ঝুমি নদীতে ভেঙে গিয়েছে বাঁশের সাঁকো। ঘাটালের বেরার ঘাটে। ছবি: কৌশিক সাঁতরা
লাগাতার বৃষ্টিতে জলস্তর বেড়েছে কংসাবতীর। অবশ্য শনিবার পর্যন্ত জলস্তর বিপদসীমা ছোঁয়েনি বলেই জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর। তবে নদীর আশেপাশের এলাকায় সতর্কতা জারি করা হয়েছে। নদীর জল বাড়ার খবর পেয়ে এ দিন সকালে অ্যানিকেতের কাছে যান স্থানীয় বিধায়ক দীনেন রায়।
প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, মেদিনীপুরের অ্যানিকেতের কাছে কংসাবতীর বিপদসীমা প্রায় ২৫ মিটার। শনিবার জল বয়েছে ২৪ মিটারের আশপাশ দিয়ে। সেচ দফতরের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়র তপন পাল বলেন, ‘‘কংসাবতীর জল বিপদসীমার নীচেই রয়েছে। এখনই উদ্বেগের কিছু নেই।’’ শনিবার মেদিনীপুরের আকাশ দিনভর মেঘলা ছিল। মাঝেমধ্যে বৃষ্টিও হয়েছে। তবে এ দিন মেদিনীপুরে কিংবা খড়্গপুরে ভারী বৃষ্টি হয়নি। প্রশাসনের ওই সূত্র জানাচ্ছে, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরের মধ্যে তমলুক, পাঁশকুড়া এবং সবংয়ে ভারী বৃষ্টি হয়েছে। সেচ দফতরের এক আধিকারিক জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ওই তিন জায়গায় গড়ে ২০০ মিলিমিটার করে বৃষ্টি হয়েছে। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘আমরা সতর্ক রয়েছি। কিছু এলাকায় স্থানীয়দেরও সতর্ক করা হয়েছে।’’
বৃষ্টি শুরু হওয়ায় চাষিরা স্বস্তি পেয়েছেন। এতদিন আকাশে মেঘের আনাগোনা সার ছিল। ভরা শ্রাবণেও বৃষ্টি না হওয়ায় চরম সঙ্কটের মুখে পড়েছিল আমন চাষ। কারণ আমন চাষের জন্য চাষিরা মূলত জুন- জুলাইয়ের বৃষ্টির উপরই নির্ভর করেন। এই চাষের জন্য একলপ্তে অন্তত ৫০ মিলিমিটার বৃষ্টি প্রয়োজন। জেলা ওই সময়ে একসঙ্গে এতটা বৃষ্টি পায়নি। জেলার কৃষি কর্মাধ্যক্ষ রমাপ্রসাদ গিরি মানছেন, ‘‘জুলাই মাসের শেষের দিকটা বীজতলা জমিতে বসানোর আদর্শ সময়। ওই সময়টায় জেলায় বৃষ্টির ঘাটতি ছিল। তবে এখন টানা বৃষ্টি হলেও চাষ অনেকটা হয়ে যাবে।’’
প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, শনিবার পর্যন্ত জেলায় সরকারি ত্রাণ শিবিরে কেউ আশ্রয় নেননি। তবে অনেকেই উঁচু জায়গায় উঠে এসেছেন। বেশ কিছু জায়গায় সেখানেই ত্রাণ বিলি চলছে। টানা বৃষ্টিতে কিছু কাঁচা ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘লাগাতার বৃষ্টিতে জেলার কিছু এলাকা জলমগ্ন হয়েছে বলে শুনেছি। তবে সার্বিকভাবে জেলার জল- পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে।’’
টানা বৃষ্টিতে ঝুমি, শিলাবতী নদীতেও জল বেড়েছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, জলের তোড়ে শিলাবতীর উপরে থাকা নিমতলা ঘাট, শিলা রাজনগর বাংলো গোড়া, ঢেকিরঘাট, ভাঙাদহের ঘাট, গোপালনগর মাইতি পাড়া, ঝুমি নদীর উপরে ঘোড়ুইঘাট, বেড়ার ঘাট প্রভৃতি এলাকার সাঁকোগুলি ভেসে গিয়েছে। দাসপুরে পলাশপাই খালের উপর আটটি সাঁকোও ভেসে গিয়েছে। পঞ্চায়েতগুলিকেও সতর্ক করা হয়েছে। ঘাটালের মহকুমা শাসক অসীম পাল বলেন, “বিভিন্ন নদী বাঁধের পরিস্থিতির উপর নজরদারি চলছে। সেচ দফতরকেও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।” মহকুমা সেচ আধিকারিক উত্তম হাজরা জানান, গত দু’দিনে শিলাবতীর জল দু’ফুট বেড়েছে। তবে শনিবার পর্যন্ত সেটি প্রাথমিক বিপদসীমা পেরোয়নি।” টানা বৃষ্টিতে গড়বেতা, গোয়ালতোড়, চন্দ্রকোনা রোড ব্লকের বহু নিচু এলাকা জলমগ্ন হয়ে গিয়েছে।
শুক্রবার রাত থেকে সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত শনিবার ভোর থেকে ঝেঁপে বৃষ্টি হয়। দুপুরের দিকে ঝিরঝিরে বৃষ্টি হয়। বিকেলের পরে বৃষ্টি বন্ধ হয়ে যায়। জেলা কৃষি দফতর জানিয়েছে, ঝাড়গ্রামে চাষাবাদের জন্য আরও ভারী বৃষ্টির প্রয়োজন রয়েছে।