মাটিতে পড়ে অক্সিজেন সিলিন্ডার। ঘাটাল হাসপাতালে। নিজস্ব চিত্র
ভয়ে সিঁটিয়ে রোগীরা। কাঠ দিয়ে জানলা, দরজার কাচ ভাঙছেন কয়েকজন। দুই চিকিৎসককে সামনে পেয়ে চলল বেধড়ক মারধর। এক নার্সের চুলের মুঠি ধরেও মারধর করা হল। কিশোরের মৃত্যুতে গাফিলতির অভিযোগ তুলে বুধবার এমনই তাণ্ডব চলল ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালে।
মৃতের পরিবারের অভিযোগ, ভর্তির পর দীর্ঘক্ষণ রোগীকে বিনা চিকিৎসায় ফেলে রাখা হয়েছিল। হাসপাতালের সুপার কুণাল মুখোপাধ্যায় বলেন, “চিকিৎসার গাফিলতি ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। গাফিলতির অভিযোগ প্রমাণ হলে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক এবং নার্সের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। হাসপাতালে ভাঙচুর এবং মারধরের ঘটনায় থানায় একটি মামলা করা হয়েছে।” মারধর এবং ভাঙচুরের অভিযোগে এ দিন রাত পর্যন্ত অবশ্য কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
এ দিন হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের এখানে-ওখানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে ভাঙা কাচ, অক্সিজেন সিলিন্ডার, স্যালাইনের বোতল। হাসপাতালে বসেছে পুলিশ পিকেট। পুরুষ বিভাগে চিকৎসাধীন এক রোগীর কথায়, “আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। চিৎকার শুনেই ঘুম ভেঙে যায়। দেখি কেউ কাঠ দিয়ে জানালা ভাঙছে। কেউ আবার দিদিদের মারধর করছে। আতঙ্কে আমরা সকলে আরও অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম।”
পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রের খবর, পেটের যন্ত্রণা নিয়ে এ দিন সকালে চন্দ্রকোনা থানার জাড়ার বাসিন্দা অন্তু সাঁতরা (১৪) ভর্তি হয়েছিল। দুপুর আড়াইটা নাগাদ তার মৃত্যু হয়। মৃতের আত্মীয়দের অভিযোগ, চিকিৎসার গাফিলতিতেই মৃত্যু হয়েছে অন্তুর। ভর্তির পর তাকে ফেলে রাখা হয়েছিল।
কোনও চিকিৎসকই তাকে দেখেননি বলে অভিযোগ। মাঝে মধ্যে শ্বাসকষ্টও হচ্ছিল। মৃতের পরিবারের অভিযোগ, কর্তব্যরত নার্সদের কাছে বারবার বিষয়টি জানালেও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা শুরু করেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। মৃতের এক আত্মীয় প্রসূন পান বলেন, “চিকিৎসার চরম গাফিলতিতেই অন্তুর মৃত্যু হয়েছে। আমরা সঠিক বিচার চাই।” হাসপাতাল সূত্রের খবর, এ দিন ক্ষীরপাই গ্রামীণ হাসপাতাল থেকে রেফার হয়ে এসেছিল অন্তু। সঙ্গে সঙ্গেই তার চিকিৎসা শুরু হয় বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি। ওষুধ, ইঞ্জেকশন, স্যালাইন সবই চলছিল। দুপুরে আচমকাই তার মৃত্যু হয়।
মৃত্যুর খবর চাউর হতেই রোগীর পরিজনেরা ঘাটাল হাসপাতালে ঢুকে ভাঙচুর শুরু করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, হাসপাতালের জরুরি বিভাগ-সহ রোগী কল্যাণ সমিতির ঘরগুলিতে ভাঙচুর চালান হয়। তখনও পুলিশ পৌঁছয়নি। উত্তেজিত রোগীর আত্মীয় এবং হাসপাতালে ভর্তি অন্য রোগীর আত্মীয়রা এক সময় পুরুষ বিভাগে ঢুকে পড়ে।
অসুস্থ রোগীদের সামনেই ভাঙচুর চলতে থাকে। পুরুষ বিভাগের একাধিক অক্সিজেন সিলিন্ডার ভেঙে তছনছ করা হয়। বিক্ষোভকারীদের তাণ্ডবে তখন ভয়ে স্যালাইনের গুদামে ঢুকে লুকিয়ে পড়েন চিকিৎসক-কর্তব্যরত নার্সরা। সামনে পেয়ে দুই চিকিৎসক তন্ময় মণ্ডল এবং হারাধন মণ্ডলকে বেধড়ক মারধর করা হয়। স্বাগতা চক্রবর্তী নামে এক নার্সকে চুলের মুঠিতে ধরে চলে মারধর। ঘটনার খবর পেয়েই হাসপাতালে পৌছয় পুলিশ। ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।