দুর্ভোগ: হাসপাতালে এ ভাবেই অপেক্ষা রোগীদের। নিজস্ব চিত্র
প্রতীক্ষালয়ে তৈরি হয়েছে ন্যায্যমূল্যের ওষুধের দোকান। বিশ্রামের জন্য রোগীর পরিজনেদের ভরসা গাছতলা।
বছর পাঁচেক আগে তমলুকে জেলা হাসপাতালে রোগী ও তাঁর পরিজনেদের বসার জন্য প্রতীক্ষালয় তৈরি হয়। জেলা পরিষদের বরাদ্দ অর্থে হাসপাতালের বহির্বিভাগ সংলগ্ন এলাকায় তৈরি হয় দু’টি ঘর। ঘটা করে উদ্বোধনও করা হয় প্রতীক্ষালয়ের। হাসপাতালে আসা প্রসূতি, বাচ্চা ও মায়েরা এই প্রতীক্ষালয়েই অপেক্ষা করতেন।
যদিও বছরখানেকের মধ্যেই প্রতীক্ষালয়ে তৈরি হয়েছে ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকান। বর্তমানে ওই প্রতীক্ষালয়ের একটি অংশে রয়েছে ওষুধের দোকান। দোকানের পাশে রয়েছে গুদামঘর। প্রতীক্ষালয় না থাকায় রোগী ও তাঁর পরিজনেদের গাছতলায় অপেক্ষা করতে হয়। গরমে রোদেই ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। বর্ষায় সমস্যা আরও বাড়ে। গাছতলায় দাঁড়িয়ে ভিজতেও বাধ্য হন অনেকে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতি সপ্তাহের মঙ্গলবার, বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার প্রসূতি মহিলাদের শারীরিক পরীক্ষা করা হয়। সোম, বুধ ও শনিবার দেওয়া হয় শিশুদের টিকা। এই দিনগুলিতে হাসপাতালে অন্যদিনের থেকে ভিড় বেশি হয়। যদিও অপেক্ষার জন্য বসার জায়গা না থাকায় প্রসূতি ও মায়েদের দুর্ভোগের শিকার হতে হয় বলে অভিযোগ।
কোলাঘাটের বরনান গ্রামের বাসিন্দা গৃহবধূ তারারানি ঘড়া বাচ্চাকে টিকা দেওয়ার জন্য হাসপাতালে এসেছিলেন। সকালে হাসপাতালের টিকাকরণ বিভাগে নামও নথিভুক্ত করেন তিনি। এরপরে বসার কোনও জায়গা দেখতে না পেয়ে বাচ্চাকে নিয়ে গাছতলায় গিয়ে বসেন তিনি। তারারানির মা বৃদ্ধা ঊষাদেবী বলেন, ‘‘হাসপাতালের ভিতরে বাচ্চাদের বসার জায়গা কম। পাখা না থাকায় গরম আর ভিড়ে প্রাণান্তকর অবস্থা হয়। ছায়া পেতে ভরসা তাই গাছতলাই।’’ একইভাবে, প্রসূতি আনসুরা বেগমের অভিযোগ, ‘‘হাসপাতালের ভিতরে সকলের বসার জায়গা নেই। সেখানে সবসময় দাঁড়িয়ে থাকাও কষ্টের। কী আর করব। বাধ্য হয়ে গাছতলাতেই বসে থাকতে হচ্ছে।’’
জেলা হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৩ সালের ৩১ জানুয়ারি ন্যায্য মূল্যের ওষুধ দোকান তৈরির জন্য প্রতীক্ষালয়ের জায়গা একটি বেসরকারি সংস্থাকে ভাড়া দেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বেসরকার সংস্থাটি জেলা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে প্রতিমাসে ৪ হাজার ৬০০ টাকা ভাড়া দেবে বলে চুক্তি হয়। ২০১৩ সালের ১ ফেব্রুয়ারি থেকেই ওষুধ দোকান চালুও হয়ে যায়। যদিও হাসপাতাল চত্বরে অন্যত্র আর প্রতীক্ষালয়তৈরি হয়নি।
সমস্যার কথা স্বীকার করে জেলা হাসপাতাল সুপার গোপাল দাস বলেন, ‘‘প্রসূতি ও শিশুদের জন্য প্রতীক্ষালয়টিতে ন্যায্য মূল্যের ওষুধ দোকান হওয়ার পর থেকে এখনও বিকল্প ব্যবস্থা হয়নি। তবে বহির্বিভাগে থাকা সমস্ত অফিস ঘর স্থানান্তর করার প্রক্রিয়া চলছে। অফিসে ঘরগুলিকে প্রসূতি ও শিশুদের প্রতীক্ষালয় হিসেবে ব্যবহার হবে।’’