প্রতীকী ছবি।
হুগলি নদীর উপরে এই দ্বীপ এলাকায় প্রায় ২০ হাজার মানুষের বাস। বাসিন্দাদের প্রধান জীবিকা মাছের চাষ ও মাছ ধরা।
পূর্ব মেদিনীপুরের হলদিয়া ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপ থেকে জলপথে বেশ কয়েক কিলোমিটার উজিয়ে পৌঁছনো যায় নয়াচরে। যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম জলপথে নৌকা বা লঞ্চ। এহেন দ্বীপ এলাকার বাসিন্দাদের অন্যতম সমস্যা পানীয়জল। পানীয় জলের জন্য বাসিন্দাদের অনেককেই দুই থেকে তিন কিলোমিটার রাস্তা হাঁটতে হয়। গোটা চরের মানুষের কাছে পানীয় জলের ভরসা বলতে এলাকার মাত্র ৮-৯টি টিউবওয়েল বা নলকূপ। ফলে এলাকার বাসিন্দাদের পানীয়জলের চাহিদার সমস্যা রয়েছে। পাশাপাশি চারদিকে নোনাজলের নদীবেষ্টিত হওয়ায় মাটির তলায় প্রায় ৮০০-৯০০ ফুট গভীরে বসানো পাইপের মাধ্যমে জল তোলা হত। কিন্তু নোনাজল-সহ নানাকারণে অনের নলকূপ থেকেই জল পেতে সমস্যা হয় বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ।
এমন পরস্থিতিতে নয়াচরের বাসিন্দাদের পানীয় জলের চাহিদা মেটাতে সৌরবিদ্যুৎ চালিত পানীয় জল প্রকল্প তৈরিতে উদ্যোগী হয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদ। নয়াচরে বিদ্যুৎ নেই। তাই বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার করে গভীর নলকূপের মাধ্যমে ভূ-গর্ভের জল তুলে তা পানীয়জল হিসেবে সরবরাহ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে জেলা পরিষদ সূত্রে জানানো হয়েছে।
জেলা পরিষদ সূত্রের খবর, চর এলাকায় তিনটি সৌরবিদ্যুৎ চালিত জলপ্রকল্প গড়ার জন্য স্কিম তৈরি করা হয়েছে। প্রতিটি জলপ্রকল্পে ভূ-গর্ভের জল তোলার জন্য ব্যবহার করা হবে সৌরবিদ্যুৎ চালিত পাম্প। ওই জল ধরে রাখতে ১০ হাজার লিটার ধারণ ক্ষমতার জলাধার তৈরি করা হবে। ওই জলাধার থেকে প্রকল্প সংলগ্ন এলাকায় পাইপলাইনের মাধ্যমে জল সরবরাহের ব্যবস্থা থাকবে। প্রতিটি জল প্রকল্পের জন্য গড়ে প্রায় ১০ লক্ষ টাকা খরচ ধরা হয়েছে। জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য দফতরের কর্মাধ্যক্ষ পার্থপ্রতিম দাস বলেন, ‘‘নয়াচরের বাসিন্দাদের জলের সমস্যা আমাদের নজরে রয়েছে। নলকূপগুলি দ্রুত খারাপ হওয়াতেই এই সমস্যা তৈরি হয়েছে। তা ছাড়া ওই এলাকার ভৌগোলিক অবস্থানের জন্য বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় প্রচলিত বিদ্যুৎ ব্যবহার করে পানীয় জল প্রকল্প গড়ার সুযোগ নেই। তাই বিকল্প হিসেবে সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহারের সিদ্ধান্ত হয়েছে। তিনটি জলপ্রকল্প গড়ার জন্য সম্প্রতি রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলেই কাজ শুরু হবে।’’
স্থানীয় মৎস্যজীবী ইউনিয়নের সভাপতি বনবিহারী পাল বলেন, ‘‘এলাকার ১৭ টি পাড়া মিলে প্রায় ২০ হাজার মানুষের বাস। অথচ জলের জন্য মাত্র ৮ টি নলকূপ আছে। সেগুলি মাঝেমধ্যেই খারাপ হয়ে যায়। নয়া জলপ্রকল্প হলে আমাদের সুবিধা হবে। তবে প্রকল্পগুলি যাতে সঠিক জায়গায় হয় সেদিকেও গুরুত্ব দেওয়াও প্রয়োজন।’’