ঐতিহ্যের সরণি বেয়ে অমলিন রাজবাড়ির পুজো

জমিদারি প্রথা বিলীন হয়েছে সেই কবে। আগের মতো আর চোখ ঝলসানো জৌলুসও নেই। আগে যেভাবে ধুমধাম করে বাড়িতে পুজো হত, এখন আর সেই আড়ম্বরও নেই। তবু পুজোর সময় এলেই আবার যেন নতুন করে সেজে ওঠে মহিষাদল রাজবাড়ি। আর পুজো উপলক্ষে ভরে ওঠে রাজবাড়ি। সঙ্গে ভিড় জমান উৎসাহী জনতাও।

Advertisement

আরিফ ইকবাল খান

শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০১৪ ০০:৪৯
Share:

মহিষাদল রাজবাড়ির প্রতিমা। —নিজস্ব চিত্র।

জমিদারি প্রথা বিলীন হয়েছে সেই কবে। আগের মতো আর চোখ ঝলসানো জৌলুসও নেই। আগে যেভাবে ধুমধাম করে বাড়িতে পুজো হত, এখন আর সেই আড়ম্বরও নেই। তবু পুজোর সময় এলেই আবার যেন নতুন করে সেজে ওঠে মহিষাদল রাজবাড়ি। আর পুজো উপলক্ষে ভরে ওঠে রাজবাড়ি। সঙ্গে ভিড় জমান উৎসাহী জনতাও।

Advertisement

মহিষাদল বাজার থেকে রাজবাড়ির দুরত্ব মিনিট পাঁচেক। আমবাগান, পরিখা, নারকেল বাগান আর নাম না জানা অসংখ্য ফুলের এবং ফলের গাছ রয়েছে এখানে। দুটি পেল্লায় আকারের রাজপ্রাসাদ। একটি পুরনো রাজবাড়ি, অন্যটি তুলনায় নতুন। পুরনো রাজবাড়ির সামনেই থিয়েটার হল, আটচালা এবং পাকা বিস্তৃত এলাকা নিয়ে অবস্থিত দুর্গা মন্দির। ১৭৭৮ সালে রানি জানকীনাথ এই পুজোর প্রচলন করেন। রানি ইন্দ্রাণী দেবীর উদ্যোগে পরে মাটির প্রতিমার প্রচলন হয়। আগে প্রতিপদ থেকে দশমী দেবীকে ভোগ দেওয়ার প্রচলন ছিল। এখনও বজায় রয়েছে সেই ঐতিহ্য। অষ্টমীতে আট মণ, নবমীতে ন’মণ করে ভোগ দেওয়া হয়।

মৃন্ময়ী দেবী চিন্ময়ী প্রকাশের অপেক্ষায় রঙ ও তুলির জাদুতে। বয়স্ক শিল্পী শীতলপ্রসাদ গৌতমই এই দেবীমূর্তির নির্মাণ করছেন দীর্ঘদিন ধরে। তিনিই জানান, রাজবাড়ি থেকে শালগ্রাম শিলা এনে পুজো শুরু হয়। মাটির প্রতিমা সাবেক। ডাকের সাজ। তবে দেবীর অস্ত্রে গহনায় থাকে অভিনবত্ব। বৈরাম খাঁ এর আমলে রাজবাড়ি উপহার পেয়েছিলেন সোনার খাপে রাখা অস্ত্র। সেই ঐতিহাসিক অস্ত্র দেবীর হাতে থাকে। রাজবাড়ির সদস্য দেবপ্রসাদ গর্গ, শঙ্করপ্রসাদ গর্গ, শৌর্যপ্রসাদ গর্গ কলকাতা থেকে প্রতি বছরের মতো এ বারও হাজির রাজবাড়িতে। পরিবারের সদস্যরাই জানান, আগে সন্ধি পুজায় আগে কামান ধ্বনি হত। শব্দদূষণের আইনের গুঁতোয় সেই কামান আর কথা বলে না। তবে প্রতিবারের মতো এ বার পুজো উপলক্ষে বসবে গানের আসর। দেবী মূর্তির পাশেই গানের মঞ্চও তৈরি হয়েছে।

Advertisement

রাজবাড়ির রথের মেলায় যিনি সারথি থাকেন সেই সনৎ চক্রবর্তীর কথায়, “ছোট বেলায় নাটকে যোগ দিয়েছি। সে কী উন্মাদনা।” আগে থিয়েটার দেখতে হামেশাই আসতেন শিবরানি চক্রবর্তী। রাজবাড়ির সঙ্গে ওতপ্রোত সম্পর্ক বয়স্ক মহিলার। তিনি বলেন, “রাজবাড়ির মহিলারা পর্দার আড়ালে থাকতেন। রাজমাতারা অন্যত্র বসতেন। আমরা অন্য জায়গায় বসতাম।” কালের নিয়মে সব কিছুরই বদল হয়। সেই বদলকে সঙ্গী করেই আজও উজ্জ্বল মহিষাদল রাজবাড়ির প্রাচীন পুজো।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement