West Bengal Panchayat Election 2023

তৃণমূলের ‘ধীরে চলো’ কি গোঁজ এড়ানোর কৌশল

তৃণমূলের নব জোয়ার কর্মসূচিতে প্রার্থী বাছাইয়ে ভোটাভুটি হয়েছে। সেখানেই প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার কথা।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০২৩ ০৯:৫৯
Share:

দেওয়াল দখল হলেও এখনও লেখা হয়নি তৃণমূল প্রার্থীর নাম। মেদিনীপুর গ্রামীণে (বাঁ দিকে)। ঘাটালের রানিরবাজারে পুলিশের রুট মার্চ। নিজস্ব চিত্র

পঞ্চায়েত নির্বাচনের মনোনয়ন পর্বের প্রথম দিকে বাম-বিজেপির তৎপরতা দেখা গেলেও উল্টো ছবি তৃণমূলের শিবিরে। কিন্তু কেন এই ধীরে চলো নীতি?

Advertisement

তৃণমূলের অন্দরে খোঁজ নিয়ে জানা যাচ্ছে, দলের দ্বন্দ্বের যে চোরাস্রোত বইছে, সেখানে পছন্দের প্রার্থী না হলে, গোঁজের মনোনয়ন অবশ্যম্ভাবী। সেই কাঁটা সরাতেই প্রায় অন্তিম লগ্নে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমার কৌশল নিচ্ছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম দুই জেলাতেই এটাই তৃণমূলের প্রাথমিক রণ ল। ঝাড়গ্রামে অবশ্য দলের প্রার্থী তালিকা ঘোষণার আগেই পঞ্চায়েত সমিতিতে একজন তৃণমূল নেতা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। তা নিয়ে দলের অন্দরে শুরু হয়েছে গুঞ্জন।

তৃণমূলের নব জোয়ার কর্মসূচিতে প্রার্থী বাছাইয়ে ভোটাভুটি হয়েছে। সেখানেই প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার কথা। তাও কেন দেরি? জানা গিয়েছে, প্রথমে কর্মীদের ধোঁয়াশায় রাখার কৌশল নেওয়া হচ্ছে যাতে তাঁরাও না জানতে পারেন কে, কোন আসনে প্রার্থী হচ্ছেন। তাতে ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হওয়ার সম্ভাবনা কমবে। পরে যখন জানবেন, তখন ক্ষোভ বাড়লেও মনোনয়ন দাখিলের সময় যাতে একেবারেই না থাকে, তাই দেরি করা হচ্ছে। তা ছাড়া ততদিনে বিরোধীদের প্রার্থী তালিকাও দেখে নেওয়া যাবে।

Advertisement

জেলা তৃণমূলের এক প্রবীণ নেতার আক্ষেপ, "কে কোথায় প্রার্থী হবে তা এখনও ধোঁয়াশায়। সিপিএম-বিজেপি মনোনয়ন দিচ্ছে, আমরা শাসকদল হয়েও প্রার্থীর নাম দেওয়ালে লিখতে পারছি না।"

তৃণমূল সূত্রে খবর, পশ্চিম মেদিনীপুরে এখনও প্রার্থী তালিকা এসে পৌঁছয়নি। তালিকা আসবে রাজ্য নেতৃত্বের কাছ থেকে। ২০১৮-এর ভোটেও বিক্ষুব্ধ নির্দল-কাঁটা বিঁধেছিল ঘাসফুলে। পঞ্চায়েত সমিতির ৬১১টি আসনের মধ্যে ১৫টিতে আর গ্রাম পঞ্চায়েতের ৩,০৪০টি আসনের মধ্যে ১৫৮টি আসনে জিতেছিলেন নির্দলেরা। অনেক আসনে গোঁজ প্রার্থীর জন্য ভোট কাটাকুটিতে হারতে হয়েছিল তৃণমূলকে। দলের জনসংযোগ যাত্রায় পশ্চিম মেদিনীপুরে এসে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট করে দিয়েছেন, দলের কেউ প্রতীক না পেয়ে নির্দল হয়ে দাঁড়ালে এবং জিতলে, তাঁকে আজীবন নির্দল হয়েই থাকতে হবে। তৃণমূলে ফেরার রাস্তা তাঁর জন্য বন্ধই থাকবে।সেই বার্তাও মাথায় রাখছেন জেলা নেতৃত্ব। দলের মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি সুজয় হাজরা বলছেন, "রাজ্য নেতৃত্ব তালিকা জেলায় পাঠিয়ে দেবেন।"

কোন্দলে জেরবার তৃণমূলের ঘাটাল সাংগঠনিক জেলাও। চন্দ্রকোনা, ঘাটাল, দাসপুর সর্বত্র গোষ্ঠীকোন্দল চরমে। ঘাটালে এসে অভিষেকও তা টের পেয়েছেন। ফলে, টিকিট না পেলে ঘাটাল, চন্দ্রকোনাতেও একাধিক 'গোঁজ' প্রার্থীর সম্ভাবনা রয়েছে। তা ঠেকাতে ভোট ঘোষণার পরেই দফায় দফায় বৈঠক হচ্ছে। অভিষেকের অফিস থেকেও চলছে খোঁজখবর। তৃণমূলের ঘাটাল সাংগঠনিক জেলার সভাপতি আশিস হুতাইত অবশ্য বলেন, "কোনও দেরি হচ্ছে না। সোমবার থেকেই মনোনয়ন জমা দেওয়া হবে।"

গোঁজ এড়াতেই কি এই দেরির কৌশল? সদুত্তর এড়িয়ে তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক প্রদ্যোত ঘোষ বলেন, "প্রার্থী চূড়ান্ত করবেন রাজ্য নেতৃত্ব। শীঘ্রই তালিকা জেলায় পৌঁঁছবে।"

ঝাড়গ্রাম জেলাতেও 'গোঁজ' শঙ্কায় কৌশলী তৃণমূলের ব্যাখ্যাই সামনে আসছে। তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা ঘোষণার আগেই নয়াগ্রাম পঞ্চায়েত সমিতির একটি আসনে শুক্রবার মনোনয়ন দাখিল করেছেন মলম অঞ্চল তৃণমূলের সভাপতি বঙ্কিম ভক্তা। সূত্রের খবর, এর পিছনে রয়েছে শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। জেলা তৃণমূলের এক প্রাক্তন কো-অর্ডিনেটরের সঙ্গে বর্তমান ঝাড়গ্রাম জেলা সভাপতি দুলাল মুর্মুর সম্পর্ক বড়ই শীতল। বঙ্কিম ওই প্রাক্তন কো-অর্ডিনেটরের অনুগামী। দুলাল বলছেন, ‘‘বঙ্কিমবাবু দলের সঙ্গে আলোচনা না করে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। উনি দলের প্রতীক পাবেন কি না সেটা বলতে পারছি না। কারণ চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা অনুমোদন করবেন শীর্ষ নেতৃত্ব।’’ তবে বঙ্কিমের বক্তব্য, ‘‘আমার নাম কলকাতায় পাঠানো হয়েছে বলে শুনেছি। বিশেষ কাজে দিল্লি যাচ্ছি। তাই আগেই মনোনয়ন দিয়েছি।’’

জেলা তৃণমূলের এক প্রবীণ নেতা মানছেন, ‘‘প্রার্থী প্রত্যাশীর তালিকা দীর্ঘ। সবাইকে সন্তুষ্ট করা সম্ভব নয়। তাই বুঝে শুনেই পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’’

( তথ্য: পশঙ্কর ভট্টচার্য, কিংশুক গুপ্ত, অভিজিৎ চক্রবর্তী ও বরুণ দে)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement