ডাইনি অপবাদে শালবনির গ্রামে এক মহিলাকে মারধরের চেষ্টা করে স্থানীয় কয়েকজন। ওই মহিলা পালিয়ে গেলে রাগ গিয়ে পড়ে তাঁর ভাইয়ের উপর। বেধড়ক মারধরে জখম হন ওই মহিলার ভাই। তাঁকে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। প্রশাসনের অবশ্য দাবি, এটি ডাইনি অপবাদে মারধরের ঘটনা নয়। শালবনির বিডিও পুষ্পল সরকার বলেন, “জমি বিবাদকে কেন্দ্র করে ওই এলাকায় এমন একটি ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ বিষয়টি দেখছে।”
ডাইনি অপবাদে পশ্চিম মেদিনীপুরেরই দাসপুরে মহিলাকে পিটিয়ে খুনের ঘটনায় মাস কয়েক আগেই জানগুরু-সহ সাতজনের ফাঁসির সাজা শুনিয়েছে ঘাটাল আদালত। তারপরেও যে ডাইনি অপবাদে মারধরের ঘটনায় ইতি পড়েনি শালবনির ঘটনাই তার প্রমাণ।
স্থানীয় সূত্রে খবর, গত এক-দেড় বছরে শালবনির ওই গ্রামে কয়েকজনের মৃত্যু হয়। নানা রোগে ভুগেই তাঁরা মারা যান। যদিও গ্রামের মাতব্বরেরা দাবি করে, ওই মহিলা এলাকায় থাকার জন্যই এই সব ঘটনা ঘটছে। তাই তাঁকে গ্রামে থাকতে দেওয়া যাবে না। শালবনির গ্রামে মারধরে জখম ওই ব্যক্তির দাবি, দিদিকে গ্রাম থেকে তাড়িয়ে দিয়ে ওরা তাঁদের জমি হাতিয়ে নিতে চায়। তাই গ্রামের কয়েকজন তাঁর দিদিকে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে। জখম ওই ব্যক্তির আর এক দিদিরও অভিযোগ, “তাঁদের পাট্টা জমি হাতানোর চেষ্টা করছে গ্রামের কয়েকজন।”
মেদিনীপুর মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন ওই ব্যক্তির দাবি, দীর্ঘদিন ধরেই এলাকার কয়েকজন তাঁদের ডাইনি অপবাদ দিয়ে আসছে। মাস কয়েক আগে একবার তাঁরা নিরাপত্তা চেয়ে পুলিশের দ্বারস্থও হয়েছিলেন। তখন তাঁদের নিরাপত্তায় গ্রামে পুলিশ পিকেটও বসানো হয়েছিল। পরে অবশ্য পুলিশ পিকেট তুলে নেওয়া হয়। প্রহৃত ওই ব্যক্তির অভিযোগ, “শনিবার রাতে দিদির সঙ্গে তিনি বাড়ি ফিরছিলেন। সেই সময় গ্রামের মাতব্বরেরা পরিকল্পনা মতো বাঁশ- লাঠি নিয়ে তাঁদের উপর হামলা চালায়।” স্থানীয় বাসিন্দা দিলীপ কপাট, লক্ষ্মীকান্ত মাহাতো, পশুপতি দোলুই-সহ কয়েকজন তাঁদের ওপর হামলা চালিয়েছে বলে পুলিশের কাছে জানিয়েছেন তিনি।
শালবনির ওই এলাকায় যে সচেতনতার যে অভাব রয়েছে তা মানছেন পঞ্চায়েত সমিতির এক কর্তা। তাঁর কথায়, “শালবনির ঘটনা দুঃখজনক। আজকের দিনে এ ভাবে কাউকে মারধরের ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না।” ঘটনার সঙ্গে ডাইনি-যোগ নেই দাবি করেও ব্লক প্রশাসনের এক কর্তা মানছেন, “কিছু এলাকায় এখনও ওই কুসংস্কার রয়েছে। এটা উচিত নয়। প্রশাসন মানুষকে সচেতন করার সব রকম চেষ্টা করছে। ওই সব এলাকার অনেকেই এখন লেখাপড়া শিখে শিক্ষিত হচ্ছেন। এই শিক্ষিক মানুষজনকে এগিয়ে আসতে হবে।”