Tricks to stay safe

তারে বাঁধা পলিথিন, পথ এড়াচ্ছে হাতির দল

মিড ডে মিলের চালের টানে স্কুলেও হানা দিচ্ছে। জঙ্গল লাগোয়া এলাকায় স্কুলের শিক্ষকরাও আতঙ্কের মধ্যে আছেন।

Advertisement

রঞ্জন পাল

 ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০২৪ ০৯:২৪
Share:

হাতির হানা রুখতে তার দিয়ে পলিথিন বাঁধা হয়েছে। নিজস্ব চিত্র।

গত একমাসের মধ্যে হাতির হানায় চারজনের মৃত্যু হয়েছে ঝাড়গ্রাম জেলায়। এছাড়া প্রায় প্রতিদিনই জঙ্গলমহলের এই জেলার কোনও না কোনও জায়গায় বাড়ি ভাঙছে হাতির দল। হাতির আক্রমণ থেকে বাঁচতে ইদানীং অনেকে নিজেদের বাড়ির চারপাশে সরু তার বা দড়ি বেঁধে তাতে পলিথিন ঝুলিয়ে রাখছেন।

Advertisement

ঝাড়গ্রাম ডিভিশনের লোধাশুলি ও ঝাড়গ্রাম রেঞ্জের মানুষ হাতির তান্ডবে কার্যত অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছেন। আম, কাঁঠাল, লিচুর টানে এলাকা ছাড়তে চাইছে না হাতির দল। অনেক সময় খাবার না পেয়ে ঘর-বাড়ি ভাঙচুর করছে। মিড ডে মিলের চালের টানে স্কুলেও হানা দিচ্ছে। জঙ্গল লাগোয়া এলাকায় স্কুলের শিক্ষকরাও আতঙ্কের মধ্যে আছেন। এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতেই ঝাড়গ্রামের নেদাবহড়া, পিয়ালগেড়িয়া, পশরো, জারুলিয়া, কুন্ডলডিহি, পুকুরিয়া-সহ বিভিন্ন গ্রামে দেখা মিলছে নতুন কৌশলের।

গ্রামবাসীরা জানাচ্ছেন, বাড়ির চারপাশে তার অথবা সরু দড়ি লাগানো হচ্ছে। হাতির দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য সেই তার বা দড়ির মধ্যে পলিথিন লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ঘটনাচক্রে, তারপর থেকে ওই পথে আর হাতি আসছে না। অনেকে মনে করছেন, তারে ঝোলানো পলিথিন দেখে হাতি ভাবছে তাতে বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে। সেই ভয়েই তারের আশপাশে যাচ্ছে না। এর ফলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কিছুটা হলেও কমেছে। ঝাড়গ্রাম ব্লকের নেদাবহড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহ-শিক্ষক সুব্রত নায়েক বলেন, ‘‘গ্রামের লোকজনের কাছ থেকেই শুনে আমরাও স্কুলের চারপাশে তার দিয়ে পলিথিন ঝুলিয়েছি। আশপাশের গ্রামের অনেকেই এরকম করেছেন। এটা করার পর স্কুলে হাতি আসেনি। ক্ষয়ক্ষতিও হয়নি। হয়তো হাতি এটা দেখে ভয় পাচ্ছে। সেই জন্যই পাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে।’’

Advertisement

এই পদ্ধতিটা বন দফতরের কিছুটা ফেন্সিংয়ের মতনই। উল্লেখ্য, ঝাড়গ্রাম শহরের উপকন্ঠে গত বছর ব্যাটারি চালিত ফেন্সিং লাগায় বন দফতর। তবে তাতে সুবিধা তেমন কিছুই হয়নি। দুবরাজপুর থেকে শুরু করে কুটুমগেড়িয়া, উত্তর মুরাকাটি, বালিজুড়ি, কইমা, ফুলবেড়িয়া, ঘোড়াধরা হয়ে লালবাজারে পর্যন্ত ১২ কিমি ফেন্সিং থাকলেও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে (বিশেষত গাছের ডাল পড়ে) তার বেশিরভাগ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এছাড়া কন্যাডোবা ও শ্রীরামপুর শহরে হাতির হানা আটকাতে ৪ কিমি পরিখাও খনন জন্য করে বন দফতর। এক বন কর্মী বলেন, ‘‘হাতি যখন ফেন্সিং পার করার চেষ্টা করে তখন হালকা বিদ্যুতের ঝাঁকুনি খায়। যেটা তার মনে ভয় তৈরি করে। ফলে তারপর থেকে সে ওই জায়গা এড়িয়ে যায়।’’ অনেকে আবার ফসল বাঁচাতে জমিতে বিদ্যুতের তার দিয়ে ঘিরে রাখেন। সেটা অবশ্য বেআইনি। তাতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে অনেক সময় হাতির মৃত্যুও হয়েছে।

প্রাক্তন বন আধিকারিক সমীর মজুমদারের কথায়, ‘‘পলিথিন ঝুলিয়ে রাখার ঘটনা আগে শুনিনি। তবে বিদ্যুতের তারকে কিন্তু হাতি সেভাবে ভয় পায় না। পেলে বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে হাতির মৃত্যু হত না।’’ ঝাড়গ্রামের ডিএফও পঙ্কজ সূর্যবংশীর কথায়, ‘‘তার দিয়ে পলিথিন ঝুলিয়ে রাখলে হাতি আসবে না— এর বিজ্ঞানসম্মত কোনও ব্যাখ্যা নেই। তবে যাই হোক— তারে বিদ্যুতের সংযোগ কোনওমতেই দেওয়া যাবে না। ওটা বেআইনি। এতে যেমন হাতির বিপদ ঘটবে, তেমন মানুষেরও বিপদ
ঘটতে পারে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement