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে রাজ্যের মধ্যে এই জেলাতেই প্রথম চালু হবে একশো দিনের প্রকল্পে বায়োমেট্রিক পদ্ধতি। কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার প্রতিনিধিরা জেলায় এসে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে গিয়েছেন। প্রশাসন সূত্রে খবর, মেদিনীপুর সদর ব্লকের জন্য প্রথম পর্যায়ে ৫০০টি ‘হ্যান্ড হেল্ড ডিভাইস’ আসার কথা। এই যন্ত্রে শ্রমিকদের আঙুলের ছাপ নেওয়া হবে। এখন মাস্টার রোলে শ্রমিকদের হাজিরা নেওয়া হয়। পরে তা গ্রাম পঞ্চায়েতে আসে। সব মিলিয়ে দেখে অর্থ বরাদ্দ করা হয়। ফলে, কাজ শেষের পর মজুরি পেতে পেতে ২০-২৫ দিন পেরিয়ে যায়। বায়োমেট্রিক পদ্ধতি চালু হলে মূলত দু’টি সুবিধে হবে। ১) প্রকল্পে স্বচ্ছতা আসবে। একজনের মজুরি অন্যজনের নেওয়ার সম্ভাবনাই থাকবে না। ২) কাজ শেষে মজুরির জন্য দীর্ঘদিন অপেক্ষাও করতে হবে না। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সরাসরি শ্রমিকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে মজুরির অর্থ চলে যাবে। এ জন্য জেলায় ‘ইলেকট্রনিক ফান্ড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ (ইএমএস) চালুর চেষ্টা চলছে। যে সব ব্যাঙ্কে ‘কোর ব্যাঙ্কিং সিস্টেম’ (সিবিএস) রয়েছে, সেখানে শ্রমিকদের অ্যাকাউন্ট খোলানোর বা স্থানান্তরের চেষ্টা চলছে। এমনিতেই এখন ই-মাস্টার রোলে কাজ হয়। অর্থাৎ, কোন কাজ কে কে করবেন, কাজটি শেষ হতে কত দিন লাগবে, তা আগে থেকে জানা যায়। বৈঠক শেষে সুব্রতবাবুও বলেন, “বায়োমেট্রিক চালু হলে কাজে স্বচ্ছতা আসবে।” রাজ্যের মধ্যে পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে পশ্চিম মেদিনীপুরেই এই পদ্ধতি চালু হচ্ছে।
রাস্তাঘাটের হাল নিয়েও এ দিন আলোচনা হয়। এ নিয়ে মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ শৈবাল গিরি। জেলায় প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার কাজ সে ভাবে এগোচ্ছে না। প্রকল্প মঞ্জুর হয়েছে, দরপত্র আহ্বান করা হচ্ছে। অথচ, ঠিকাদাররা সাড়া দিচ্ছেন না। সুব্রতবাবু সমাধানের আশ্বাস দেন। প্রশাসন সূত্রে খবর, ঠিকাদারেরা সাড়া না দিলে রাজ্যের একাধিক সংস্থাকে দিয়ে কাজ করানো হবে। চলতি আর্থিক বছরে আরআইডিএফ প্রকল্পে জেলা ২৪ কোটি টাকা পাবে বলে প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বরাদ্দ বাড়িয়ে ৫০ কোটি টাকা করার জন্য রাজ্যের কাছে আর্জি জানানো হয়েছে।
এ দিন কমবেশি ১৭টি প্রকল্প নিয়ে বৈঠকে পর্যালোচনা হয়। দেখা যায়, কিছু ক্ষেত্রে কাজের খারাপ পরিস্থিতির জন্য রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক দুই সমস্যাই দায়ী। মন্ত্রী অবশ্য বারবার বুঝিয়ে দিয়েছেন, এ বার কাজের গতি আরও বাড়াতে হবে।