কাজের ফাঁকে খোশ মেজাজে। ছবি: কিংশুক আইচ।
রাজ্যে চতুর্থ দফার ভোট অবাধ ও সুষ্ঠু করতে একগুচ্ছ পদক্ষেপ নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু, ভোট অবাধ ও সুষ্ঠু হবে কি না, তা নিয়ে বিরোধীদের সংশয় থাকছেই। বামেদের অভিযোগ, ইতিমধ্যে শাসকদলের লোকজন বিভিন্ন এলাকায় হুমকি দিতে শুরু করেছে। মোটর বাইকে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। একই অভিযোগ বিজেপির। জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক তথা সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক দীপক সরকার মঙ্গলবার বলেন, “ভোটে সন্ত্রাসের আশঙ্কা আছেই। বিভিন্ন এলাকা থেকে যা খবর পাচ্ছি, তাতেই এই আশঙ্কা আরও জোরালো হচ্ছে। আমরা খবর পেয়েছি, নারায়ণগড়ে ৭৭টি বুথ দখলের চেষ্টা করছে তৃণমূলের লোকেরা। শালবনিতে ৯২টি বুথ দখলের চেষ্টা করছে ওরা। গড়বেতা এলাকায় পুলিশ এক তরফা ভাবে কাজ করছে। বিভিন্ন এলাকায় তৃণমূলের লোকেরা মোটর বাইক নিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।” তিনি বলেন, “আশা করব, ভোটের দিন নজরদারি আরও বাড়ানো হবে। জেলায় যে কেন্দ্রীয় বাহিনী এসেছে, তাকে সঠিক ভাবে ব্যবহার করা হবে।” বিজেপির জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায় বলেন, “গ্রামাঞ্চলে সন্ত্রাসের আবহ আছে। ইতিমধ্যে শালবনি, মেদিনীপুর সদর ব্লক এলাকায় তৃণমূলের লোকেরা আমাদের কর্মী-সমর্থকদের হুমকি দিতে শুরু করেছে। ভয় দেখাচ্ছে। আমরা চাই, ভোটের নামে যেন প্রহসন না হয়। মানুষ ভোট দেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছেন। মানুষ যেন নিজের ভোট নিজে দিতে পারেন।”
সন্ত্রাসের অভিযোগ অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছে তৃণমূল। তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায় বলেন, “গত পঞ্চায়েত নির্বাচন সুষ্ঠু ভাবে হয়েছে। গত পুরসভা নির্বাচন সুষ্ঠু ভাবে হয়েছে। লোকসভা নির্বাচনও সুষ্ঠু ভাবে হবে।” পুলিশ-প্রশাসনের পদক্ষেপে শাসকদল কি সন্তুষ্ট? সদুত্তর এড়িয়ে তৃণমূলের জেলা সভাপতির জবাব, “পুলিশ পুলিশের কাজ করছে। প্রশাসন প্রশাসনের কাজ করছে। রাজনৈতিক দল রাজনৈতিক দলের কাজ করছে!” বিরোধীরা মিথ্যে অভিযোগ করছে বলেও দাবি তাঁর।
আজ, বুধবার মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রাম, এই দুই লোকসভার ৩২৫০টি কেন্দ্রে ভোট। মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত একাংশ কেন্দ্রে বুথ এজেন্ট ঠিক করে উঠতে পারেনি বিরোধীরা। অভিযোগ, তৃণমূল এ ক্ষেত্রে বাধা দিচ্ছে। বিরোধী দলের এজেন্ট হলে ভোটের পর ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি দিচ্ছে। বিজেপির জেলা সভাপতি তুষারবাবুর কথায়, “আমরা খবর পাচ্ছি, বেশ কয়েকটি এলাকায় বুথ এজেন্টদের হুমকি দেওয়া হয়েছে।” তৃণমূলের জেলা সভাপতি অবশ্য বলেন, “বিরোধীরা যদি বুথ এজেন্ট খুঁজে না পায়, আমরা কী করব!”
পুলিশ-প্রশাসন যে সব পদক্ষেপ নিয়েছে, তাতে কি বামেরা সন্তুষ্ট?
সিপিএমের জেলা সম্পাদক বলেন, “পুরোপুরি সন্তুষ্ট নই। একের পর এক এলাকা থেকে যে সব খবর আসছে, তাতে ভোটের দিনে তো সন্ত্রাসের আশঙ্কা থাকছেই। তবে এটা ঠিক, আগের থেকে পুলিশ-প্রশাসনের তৎপরতা বেড়েছে। আশা করব, ভোটের দিনও পুলিশ-প্রশাসন তৎপর থাকবে। সর্বত্র নজরদারি থাকবে।” কংগ্রেসও কেন্দ্রীয় বাহিনীকে সঠিক ভাবে ব্যবহার করার দাবি জানিয়েছে। জেলা কংগ্রেস সভাপতি বিকাশ ভুঁইয়া বলেন, “আমরা চাই কেন্দ্রীয় বাহিনীকে সঠিক ভাবে ব্যবহার করা হোক। তৃতীয় দফার মতো যেন তাদের বসিয়ে রাখা না হয়।” বিজেপির জেলা সভাপতি তুষারবাবু বলেন, “আমরা স্পর্শকাতর এলাকায় নজরদারি বাড়ানোর দাবি জানিয়েছি। কেশপুরের সীমানা ‘সিল’ করার দাবি জানিয়েছি। যাতে কেশপুর থেকে তৃণমূলের লোক আশপাশের এলাকায় গিয়ে গোলমাল করতে না পারে। বুধবার পুলিশ-প্রশাসনের কী ভূমিকা থাকে, সেটাই দেখার।”