ছোবল খেয়েও সাপ বাঁচাতে লড়ছেন কৌস্তুভ

ছোবল খেয়েছেন। যন্ত্রণায় ছটফট করেছেন। যদিও তাতে সাপের প্রতি ভালবাসা এতটুকু কমেনি তাঁর। বিষধর হোক বা বিষহীন— কোথাও সাপ উদ্ধারের খবর পেলেই ছুটে গিয়েছেন তিনি।

Advertisement

দেবমাল্য বাগচী

খড়্গপুর শেষ আপডেট: ২১ মে ২০১৭ ০২:১০
Share:

বিষধর ময়াল কোলে কৌস্তুভ। নিজস্ব চিত্র

ছোবল খেয়েছেন। যন্ত্রণায় ছটফট করেছেন। যদিও তাতে সাপের প্রতি ভালবাসা এতটুকু কমেনি তাঁর। বিষধর হোক বা বিষহীন— কোথাও সাপ উদ্ধারের খবর পেলেই ছুটে গিয়েছেন তিনি। সাপ নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করছেন খড়্গপুরের মালঞ্চর বাসিন্দা কৌস্তুভ চক্রবর্তী।

Advertisement

শুধু খড়্গপুর শহরই নয়, বিগত ১৬ বছর ধরে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ৫০০টিরও বেশি সাপ উদ্ধার করেছেন কৌস্তুভবাবু। বন দফতরের অনুমতি নিয়ে এর মধ্যে অনেক সাপ ছেড়ে দিয়েছেন জঙ্গলে। সাপ দেখলেই মেরে ফেলার প্রবণতা রুখতে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

জলা জমি, জঙ্গল থেকে প্রায়শই সাপ ঢুকে পড়ে লোকালয়ে। বাড়িতে সাপ দেখলে অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। সাপ-মানুষের লড়াইয়ে কখনও মানুষ জেতে আবার কখনও বলি হতে হয় সাপকে। অনেক সময় বিষহীন সাপ মেরে ফেলার ঘটনা ঘটে। আবার বিষধর সাপের ছোবল খেয়েও হাসপাতালে না গিয়ে বাঁচার আশায় ওঝার কাছে ছুটে যান অনেকে। ওঝার কাছে গিয়ে অনেকটা সময় নষ্ট হয়ে যায়। তারপর চিকিৎসকের কাছে গিয়েও অনেক সময় রোগীকে বাঁচানো যায় না। এ সব নিয়ে মানুষকে সচেতন করতে ২০০১ সাল থেকে সাপ ধরার নেশা পেয়ে বসে কৌস্তুভবাবুকে।

Advertisement

২০১২ সালে মেদিনীপুরের জিনশহরে সাপ উদ্ধারে গিয়ে খরিশ সাপের ছোবলে তাঁর বাঁ হাতের একটি আঙুল বাদ দিতে হয়। এরপরেও চুপ করে বসে থাকেননি তিনি। জীবজগত ও পরিবেশ সংরক্ষণে ২০১৩ সালে ১০ জনকে নিয়ে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গড়ে তোলেন। বিগত চার বছরে সাপ সংরক্ষণের লক্ষে জেলা জুড়ে প্রচার চালাচ্ছেন এই সংস্থার সদস্যরা। প্রচারে সাপ দেখলেই আতঙ্কিত না হয়ে বন দফতরে খবর দেওয়ার আবেদন জানানো হচ্ছে। কাউকে সাপ ছোবল মারলে অন্য কোথাও না গিয়ে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথাও বলা হচ্ছে।

বছর আটত্রিশের কৌস্তুভবাবুর কথায়, “পুরুলিয়া জেলায় আমার বড় হওয়া। তাই ছোট থেকে অরণ্যপ্রীতি ছিলই। পরে বহু বইপত্র ঘেঁটে দেখেছি, সরীসৃপ প্রাণীরা খুব অবহেলিত। কিন্তু বাস্তুতন্ত্র রক্ষা করতে এদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তাই এইসব সরীসৃপ প্রাণীর সংরক্ষণে যতটুকু পারি কাজ করছি।” তিনি বলছেন, “কাউকে নিজের নিরাপদ এলাকা থেকে জোর করে সরাতে চাইলে সে তো আঘাত করবেই। আমি সাপের ছোবল খেয়ে সাপকে চিনেছি। আমার মনে হয় সাপকে বিরক্ত না করে বন দফতরে বা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত।’’

সাপ সংরক্ষণে আর সাপ নিয়ে মানুষের মনে আতঙ্ক দূর করতে কৌস্তুভবাবুর এই প্রয়াসকে সাধুবাদ জানাচ্ছে বন দফতরও। বন দফতরের খড়্গপুরের ডিএফও অরূপ মুখোপাধ্যায় বলেন, “সাপ নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে প্রচার জরুরি। আমার সঙ্গে কৌস্তুভবাবুর পরিচয় রয়েছে। উনি যে ভাবে সাপ উদ্ধারের কাজ করেন তাতে সাধুবাদ জানাতে হবেই। প্রতিটি সামাজিক সংগঠনের এ ভাবেই সচেতনতা প্রচারে এগিয়ে আসা উচিত।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement