প্রহৃত বাসচালক। নিজস্ব চিত্র
লোকসভা ভোটের কাজে নেওয়ার জন্য রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে তাতে নোটিস লাগাচ্ছিলেন জেলা পরিবহণ দফতরের কর্মীরা। কিন্তু নোটিস এড়াতে এক বাসচালক বাস নিয়ে দ্রুত চলে যাওয়ার চেষ্টা করায় তাঁকে মারধরের অভিযোগ উঠল পরিবহণ দফতরের এক কর্মীর বিরুদ্ধে। তমলুকের মিলননগর বাজারের কাছে হলদিয়া-মেচেদা ৪১ নম্বর জাতীয় সড়কে টোলপ্লাজায় এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার সকালে উত্তেজনা ছড়ায়।
আহত বাসচালক বছর তিরিশের গোপাল ঢলকে তমলুক জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁর ডান কানে আঘাত গুরুতর বলে হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে। বাসচালককে মারধরের প্রতিবাদ এবং পরিবহণ কর্মীদের জুলুমের প্রতিবাদে অন্য বাসের চালক ও কর্মীরা এবং স্থানীয় লোকজন জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বেলা ১১ টা পর্যন্ত অচল হয়ে পড়ে জাতীয় সড়ক। দিঘা ও কলকাতাগামী যানবাহন, হলদিয়া শিল্পাঞ্চলগামী পণ্যবাহী লরি, তেল-গ্যাস ট্যাঙ্কার-সহ প্রচুর গাড়ি যানজটে আটকে পড়ে। কয়েক হাজার মানুষ দুর্ভোগে পড়েন। পরে পুলিশ গিয়ে বিক্ষোভকারীদের বুঝিয়ে অবরোধ তোলে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ভোটের কাজে ব্যবহারের জন্য বাস-সহ বিভিন্ন গাড়ি নেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনের তরফে জেলা পরিবহণ দফতর থেকে নোটিস দেওয়া শুরু হয়েছে। এ দিন সকালে জেলা পরিবহণ দফতরের এক ইনস্পেক্টরের নেতৃত্বে দফতরের কর্মীরা তমলুকের সোনাপেতার কাছে টোলপ্লাজায় গাড়ি থামিয়ে তাতে নোটিস আটকে দিচ্ছিলেন। সে সময় হাওড়া থেকে দিঘাগামী একটি বেসরকারি বাসের চালককে পরিবহণ কর্মীরা হাত দেখিয়ে থামতে বলেন। কিন্তু চালক সেখানে বাস না থামিয়ে কিছুটা দূর এগিয়ে গিয়ে বাস থামান। এরপই পরিবহণ দফতরের এক কর্মী গিয়ে বাসের চালকের কেবিনের দরজা খুলে গাড়ির চাবি কেড়ে নেন বলে অভিযোগ। চালকের দাবি, তিনি তখন জানান যে ইতিমধ্যেই বাস নেওয়ার জন্য পরিবহণ দফতর থেকে ‘রিক্যুইজিশন’ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু হাত দেখালেও বাস না থামানোর জন্য ওই পরিবহণ কর্মী ক্ষিপ্ত বাসচালককে একাধিকবার চড় মারেন বলে অভিযোগ। মারের চোটে চালক গোপাল ঢল হয়ে অজ্ঞান হয়ে যান বলে সস্থানীয় লোকজন জানান। বাসের অন্য কর্মী ও যাত্রীরা তাঁকে টোলপ্লাজার কাছে থাকা জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের অ্যাম্বুল্যান্সে করে তমলুক জেলা হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করান।
গোপালবাবু বলেন, ‘‘পরিবহণ দফতরের এক কর্মী হাত দেখিয়ে বাস থামাতে বলায় কিছুটা এগিয়ে গিয়ে বাস থামাই। ওই কর্মী এসে আমার ডান কানে পাঁচবার চড় মারেন। তারপর আর কিছু মনে নেই।’’ পূর্ব মেদিনীপুর ডিস্ট্রিক্ট বাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সুকুমার বেরা বলেন, ‘‘ভোটের জন্য ওই বাস নিতে আগেই রিক্যুইজিশন দেওয়া হয়েছে। পরিবহণ দফতরের ওই কর্মীকে তা জানানোর পরেও চালককে মারধর করা হয়েছে। এবিষয়ে দফতরের আধিকারিকের কাছে অভিযোগ জানানো হয়েছে।’’
জেলা পরিবহণ আধিকারিক সজল অধিকারী বলেন, ‘‘অভিযোগ খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।’’