দাসপুরে অভিযুক্ত চিকিৎসকের চেম্বার। ছবি: কৌশিক সাঁতরা
ভুল চিকিত্সার জন্য তিনি দৃষ্টিশক্তি হারাতে বসেছেন বলে অভিযোগ করলেন এক যুবক। আরেফুল মল্লিক নামে বছর তিরিশের ওই যুবকের বাড়ি কেশপুরের গোলাড়ের আমুরিয়ায়। তিনি দাসপুরে এক হোমিওপ্যাথি চিকিত্সকের কাছে চোখের চিকিত্সা করিয়েছিলেন। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরার দফতরে দেওয়া অভিযোগে আরেফুলের দাবি, দাসপুরের ওই চিকিত্সক ভুল চিকিত্সা করেছেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দফতরেও ডাকযোগে অভিযোগপত্র পাঠিয়েছেন তিনি। আরেফুল বলেন, “ওই চিকিত্সকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। ওর জন্যই আমার একটা চোখ নষ্ট হতে বসেছে।’’ আরেফুলের স্ত্রী নাসিমা বিবিও বলছিলেন, ‘‘ভুল চিকিত্সা না হলে এ ভাবে চোখ নষ্ট হতে বসত না।’’ জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের আশ্বাস, ‘‘অভিযোগ খতিয়ে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুরো বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’’
আরেফুল প্রতিবন্ধী। তাঁর দু’টো পা অচল। টিউশন করে সংসার চালান। মাস দুয়েক আগে ডানচোখের সমস্যা দেখা দেয় তাঁর। তারপর তিনি অক্ষয় দাস নামে দাসপুরের ওই চিকিত্সকের কাছে যান। আরেফুলের দাবি, ওই চিকিত্সক চোখ দেখে ড্রপ-সহ কিছু ওষুধপত্র দেন। এরপর কয়েকবার ওই চিকিত্সকের কাছে গিয়েছেন কেশপুরের যুবক। অবশ্য চিকিত্সা শুরুর এক মাস পরেও চোখের সমস্যা দূর হয়নি। শুরুতে চিকিত্সক জানিয়েছিলেন, ‘ঠিক সেরে যাবে’। পরে তিনি কলকাতার এক হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চিকিত্সা করানোর কথা জানান। কোন হাসপাতালে যেতে হবে তাও জানিয়ে দেন। আরেফুল অবশ্য সেখানে না গিয়ে কলকাতার অন্য এক হাসপাতালে যান। কেশপুরের এই যুবকের কথায়, “কলকাতার ওই হাসপাতালে যাওয়ার পরেই বুঝতে পারি, দাসপুরের চিকিত্সক ভুল চিকিত্সা করেছেন। ভুল চিকিত্সার জন্যই চোখের অবস্থা ধীরে ধীরে খারাপ হয়েছে।’’
এরপরই মেদিনীপুরে এসে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের দফতরে দাসপুরের ওই চিকিত্সকের নামে লিখিত অভিযোগ জানান তিনি। চিকিত্সায় কোনও ভুল ছিল বলে অবশ্য মানতে নারাজ চিকিত্সক অক্ষয় দাস। হোমিওপ্যাথি চিকিত্সক অক্ষয়বাবু বলেন, “চিকিত্সায় কোনও ভুল ছিল না। ওই যুবক আমার কাছে এসেছিলেন। আমি ওকে কলকাতার হাসপাতালে গিয়ে চিকিত্সা করানোর পরামর্শ দিয়েছিলাম।’’ প্রায় কুড়ি বছর ধরে দাসপুরে প্র্যাকটিস করছেন অক্ষয়বাবু। দাসপুরে তাঁর চেম্বার রয়েছে। তবে অ্যালোপ্যাথি চিকিত্সাও করেন তিনি। হোমিওপ্যাথি ডিগ্রি নিয়ে কেন অ্যালোপ্যাথি চিকিত্সা? অক্ষয়বাবু মানছেন, ‘‘এটা আমার ভুল।’’
অভিযোগ পাওয়ার পরে ওই চিকিত্সকের সম্পর্কে খোঁজখবর শুরু করেছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। জেলার এক স্বাস্থ্যকর্তার কথায়, “চোখের চিকিত্সার ক্ষেত্রে সব সময় সতর্ক থাকা উচিত। এ ক্ষেত্রে অভিযোগ গুরুত্ব দিয়েই দেখা হচ্ছে।’’