Mamata Banerjee

প্রার্থী মমতা, উজ্জীবিত তৃণমূল

তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে নন্দীগ্রাম পরিচিত হলেও সম্প্রতি দল ছেড়ে শুভেন্দু বিজেপিতে যাওয়ায় তাঁর অনুগামী দলের নেতা-কর্মীদের একাংশও এখন বিজেপি শিবিরে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

তমলুক শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০২১ ০৪:৪৬
Share:

নন্দীগ্রামের কেন্দেমারিতে মমতার নামে দেওয়াল লিখন। নিজস্ব চিত্র

পাঁচ বছর আগে নন্দীগ্রামের তেখালিতে প্রশাসনিক সভার মঞ্চে দাঁড়িয়েই শুভেন্দু অধিকারীকে বিধানসভা নির্বাচনে নন্দীগ্রামে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নন্দীগ্রামে জেতার পরে শুভেন্দুকে মন্ত্রিসভায় ঠাঁই দিয়েছিলেন। দল ও মন্ত্রিত্ব ছেড়ে শুভেন্দু এখন বিজেপিতে। তারপর সোমবার নন্দীগ্রামে তেখালির জনসভার মঞ্চ থেকে আসন্ন বিধানসভা ভোটে কলকাতার ভবানীপুর ছাড়াও নন্দীগ্রাম বিধানসভায় প্রার্থী হওয়ার কথা জানিয়েছেন মমতা। শুভেন্দুর তালুকে মমতার প্রার্থী হওয়ার ঘোষণায় রাজনৈতিক মহলে যেমন আলোড়ন পড়েছে, তেমনই নন্দীগ্রামের তৃণমূল শিবিরও উজ্জীবিত।

Advertisement

দলীয় ও স্থানীয় সূত্রের খবর, তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে নন্দীগ্রাম পরিচিত হলেও সম্প্রতি দল ছেড়ে শুভেন্দু বিজেপিতে যাওয়ায় তাঁর অনুগামী দলের নেতা-কর্মীদের একাংশও এখন বিজেপি শিবিরে। সঙ্গে রয়েছে তৃণমূলের স্থানীয় নেতাদের মধ্যে কোন্দল কাঁটা। এই পরিস্থিতিতে মমতা নন্দীগ্রামে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণায় শাসক শিবিরের স্থানীয় নেতারা এবার ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করতে নামবে বলে মনে করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে নন্দীগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তৃণমূলের প্রার্থী হিসেবে দেওয়াল লিখনও শুরু হয়েছে।

মঙ্গলবারই নন্দীগ্রাম-১ ব্লকের তৃণমূল নেতৃত্ব দলের প্রচার কর্মসূচি নিয়ে বৈঠক করেছে। নন্দীগ্রামে শুভেন্দুর বিরোধী শিবিরের নেতা হিসেবে পরিচিত শেখ সুফিয়ানের সঙ্গে শুভেন্দু ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত তৃণমূল নেতা আবু তাহেরের ঠাণ্ডা লড়াই রয়েছে। তবে শুভেন্দু বিজেপিতে যোগ দিলেও আবু তাহের তৃণমূল ছাড়েননি। নন্দীগ্রামে খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা প্রার্থী হওয়ার ঘোষণার পর নন্দীগ্রামের এই দুই নেতাই ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করার কথা জানিয়েছেন।

Advertisement

তবে মমতা নন্দীগ্রামে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণার পর চ্যালেঞ্জ ছুড়ে শুভেন্দু জানিয়েছেন, নন্দীগ্রামে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আধ লক্ষ ভোটে হারাবেন। না হলে রাজনীতি ছেড়ে দেবেন। নন্দীগ্রাম নিয়ে তৃণমূল নেত্রী ও শুভেন্দুর এমন ঘোষণার পরে নন্দীগ্রাম নিয়ে হিসেব নিকেশ শুরু করেছে দুই শিবিরই। ২০০৭ সালে জমি রক্ষার আন্দোলনের সময় থেকে তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি হয়ে উঠেছিল নন্দীগ্রাম। ২০১১ সালে রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদলের পরে লোকসভা, বিধানসভা ও পঞ্চায়েত নির্বাচনে নন্দীগ্রামে বিপুল ব্যবধানে জেতে তৃণমূল। ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে শুভেন্দু পেয়েছিলেন ১ লক্ষ ৩৪ হাজার ৬২৩ ভোট। প্রতিদ্বন্দ্বী সিপিআইয়ের আবদুল শেখ পেয়েছিলেন ৫৩ হাজার ৩৯৩ ভোট। বিজেপি পেয়েছিল ১০ হাজার ৭১৩ ভোট। ২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে তমলুক লোকসভা কেন্দ্রের উপ-নির্বাচনে শুভেন্দুর ভাই দিব্যেন্দু অধিকারী নন্দীগ্রাম বিধানসভা এলাকায় পেয়েছিলেন ১ লক্ষ ৬০ হাজার ৯১৮ ভোট। বিজেপি প্রার্থী অম্বুজ মহান্তি পেয়েছিলেন ২১ হাজার ১৪৭ ভোট। সিপিএম প্রার্থী মন্দিরা পন্ডা পান ১৩ হাজার ৬০৮ ভোট। ২০১৯-এর লোকসভা ভোটেও তৃণমূল প্রার্থী দিব্যেন্দু অধিকারী বিজেপি প্রার্থী সিদ্ধার্থ নস্করের চেয়ে নন্দীগ্রাম বিধানসভায় এগিয়ে ছিলেন প্রায় ৬৮ হাজার ৪০০ ভোটে। তাই নন্দীগ্রামে মমতা প্রার্থী হওয়ার পরে তাঁকে হারানোর চ্যালেঞ্জ ছোঁড়া নিয়ে শেখ সুফিয়ান মঙ্গলবার বলেন, ‘‘নন্দীগ্রামের মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাথেই আছেন। সোমবার তেখালির জনসভা তার প্রমাণ দিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী হওয়ায় দলের কর্মী-সমর্থকরাও উজ্জীবিত। আমরা মুখ্যমন্ত্রীকে বিপুল ভোটে জেতাব।’’ আবু তাহের বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী নন্দীগ্রামে প্রার্থী হওয়ায় আমরা খুশি। আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করে মুখ্যমন্ত্রীকে জেতাব।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement