দিঘার সমুদ্র সৈকতে পর্যটক। —নিজস্ব চিত্র।
সামান্য খরচে এ বার দিঘায় প্রমোদতরীতে সফর করতে পারবেন পর্যটকেরা। পিপিপি মডেলে এই প্রমোদতরী চালাবে দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদ। নতুন বছর শুরুর আগে সৈকতশহর দিঘায় বিনোদন তথা পর্যটকদের নয়া আকর্ষণ হতে চলেছে এই প্রমোদতরী— মনে করছেন অনেকেই।
মাস ঘুরলেই পর্যটনের ভরা মরসুম শুরু হয়ে যাবে সৈকতশহরে। তার আগে পর্যটকদের মনোরঞ্জনের জন্য প্রমোদতরী চেপে সমুদ্র যাত্রার বন্দোবস্ত করতে তৎপর দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদ। প্রমোদতরীর সাজসজ্জা দ্রুত শেষ করার নির্দেশ দিয়েছে ডিএসডিএ কর্তৃপক্ষ। রবিবার দুপুরে চলে প্রমোদতরীর দ্বিতীয় বারের ‘ট্রায়াল’। ন্যায়কালী মন্দির সংলগ্ন জেটি থেকে নদীপথে শঙ্করপুর বন্দর এবং দিঘা মোহনা পর্যন্ত এই ট্রায়াল চলে। নদীপথে কতটা সুরক্ষিত নতুন এই জলযান, তা খতিয়ে দেখেন প্রশাসনিক আধিকারিকেরা। প্রায় দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ জলপথে চলে ট্রায়াল।
প্রমোদতরী থেকে নেমে স্থানীয় পদিমা-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান তথা ন্যায়কালী মন্দির পরিচালন কমিটির অন্যতম কর্মকর্তা সুজিত কর বলছেন, ‘‘দীর্ঘ এক বছর ধরে জলযানটি পড়ে রয়েছে। প্রশাসনিক উদ্যোগে খুব খুশি। আশা করছি দ্রুত চালু হবে। সমুদ্রবক্ষে প্রমোদতরী চেপে ভ্রমণের আনন্দ সুন্দরবনের থেকেও সুখকর।’’ ইতিপূর্বে কলকাতায় গঙ্গাবক্ষে প্রমোদতরী ভেসেছে। তবে সমুদ্রবক্ষে এ ধরনের জলযান রাজ্যের মধ্যে প্রথম চালু হতে চলেছে দিঘায়। ‘এমভি নিবেদিতা’ নামে একটি প্রমোদতরী কয়েক মাস আগে এসে পৌঁছেছে দিঘায়। রাজ্য পরিবহণ দফতরের পক্ষ থেকে অত্যাধুনিক এই জলযানটিকে তুলে দেওয়া হয়েছে দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের হাতে। আগে অবশ্য এ ধরনের জলযানটি শিল্প আর বন্দর শহর হলদিয়াতে চালানোর জন্য পাঠানো হয়েছিল। যদিও সেখানে পর্যটকদের চাহিদা ছিল না।
সম্প্রতি ওই জলযানটি হলদিয়া উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ হস্তান্তর করেছে ডিএসডিএ কর্তৃপক্ষের হাতে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গিয়েছে, পুজোর মরসুমে চালানোর কথা প্রাথমিক ভাবে পরিকল্পনা করা হয়েছিল। যদিও জলযানটির সাজসজ্জার কাজ অনেকটাই বাকি। তা ছাড়া, জেটি এবং জলযানে ওঠানামার রাস্তা নির্মাণের কাজ বাকি রয়েছে। পিপিপি মডেলে এই পরিষেবা চালানো হবে। তার জন্য একটি ঠিকাদার সংস্থাকে নিয়োগ করা হয়েছে।
ডিএসডি’এ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রমোদতরী চালানোর দায়িত্ব কাদের দেওয়া হবে তার জন্য একটি টেন্ডার ডাকা হয়েছিল। ক্রুজ চালানোর দক্ষতা রয়েছে এমন বেশ কয়েকটি সংস্থা তারা টেন্ডার জমা দেয়। কাগজপত্র খতিয়ে দেখার পর প্রমোদতরী চালানোর জন্য একটি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদার সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, জলযানটির উপরে কলকাতার বিশ্ব বাংলার গেটের আদলে অবয়ব তৈরি করা হচ্ছে। বসানো হয়েছে অত্যাধুনিক সাউন্ড এবং লাইট সিস্টেম। সেখানে বসবে নাচ-গানের আসর। থাকছে খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা। যদিও এখন পর্যন্ত প্রমোদতরী কী ভাবে চলবে এবং কত ভাড়া নেওয়া হবে পর্যটকদের কাছে তা চূড়ান্ত করা হয়নি বলে প্রশাসন সূত্রের খবর। দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, বিশালাকার প্রমোদতরীতে সর্বাধিক ৮০ জন পর্যটক একসঙ্গে থাকতে পারবেন। আপাতত ওল্ড দিঘার কাছে চম্পাই খালের উপরে চলবে এই প্রমোদতরী।
রেস্তরাঁর পাশাপাশি থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ব্যবস্থাও। বাউল থেকে আধুনিক গান— সবই পরিবেশিত হবে।
এ বিষয়ে দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের কার্যনির্বাহী আধিকারিক সৈকত হালদার বলছেন, ‘‘শুধু চম্পাই খালের উপর বত্রিশবাটিয়া পর্যন্ত চলবে প্রমোদতরী। ঠিকাদার সংস্থার নাম চূড়ান্ত হয়েছে। এখনও কিছু কাজ বাকি রয়েছে। তারপর পুনরায় ট্রায়াল রান চলবে।’’