মেলেনি চাকরির অনুমোদনও

আট মাস পার, বেতন পাননি বহু প্রাথমিক শিক্ষক

চাকরির নিয়োগপত্র রয়েছে। আট মাস ধরে নিয়মিত চাকরিও করছেন। কিন্তু এত কিছুর পরেও মিলছে না বেতন। এমনকী মেলেনি চাকরির অনুমোদনও। পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় নবনিযুক্ত ২১৯ জন প্রাথমিক শিক্ষকের হাল এমনই। জেলার প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই শিক্ষকদের চাকরি নিয়ে অর্থ দফতরের অনুমোদন না মেলার ফলেই বেতন পাচ্ছেন না ওই শিক্ষকরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কাঁথি শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০১৪ ০০:৩১
Share:

চাকরির নিয়োগপত্র রয়েছে। আট মাস ধরে নিয়মিত চাকরিও করছেন। কিন্তু এত কিছুর পরেও মিলছে না বেতন। এমনকী মেলেনি চাকরির অনুমোদনও। পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় নবনিযুক্ত ২১৯ জন প্রাথমিক শিক্ষকের হাল এমনই। জেলার প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই শিক্ষকদের চাকরি নিয়ে অর্থ দফতরের অনুমোদন না মেলার ফলেই বেতন পাচ্ছেন না ওই শিক্ষকরা।

Advertisement

পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদ সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে জেলায় ৩০৭ জন প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের অনুমতি মিলেছিল। কিন্তু জেলার প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদ ৫২৬ জনকে প্রাথমিক শিক্ষক পদে নিয়োগ করে। ফলে বাকি ২১৯ জন শিক্ষকের ক্ষেত্রে মেলেনি অর্থ দফতরের অনুমোদন। একারণেই আট মাস ধরে চাকরি করার পরেও বেতন পাচ্ছেন না ওই ২১৯ জন।

অর্থ দফতরের অনুমোদন ছাড়াই কেন বাড়তি ২১৯ জনকে প্রাথমিক শিক্ষক পদে নিয়োগ করা হল?

Advertisement

দায় এড়িয়ে জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের সভাপতি মানস দাসের জবাব, “আমি সদ্য সভাপতি পদে দায়িত্ব পেয়েছি। সভাপতি হিসেবে আমার দায়িত্ব পাওয়ার আগেই জেলায় জানুয়ারি মাসে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ হয়েছিল। তাই এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না।” শিক্ষক নিয়োগের সময়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত সভাপতি ছিলেন গোপাল সাহু। এ বিষয়ে তাঁর বক্তব্য, “৫২৬ জন শিক্ষককে নিয়োগ করা হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অনুমতিতে। কিন্তু নিয়োগের সময় পর্ষদ থেকে ৩০৭ জনের অনুমোদন পাঠানো হয়। সেকারণেই এই সমস্যা।” তবে এ বিষয়ে পর্ষদ দ্রুত ব্যবস্থা নেবে বলেই আশ্বাস দেন তিনি।

কিন্তু সেই আশ্বাসেও ভরসা রাখতে পারছেন না অনেকেই। দেপাল ২ নম্বর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অশোক দাস জানান, তাঁর স্কুলের চারজন শিক্ষকের মধ্যে নবনিযুক্ত এক শিক্ষিকাও বেতন পাচ্ছেন না। অথচ এ বিষয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষের কিছু করার নেই। তিনি আরও জানান, রামনগর চক্রে জানুয়ারি মাসে মোট ১৩ জন প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ করা হলেও তাঁদের মধ্যে ৯জন জানুয়ারি মাস থেকে বেতন পাচ্ছেন না। প্রতিমাসে রামনগর চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক অফিসে বেতনের খোঁজে এসে হতাশ হওয়াই যেন তাঁদের রোজনামচা হয়ে গিয়েছে। দেপাল ২ নম্বর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গত আট মাস ধরে চাকরি করছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের বাসিন্দা পৌলমী সিংহ। কাজের সূত্রে পৌলমীদেবী থাকেন কাঁথিতে। স্কুলে যাতায়াত, খাওয়াখরচ এমন নানা খাতে মাসে বেশ কয়েক হাজার টাকা খরচ হয়। অথচ দিনের পর দিনের এভাবে বেতন ছাড়া কাজ করতে করতে তিনিও ক্লান্ত। তাই প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের আশ্বাসবাণীতে না গলে অনেক প্রাথমিক শিক্ষকই আইনি পথে হাঁটার কথাও ভাবছেন।

নব নিযুক্ত প্রাথমিক শিক্ষকদের এই সমস্যার প্রতিবাদে এ বার আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে জেলার বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠনগুলিও। নিখিল বঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির জেলা সহ সম্পাদক নীলকন্ঠ দলুই ও পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অরূপ কুমার ভৌমিক বলেন, “বিষয়টি নিয়ে বারবার সংসদ সভাপতিকে জানানো হলেও কোনও ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। এমনকি রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কেও বিষয়টি জানানো হয়েছে।” অন্য দিকে বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সভাপতি আনন্দবরণ হান্ডা জানিয়েছেন, অগস্ট মাসের শেষেও যদি নবনিযুক্ত ২১৯জন শিক্ষক বেতন না পান তাহলে আগামী সেপ্টেম্বর মাসে সংগঠনের পক্ষ থেকে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদ অফিস ঘেরাও অভিযান করা হবে।

তবে জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের সভাপতি মানস দাস বলেন, “২১৯ জন প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরির অনুমোদন ও বেতনের বিষয়ে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে, অল্প কিছুদিনের মধ্যেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।” প্রায় একই কথা শুনিয়েছেন জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ মামুদ হোসেনও। তাঁর কথায়, “ পুজোর আগেই যাতে ওই শিক্ষকরা চাকরির অনুমোদন ও বেতন পান তার জন্য চেষ্টা চলছে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement