প্রস্তুতি: বাজারে নিয়ে যাওয়ার আগে মাঠ থেকে ফুলকপি তুলতে ব্যস্ত চাষিরা। দাসপুরের বাসুদেবপুরে। নিজস্ব চিত্র
শীত পড়ে গিয়েছে পুরোদমে। কিন্তু তার মধ্যেও স্বস্তি নেই কাঁচা আনাজের বাজারে। ব্যাগ হাতে বাজারে গিয়ে আলু ছাড়া অন্য কিছু প্রায় ছুঁয়ে দেখারই উপায় নেই!
কৃষকদের দাবি, চাহিদার তুলনায় জোগান কম। মূলত এ কারণেই চলতি মরসুমে শীতকালীন আনাজের দাম আকাশছোঁয়া।
কিন্তু ভরা শীতেও দামের এই অবস্থা কেন? পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা উদ্যানপালন দফতর সূত্রে খবর, এ বার মূলত আবহাওয়ার কারণেই এই পরিস্থিতি। চাষিরা সাধারণত গ্রীষ্মকালীন আনাজ তোলার পর বর্ষার আগে আগেই ফের আনাজ চাষ করেন। সেই ফলন শেষ হতে না হতেই জলদি জাতের শীতকালীন আনাজ চাষ শুরু হয়। কিন্তু এ বছর জুন-জুলাই মাসে নাগাড়ে বৃষ্টি চলায় আনাজ চাষে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছিলেন জেলার চাষিরা। এর পর সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি জলদি জাতের আনাজ চাষ করেও ফলন পাননি তাঁরা। সে সময়েও আকাশ ছিল মেঘলা, আনাজ চাষের অনুপযুক্ত। ফলে চারা পোঁতার পরেও রোগ-পোকায় নষ্ট হয়ে গিয়েছিল সে সব। জানা গিয়েছে, শীতের মরসুম শুরুতে নতুন উদ্যমে আনাজ চাষ হয়েছিল। তবে অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে পর পর বার চারেক নিম্নচাপ ও অকালবৃষ্টির ফলে বড়সড় লোকসান হয়। তারই প্রভাব পড়েছে স্বাভাবিক ফলনে। চাহিদার তুলনায় একেবারেই জোগান দিতে পারছেন না চাষিরা। ফলে দাম চলে গিয়েছে সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে।
বিশেষজ্ঞেরা জানান, সাধারণত ১৫ থেকে ২৫ ডিগ্রি তাপমাত্রায় ফলন ভাল হয়। জেলা উদ্যানপালন দফতরের আধিকারিক কুশদ্ধজ বাগ বলেন, “এ বার মাঝেমধ্যেই তাপমাত্রা ওঠানামা করছে। সে কারণে ফলনও কম হচ্ছে।” যদিও তাঁর বক্তব্য, আগামী সপ্তাহ থেকে জেলায় আনাজের দাম স্বাভাবিক হয়ে যাবে। কারণ এখন ফলন ভালই হচ্ছে। বাজারে এ বার টাটকা আনাজ আসা শুধু সময়ের অপেক্ষা বলেই মনে করছে কুশদ্ধজবাবু।
• বেগুন ২৫-৩০ • কাঁচালঙ্কা ৭০ • পালং শাক ২০ • সিম ৪০ • ফুলকপি ২৫ • বাঁধাকপি ২৫ • ধনেপাতা ৫০ • পেঁয়াজকলি ৮০ • টোম্যাটো ৩০-৩৫ • মটরশুঁটি ৬০
সূত্রের খবর, জেলার দাসপুর, চন্দ্রকোনা, গড়বেতা, সবং, পিংলা, ডেবরা-সহ গোটা দশেক ব্লকে আনাজ চাষ বেশি হয়। প্রতি বছরই জেলায় ২০ থেকে ২২ হাজার হেক্টর জমিতে আনাজ চাষ হয়। এ বার সেখানে চাষ হয়েছে সাকুল্যে ১২ হাজার হেক্টর। আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনাই তার কারণ। যদিও এখনও অনেক চাষি আনাজ চাষ করছেন। ফলে সেই পরিমাণ বাড়তে পারে।
বাজারে ঘুরে দেখা গিয়েছে, এখন মরসুমি সব ফসলের দামই বেশ চড়া। বেগুন, কাঁচালঙ্কা, পালং শাক, সিম, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ধনেপাতা, পেঁয়াজকলি, টোম্যাটো, মটরশুঁটিতে হাত দিলেই ‘ছ্যাঁক’ লাগছে, মন্তব্য বাসিন্দাদের। অন্যান্য বছরে এ সময় আনাজের যা দাম থাকে, বর্তমানে তার দ্বিগুণ দাম চলছে জেলার প্রায় সব বাজারেই।
অপেক্ষা এখন শুধুই দাম কমার।