বাম-কংগ্রেস কাউন্সিলরদের দলবদলের জেরে একের পর এক পুরসভা যখন তৃণমূলের দখলে আসছিল, তখনই উলটপুরাণ হয় রেলশহর খড়্গপুরে। তৃণমূলের দখলে থাকা খড়্গপুর পুরসভায় অনাস্থা এনে পুরবোর্ডের ক্ষমতায় আসে কংগ্রেস। এ বার সেই কংগ্রেসের হাত থেকে পুরবোর্ডের ক্ষমতা ফিরে পেতে তৎপর হয়েছে তৃণমূল। দলীয় সূত্রে খবর, রেলশহরের কাউন্সিলর তৈমুর আলি খান নিজের অনুগামীদের নিয়ে তৃণমূলে যোগ দিতে চলেছেন। তৈমুর গত পুরভোটে সিপিআইয়ের প্রতীকে ভোটে জেতেন। পরে দলবিরোধী কাজের অভিযোগে তাঁকে বহিষ্কার করে সিপিআই। ওই সূত্রের খবর, শুক্রবার মেদিনীপুরে এসে তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়, জেলা কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোৎ ঘোষের সঙ্গে দেখা করেন তৈমুর। তৃণমূলে যোগদানের ইচ্ছেপ্রকাশ করেন। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী সপ্তাহে নিজের এলাকায় তৃণমূল নেতৃত্বকে নিয়ে এক সভাও করতে পারেন তিনি।
তৈমুর দলে যোগ দিলে রেলশহরে তৃণমূলের কাউন্সিলর সংখ্যা বেড়ে হবে ১৫। অন্য দিকে, কংগ্রেসের কাউন্সিলর সংখ্যা ১৪। কংগ্রেস অবশ্য অন্য দুই কাউন্সিলরের সমর্থনে পুরবোর্ডের ক্ষমতায় রয়েছে। তাহলে কী আগামী দিনে কংগ্রেস পরিচালিত পুরবোর্ডের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনবে তৃণমূল? জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য এ নিয়ে এখনই মুখ খুলতে নারাজ। দলের জেলা কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোৎ ঘোষ বলেন, “এ নিয়ে আমরা কিছু ভাবছি না!” অবশ্য রেলশহরের ওই কাউন্সিলর যে দলে যোগদানের ইচ্ছেপ্রকাশ করেছেন, তা মানছেন তিনি। প্রদ্যোৎবাবুর কথায়, “উনি (তৈমুর) আমাদের দলে যোগ দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। আমরা বিষয়টি রাজ্য নেতৃত্ব জানিয়েছি।” রেলশহরের প্রাক্তন পুরপ্রধান তথা তৃণমূল কাউন্সিলর জহর পালও বলেন, “অনাস্থা নিয়ে আমরা কিছু ভাবছি না!”
দলীয় সূত্রে খবর, জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে দেখা করার পর তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে দেখা করতে এ দিন বিকেলেই কলকাতায় পৌঁছন তৈমুর। তৃণমূলে যোগদানের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আলোচনা চলছে। যখন জানানোর জানাবো।” রেলশহরে জল্পনা, শুধু তৈমুরই নন, কংগ্রেস- শিবিরেও না কি ভাঙন ধরাতে চলেছে তৃণমূল। ইতিমধ্যে কংগ্রেসের একাধিক কাউন্সিলরের সঙ্গে তৃণমূল নেতৃত্বের আলোচনা হয়েছে। সত্যি কী তাই? খড়্গপুরের পুরপ্রধান রবিশঙ্কর পান্ডে বলেন, “কিছু উড়ো খবর আমিও শুনছি। নতুন করে চক্রান্ত শুরু হয়েছে। তবে তৃণমূল এ বারও ব্যর্থ হবে। আসলে এ সব পুরসভার কাজকর্ম ব্যাহত করারই চেষ্টা।” একই মত খড়্গপুর শহর কংগ্রেস সভাপতি অমল দাসের। তিনি বলেন, “আগেও তৃণমূল নানা ভাবে পুরসভায় অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা করেছে। আবার সেই চেষ্টা চলছে।”
২০১০ সালের পুরভোটে জিতে রেলশহরে পুরবোর্ড গঠন করেছিল তৃণমূল। পরে তৃণমূল পরিচালিত পুরবোর্ডের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনে কংগ্রেস। অনাস্থায় জেতার ফলে পুরসভার ক্ষমতা চলে যায় কংগ্রেসের হাতে। রেলশহর কংগ্রেসের ‘দুর্গ’ বলেই পরিচিত ছিল। এ বার লোকসভা ভোটে অবশ্য ছবিটা বদলেছে। খড়্গপুরে ভাল ফল করেছে বিজেপি। লোকসভা ভোটের ফলাফলকে বিধানসভা কেন্দ্রওয়াড়ি ধরলে খড়্গপুর সদর থেকে এগিয়ে রয়েছে বিজেপি। এই বিধানসভা কেন্দ্রে দলের প্রাপ্ত ভোট ৫১ হাজার। যেখানে তৃণমূল পেয়েছে ৪০ হাজার ভোট। আর কংগ্রেস ২১ হাজার। পশ্চিম মেদিনীপুরের ১৯টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে ১৮টিতেই এগিয়ে রয়েছে তৃণমূল। ব্যতিক্রম এই খড়্গপুর সদর। আগামী বছর রেলশহরে পুরসভা নির্বাচন রয়েছে। জনসমর্থন ধরে রেখে একক ভাবে পুরবোর্ড দখল করতে এখন থেকেই ঘুঁটি সাজাতে শুরু করেছেন বিজেপি নেতৃত্ব। পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তাই পুরবোর্ডের ক্ষমতা ফিরে পেতে তৎপর হয়েছে তৃণমূলও। দলের এক জেলা নেতার মন্তব্য, “খড়্গপুরের এক কাউন্সিলর আমাদের দলে আসতে চেয়েছেন। অনাস্থা নিয়ে আমরা এখন কিছু ভাবছিই না! সংখ্যাগরিষ্ঠ কাউন্সিলর যার পাশে থাকবে, পুরবোর্ড তারাই চালাবে। এটা তো সাধারণ ব্যাপার!”