কোল পেয়েছে একরত্তি। নিজস্ব চিত্র।
শিশুকন্যাটির বয়স কয়েক দিন। পরিজনেরা অনাদরে তাকে ফেলে রেখে গিয়েছিল জঙ্গলে। তবে আর এক মা পেয়ে গিয়েছে সদ্যোজাতটি। ঝুমা সিংহ নামে ওই মহিলা শুধু শিশুকন্যাটিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করাননি, গড়বেতা গ্রামীণ হাসপাতালে পড়ে থেকে আগলে রেখেছেন ওই খুদেকে। দুই ছেলেমেয়ের মা ঝুমাদেবী বলছেন, “এই শিশুকন্যাকেও আমি নিজের সন্তানের মতো মানুষ করতে চাই।”
গড়বেতার গরঙ্গা গ্রাম পঞ্চায়েতের পাতরিশোল গ্রামে বাড়ি ঝুমাদেবীর। গত বুধবার সন্ধ্যায় শৌচকর্ম করতে বাড়ির বাইরে বেরিয়েছিলেন ঝুমাদেবী। অদূরেই জঙ্গল। সেখান থেকে সদ্যোজাত শিশুর কান্না শুনতে পান ঝুমাদেবী। তড়িঘড়ি বাড়ি ফিরে স্বামী শীতল সিংহকে সব জানান। তারপর ঝুমাদেবী নিজেই টর্চ নিয়ে জঙ্গলে চলে যান। সেখানে গিয়ে দেখেন, গাছতলায় পড়ে রয়েছে সদ্যোজাত শিশুকন্যা। বুকের উপরে পাথর চাপা দেওয়া। পাথর সরিয়ে শিশুকন্যাকে বাড়িতে নিয়ে আসেন তিনি। ঝুমাদেবীর কথায়, “ও তো নাগাড়ে কাঁদছিল। আমি বাড়িতে নিয়ে এসে পরিচর্যা করি।”
কী মারাত্মক পরিস্থিতি হলে একজন মা বা তার পরিজনেরা এমন দুধের শিশুকে পাথর চাপা দিয়ে ফেলে যেতে পারে— সেই চর্চা এখন গ্রাম জুড়ে। ঝুমাদেবীর এলাকার গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান সুভাষ মাঝিরও বক্তব্য, “এক মা তার সদ্যোজাত শিশুকন্যাকে ফেলে দিয়ে গিয়েছে। আর এক মা সেই সদ্যোজাতকে কুড়িয়ে বুকে আগলে রেখেছেন। এমনও হয়!”
পরে ঝুমাদেবী শিশুকন্যাটিকে হাসপাতালে ভর্তি করান। চিকিত্সকেরা মনে করছেন, বুধবারই শিশুটির জন্ম হয়েছে। বেশ কিছুক্ষণ জঙ্গলে পড়ে থাকায় মশা আর পোকামাকড়ের কামড়ে শিশুটির শরীরে র্যাশ বেরিয়েছিল। প্রাথমিক চিকিত্সায় অবশ্য তা সেরে গিয়েছে। গড়বেতার ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক আশিস মিদ্যা জানান, সদ্যোজাত শিশুকন্যাটি এখন সুস্থই রয়েছে। এ ক্ষেত্রে কী করণীয় তা বিভাগের (স্বাস্থ্য বিভাগ) কাছে জানতে চেয়েছি। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যেমন নির্দেশ দেবেন, তেমনই পদক্ষেপ করা হবে।” স্বাস্থ্য দফতরের এক সূত্রে খবর, আর একটু সুস্থ হয়ে যাওয়ার পরে শিশুটিকে কোনও হোমে পাঠানো হতে পারে।
তবে দুধের শিশুটি মাতৃদুগ্ধে বঞ্চিত। তার জন্য বেবিফুডের ব্যবস্থা করা হয়েছে। নার্সরাও শিশুটির দেখভাল করছেন। তবে এক মুহূর্তের জন্যও শিশুকন্যাটিকে কাছছাড়া করছেন না ঝুমাদেবী। ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক আশিসবাবু বলছিলেন, “হাসপাতালে শিশুটিকে উনি (ঝুমাদেবী) মাতৃস্নেহেই আগলে রেখেছেন।”