প্রতীকী ছবি।
সাত বছরের নাবালিকাকে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ উঠল।
কাঁথি-১ ব্লকে নয়াপুট পঞ্চায়েতের পুরুষোত্তমপুর গ্রামে ওই ঘটনায় অভিযোগের আঙুল উঠেছে শাসকদলের এক নেতার ছেলের বিরুদ্ধে। এমনকী সালিশি সভা ডেকে বিষয়টি মিটিয়ে নিতে ওই নাবালিকার পরিবারকে চাপ দেওয়া হচ্ছিল বলেও অভিযোগ উঠেছে। রবিবার বিকেলের ওই ঘটনায় নাবালিকার পরিবারের তরফে সোমবার কাঁথি মহিলা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়। তাপস ভুঁইয়া নামে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃতের বাড়ি আমোদপুর বলে পুলিশ জানিয়েছে।
নাবালিকার বাবা পেশায় রাজমিস্ত্রি। তিনি জানান, গত ২২ সেপ্টেম্বর বাড়ির কাছে একটি মন্দিরে খেলতে গিয়েছিল মেয়ে। মন্দিরের পাশে একটি ঘরে তাপস মেয়েকে ডেকে নিয়ে যায়। এরপর সে তাকে যৌন নিগ্রহ করে। মেয়ে কোনও রকমে তার হাত থেকে পালিয়ে বাড়িতে চলে আসে। তারপর মাকে সব জানায়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযুক্ত তাপস এবং তার বাবা কুশকান্ত এলাকায় তৃণমূল কর্মী ও নেতা হিসেবে পরিচিত। ঘটনা জানাজানি হলে বিষয়টি মিটমাট করে নেওয়ার জন্য শাসক দলের স্থানীয় নেতারা নাবালিকার পরিবারকে চাপ দেয় বলে অভিযোগ। এমনকী স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যার স্বামী তথা তৃণমূল নেতা অরুণ জানার উপস্থিতিতে সালিশি সভাও হয়। সভায় তাঁদের ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে মীমাংসার প্রস্তাব দেওয়া হয় বলে নাবালিকার বাবার অভিযোগ। কিন্তু তিনি তাতে রাজি হননি। সোমবার কাঁথি মহিলা থানায় তাপসের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জানান নাবালিকার পরিবার। অভিযোগ পেয়ে সেদিনই ওই যুবককে গ্রেফতার করে পুলিশ। মঙ্গলবার নাবালিকার স্বাস্থ্য পরীক্ষার পাশাপাশি তার গোপন জবানবন্দি নেন কাঁথি মহকুমা আদালতের বিচারক। অভিযুক্তকে মঙ্গলবার কাঁথি মহকুমা আদালতে তোলা হলে ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক।
সম্প্রতি বার বার নাবালিকা নির্যাতনের ঘটনায় উদ্বেগ ছড়িয়েছে অভিভাবকদের মধ্যে। এ নিয়ে আরও কড়া পুলিশ ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। প্রসঙ্গত, এই ধরনের অসামাজিক ঘটনায় গ্রামের মাতব্বরদের উপস্থিতিতে সালিশি সভা বসিয়ে মীমাংসার প্রস্তাব দেওয়ার ঘটনাকে ঘিরেও ক্ষোভ ছড়াচ্ছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অভিযোগের আঙুল উঠছে শাসক দলের নেতারল বিরুদ্ধে। কেন ওই সব মাতব্বরদের বিরুদ্ধে প্রশাসন কড়া পদক্ষেপ করছে না তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
কাঁথির এসডিপিও অভিষেক চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ওই নাবালিকার পরিবার থেকে একটি লিখিত অভিযোগ এসেছে। তার ভিত্তিতে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যদিও সালিশি সভা নিয়ে কিছু জানানো হয়নি। তবে আমরা তদন্ত করছি।’’
এ ব্যাপারে স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য অনুরাধা জানার প্রতিক্রিয়া জানার জন্য ফোন করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। তৃণমূল নেতার সালিশি সভায় উপস্থিত থাকার অভিযোগ প্রসঙ্গে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ও যুব তৃণমূল নেতা প্রদীপ গায়েনের দাবি, ‘‘ওই গ্রামে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে কিনা জানা নেই। তা ছাড়া সালিশি সভার বিষয়টিও আমার অজানা। দলীয়ভাবে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।’’
বিজেপির জেলা সভাপতি (কাঁথি) অনুপ চক্রবর্তীর অভিযোগ, ‘‘স্থানীয় এক তৃণমূল নেতার ছেলের বিরুদ্ধে নাবালিকাকে যৌন নিগ্রহ করার অভিযোগকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছিল। আমরা বিষয়টি নিয়ে পুলিশের সঙ্গে কথা বলছি। পাশাপাশি ওই নাবালিকার পরিবারের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে সেখানকার নেতৃত্বের সঙ্গেও যোগাযোগ রেখেছি।’’
যদিও এই ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই বলে দাবি শাসক দলের। স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান অসিত গিরি বলেন, ‘‘এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। বরং ঘটনা জানার পর আমরা ওই নাবালিকার পরিবারের সঙ্গে দেখা করে পাশে থাকার বার্তা দিয়েছি।’’