সবেধন: স্কুলে পড়ুয়াদের একটিই শৌচাগার। নিজস্ব চিত্র
স্কুলের অদূরে একটা জটলা। কাছে যেতে বোঝা গেল, ওঁরা সব অভিভাবক। সকলেই সমস্বরে বলছেন, ‘‘মেয়েরা তো অন্যায় কিছু দাবি করেনি। স্কুলে শৌচাগার না থাকাটাই বরং অন্যায়। ওদের পাশে আমাদের থাকতেই হবে।’’
কেশপুরের এই গোটগেড়্যা শিবশক্তি হাইস্কুলের ছাত্রীদের টয়লেট-প্রতিবাদ ইতিমধ্যে জেলাশাসকের কানে পৌঁছেছে। ছাত্রীরাই মেদিনীপুর শহরে গিয়ে জানিয়ে এসেছে স্কুলে শৌচাগার তৈরির দাবি। এই লড়াইয়ে অভিভাবকদের পাশে থাকাটা তাদের কাছে বাড়তি জোর। হুবহু সিনেমার মতোই।
শ্বশুরবাড়িতে ‘টয়লেট’ না থাকায় নববধূর প্রতিবাদ নিয়েই তৈরি হয়েছে সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত বলিউডি ফিল্ম ‘টয়লেট: এক প্রেমকথা’। ছবির পর্দায় যুবতী বধূটিও শেষমেশ পরিজনেদের লড়াইয়ে পাশে পেয়েছিলেন। ঠিক তেমনই কেশপুরের স্কুল পড়ুয়া কিশোরীদের অভিভাবকরাও বলছেন, মেয়েরা হক কথাই বলেছে। স্কুলে শৌচাগার গড়তে দরকারে ওরা ফের দল বেঁধে মেদিনীপুরে যাবে।
দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী মৌমিতা পাত্রের বাবা রামপদ পাত্র বলেন, “আজকের দিনে স্কুলে মেয়েদের একটা শৌচাগার থাকবে না, এটা ভাবা যায়?” একদাশ শ্রেণির ছাত্রী সুষমা বাগরার বাবা শ্যামল বাগরার কথায়, “কেন স্কুলের মেয়েরা মেদিনীপুর গেল সেটা ভাবতে হবে। স্কুলে মেয়েদের শৌচাগার থাকলে তো এটা হতো না।” দ্বাদশ শ্রেণির মাম্পি দোলুইয়ের বাবা সঞ্জিত দোলুই বলছিলেন, “স্কুলে মেয়েদের শৌচাগার থাকা আবশ্যিক। মেয়েদের লড়াইয়ের পাশে আছি।” মৌমিতা, সুষমারও বলছিল, “বাধ্য হয়েই আমরা শৌচাগার চেয়ে আওয়াজ তুলেছি।”
কেশপুর- দাসপুর সড়কের অদূরে ঝলকার গোটগেড়্যা শিবশক্তি হাইস্কুল। পাশ দিয়ে চলে গিয়েছে গ্রামীণ রাস্তা। স্কুলে ছেলেদের যে একটি মাত্র শৌচাগার রয়েছে, সেটি এই গ্রামীণ রাস্তার পাশে, একেবারে সীমানা পাঁচিলের গায়ে। ঘেরাটোপও সে ভাবে নেই। ফলে, একান্ত প্রয়োজনে ওই শৌচাগারে গেলেও ছাত্রীদের অস্বস্তিতে পড়তে হয়। তাই শৌচাগারের দাবি গত মঙ্গলবার এই স্কুলের জনা পনেরো ছাত্রী সটান মেদিনীপুরে জেলাশাসকের দফতরে পৌঁছে যায়। স্পষ্টই জানায়, ‘ঝোপঝাড়ে আর যাব না। স্কুলে টয়লেট চাই।’
বিষয়টি নিয়ে শোরগোল পড়তেই সামনে এসেছে দুর্নীতির নালিশ। একবার ৩২,৫০০ টাকা, আর এক বার দু’টি শৌচাগারের জন্য ৬০,০৯০ টাকা করে। খাতায়-কলমে বরাদ্দ অর্থ খরচ হয়েছে বলে দেখিয়েও দিয়েছে স্কুল। অথচ, বাস্তব হল— স্কুলে মেয়েদের একটি শৌচাগারও তৈরি হয়নি। ছাত্রীদের অভিযোগ, বরাদ্দ টাকা নয়ছয়ে প্রধান শিক্ষক নিজে জড়িত। বর্তমান স্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতি সঞ্জয় করণ এ দিন বলেন, “স্কুলে কেন মেয়েদের শৌচাগার থাকবে না, সেই প্রশ্ন আমারও। তবে আমি সভাপতি হওয়ার আগেই তিনটি শৌচাগারের অর্থ বরাদ্দ হয়েছিল। খরচও তখনই হয়েছে।” স্কুল পরিচালন সমিতির প্রাক্তন সভাপতি গোপাল করণেরও বক্তব্য, “বরাদ্দ টাকায় কেন শৌচাগার করা হয়নি, সভাপতি থাকাকালীন সেই প্রশ্ন বারবার তুলেছি। প্রধান শিক্ষক সদুত্তর দেননি। উনি নিজের ইচ্ছে মতো কাজ করে গিয়েছেন।”
কিন্তু কেন স্কুলে মেয়েদের শৌচাগার হয়নি, তা নিয়ে এ দিনও মন্তব্য করতে চাননি প্রধান শিক্ষক আশিস মণ্ডল। তাঁর বক্তব্য, “আমি কিছু বলব না।” জেলার এক প্রশাসনিক কর্তার অবশ্য আশ্বাস, “ওই স্কুলের ফাইল দেখা শুরু হয়েছে। নিশ্চয়ই সমস্যার সুরাহা হবে। সব দিক দেখে ওই স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থাও নেওয়া হতে পারে।”