এ ভাবেই নদীখাত থেকে তোলা হয় বালি। ফাইল চিত্র।
বালি মাফিয়াদের একাংশের সঙ্গে বচসা হল একাংশ গ্রামবাসীর। হল মারামারিও। শুক্রবার মেদিনীপুর সদর ব্লকের রাজারবাগানে মাফিয়াদের হামলায় জখম হলেন দুই গ্রামবাসী। জখমদের মধ্যে একজনের আঘাত গুরুতর। তাঁকে ভর্তি করানো হয়েছে মেদিনীপুরের হাসপাতালে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, অবৈধ বালি কারবারের জন্য নদীর পাড় ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বাঁধও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ভারী বৃষ্টি হলে নদীতে জলস্তর বাড়বে। তখন জল ঢুকবে। গ্রামে বন্যা পরিস্থিতি দেখা দেবে। অবিলম্বে অবৈধ খাদানগুলি বন্ধ করা প্রয়োজন। অভিযোগ দীর্ঘদিনের, কেন ব্যবস্থা নেওয়া হয় না? জেলার এক ভূমি আধিকারিকের সাফাই, ‘‘এখন কড়া বিধিনিষেধ রয়েছে। তারমধ্যেই অবৈধ বালি খাদানগুলি গজিয়ে উঠেছে! বিষয়টি নজরে এসেছে। এ বার এ ব্যাপারে সব রকম আইনি পদক্ষেপ করা হবে।’’ স্থানীয়দের একাংশের অভিযোগ, ভূমি দফতরের একাংশ কর্মীর সঙ্গে বালি কারবারিদের একাংশের যোগসাজশ রয়েছে। শাসক দলের একাংশেরও যোগসাজশ রয়েছে। এ দিনের অশান্তির ঘটনা নিয়ে স্থানীয় বিধায়ক তথা জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান দীনেন রায় বলেন, ‘‘প্রশাসনকে বলেছি, বেপরোয়াভাবে বালি তোলার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। বালি মাফিয়াদের সঙ্গে দলের কারও যোগ নেই। দল এ সব অন্যায় কাজে প্রশ্রয় দেয় না।’’ পুলিশ জানিয়েছে, এলাকায় তল্লাশি- অভিযান চলছে। গোলমালে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলার বিভিন্ন এলাকায় অবৈধ বালি খাদান চলার অভিযোগ নতুন নয়। সদর ব্লকের রাজারবাগানেও কয়েকটি খাদান চলে। কংসাবতী নদীর পাড় সংলগ্ন এলাকায় বালি খাদান রয়েছে। নদীর উপরে বড় নৌকায় হাইড্রোলিক মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালি তুলে লরি বোঝাই করে পাচার করা হয়। গ্রামের মানুষ স্থানীয় প্রশাসনকে বিষয়টি জানিয়েছিলেন। এ নিয়ে দিন কয়েক ধরেই এলাকায় উত্তেজনা ছিল। এ দিন সকালে বচসায় জড়িয়ে পড়ে বালি মাফিয়াদের একাংশ এবং গ্রামবাসীদের একাংশ। বচসা থেকে মারামারি হয়েছে। স্থানীয়দের অনেকে জানাচ্ছেন, বালি মাফিয়ারাই চড়াও হয়েছিল। স্থানীয় একজনের কথায়, ‘‘অবৈধভাবে বালি তোলার সঙ্গে জড়িতদের ধরার দাবি জানাচ্ছিলাম আমরা। সেটাই ওদের রাগের কারণ।’’
অবৈধ বালি কারবারের কথা অজানা নয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও। জেলায় এসে একাধিক প্রশাসনিক বৈঠকে বেআইনি বালি খাদানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘‘প্রশাসনের একাংশের সঙ্গে যোগাযোগ করে কিছু লোক আর মাফিয়া এ সব করছে। সে যে- ই হোক, এ সব করা যাবে না। আমি যখন এসে বলি বন্ধ করতে, তখন বন্ধ হয়। পরে আবার চালু হয়। কেন?’’ এদিনের অশান্তি নিয়ে বিজেপির জেলা সহ- সভাপতি অরূপ দাস বলেন, ‘‘তৃণমূলের ঝান্ডাধারী মাফিয়ারাই তো এই বালি কারবার করছে। পুলিশ- প্রশাসন সব জানে। যেহেতু শাসক দলের লোকেরা কারবারে যুক্ত, তাই তারা চুপ।’’ জেলা তৃণমূলের এক নেতা বলেন, ‘‘যারা এ সব করে খাচ্ছে, তাদের পকেটে টাকা যাচ্ছে। দলের কোনও লাভ হচ্ছে না! ওদের বিরুদ্ধে পুলিশ- প্রশাসন ব্যবস্থা নিক। দল কাউকে আড়াল করার চেষ্টা করবে না!’’