প্রতীকী ছবি
মেধা তালিকায় নাম না উঠলে তৃণমূল ছাত্র সংসদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন— সোশ্যাল মিডিয়ায় এমনই বার্তা দিয়েছেন কেশপুর কলেজের একাংশ তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি) নেতা। আর তাতেই বেধেছে বিতর্ক। বিরোধীদের দাবি, ভর্তিতে যে দুর্নীতি হবে, এই ‘পোস্ট’ থেকেই তা স্পষ্ট। টিএমসিপি পরিচালিত কেশপুর কলেজের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক শেখ সানাউল্লা অবশ্য ওই দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর মতে, “পরামর্শের ভুল ব্যাখ্যা হচ্ছে। আমরা সহায়তার জন্যই যোগাযোগ করতে বলেছি। এখানে অন্য কারণ নেই।”
আজ, সোমবার থেকে কেশপুর কলেজে ভর্তি শুরু হবে। ইতিমধ্যে মেধা তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। নিয়মমতো সেই তালিকা ধরে কাউন্সেলিং হওয়ার কথা। তবে মেধা তালিকার বাইরে গিয়ে কলেজগুলোয় ছাত্র ভর্তির অভিযোগ ওঠে প্রতি বছরই। কেশপুর কলেজেও আগে এমন অভিযোগ উঠেছে। ছাত্র ভর্তিতে তৃণমূলের সুপারিশ ঘিরে বিতর্ক বেধেছে। ফলে, সোশ্যাল মিডিয়ায় ওই পোস্ট সামনে আসতেই সরব হয়েছে ছাত্র সংগঠনগুলি। এসএফআইয়ের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি সৌমিত্র ঘোড়ই বলেন, ‘‘এখন আর মেধার কোনও মূল্য থাকছে না। এ ক্ষেত্রেও তৃণমূল হস্তক্ষেপ করছে।” ডিএসওর জেলা সভাপতি দীপক পাত্রের কথায়, “ভর্তি প্রক্রিয়ায় আর স্বচ্ছতা থাকছে না। কলেজ-প্রশাসনও তৃণমূলকে সব রকম সহায়তা করছে।”
কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে ছাত্র সংসদের কোনও ভূমিকা থাকবে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। কলেজগুলোয় অতিরিক্ত পড়ুয়া ভর্তি নিয়ে খুবই বিরক্ত শিক্ষামন্ত্রী। এমনকী এ ক্ষেত্রে আর্থিক লেনদেনের সম্ভাবনার কথাও স্বীকার করেছেন তিনি। শিক্ষামন্ত্রীর স্পষ্ট বার্তা, ছাত্র সংসদের কাজ ভর্তির সময়ে কলেজ কর্তৃপক্ষকে সাহায্য করা। ভর্তির তালিকা তৈরি করা ছাত্র সংসদের কাজ নয়।
টিএমসিপির রাজ্য সভানেত্রী জয়া দত্তও নির্দেশ দিয়েছেন, ভর্তি প্রক্রিয়া চলাকালীন হেল্প-ডেস্ক চালু করে সংগঠনের ব্যানার না লাগানো যাবে না, নেতাদের ফোন নম্বরও প্রকাশ্যে দেওয়া যা বে না। এই পরিস্থিতিতে অনেক কলেজের টিএমসিপি ইউনিট কিংবা টিএমসিপি পরিচালিত ছাত্র সংসদ ভর্তি প্রক্রিয়া থেকে নিজেদের দূরে রাখছে। যেমন, কলকাতার আশুতোষ কলেজের টিএমসিপির ছাত্র সংসদ রীতিমতো ফ্লেক্স টাঙিয়ে বার্তা দিয়েছে, ভর্তি সংক্রান্ত বিষয়ে অচেনা, অজানা মানুষের দ্বারা বিভ্রান্ত না হয়ে সরাসরি কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
তবে ঝাড়গ্রাম রাজ কলেজে টিএমসিপি কলেজে ভর্তির জন্য আবেদনকারীদের পরামর্শ দিতে সংগঠনের নেতাদের ফোন নম্বর দেওয়া পোস্টার সাঁটিয়ে ইতিমধ্যে বিতর্ক বাধিয়েছে। সেই তালিকায় এ বার নাম জুড়ল কেশপুর কলেজেরও।
কিন্তু দল ও সংগঠনের নির্দেশের বাইরে গিয়ে কেন সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে? কেশপুরের এক টিএমসিপি নেতার জবাব, “যাঁরা আবেদনের ফি জমা দিয়েছেন অথচ তালিকায় নাম নেই, তাঁদের টাকা জমা দেওয়ার রসিদ নিয়ে কলেজ অফিসে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ছাত্র সংসদে জানালেও সংসদ সহায়তা করবে। এতে অন্যায়ের কী আছে?’’ আবেদনকারীরা ছাত্র সংসদে এলে তাঁদের কাছ থেকে আবেদনপত্র এবং টাকা জমার রসিদের প্রতিলিপি জমা নেওয়া হচ্ছে।
তবে কেশপুরের ঘটনায় ক্ষুব্ধ জেলা তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতি বলেন, “ছাত্র সংসদ কিংবা ইউনিট এমন পরামর্শ কেন দেবে? এটা একেবারেই অনুচিত। খোঁজখবর নিচ্ছি। নির্দেশ না- মানলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ টিএমসিপির জেলা সভানেত্রী দেবলীনা নন্দীরও বক্তব্য, “শিক্ষামন্ত্রীর কথামতো আমরাও চাই, ভর্তি হোক মেধার ভিত্তিতে। তাতে ছাত্র সংসদ কোনও হস্তক্ষেপ করবে না।”