কেশিয়াড়িতে তৃণমূলের মিছিলে উধাও সামাজিক দূরত্ব। নিজস্ব চিত্র
একুশে জুলাইয়ের ভার্চুয়াল সভা মঞ্চ থেকে দুই জেলার জন্য রাজনৈতিক বার্তা এক লাইন। তৃণমূল নেত্রী মঙ্গলবার অভিযোগ করলেন, জঙ্গলমহলে ফের অশান্তি তৈরির চেষ্টা হচ্ছে। স্বভাবতই নিশানায় বিজেপি। নেত্রীর কথাকে আশ্রয় করে জঙ্গলমহলের তৃণমূল নেতৃত্ব গেরুয়াকে নিশানা করল। এল প্রত্যুত্তরও।
করোনা কালে বাধ্য হয়ে একুশের সভাও যে ভার্চুয়াল করতে হচ্ছে, সে আক্ষেপ শোনা গিয়েছে নেত্রীর মুখে। তবে ভার্চুয়াল সভা ঘিরেও কয়েকটি জায়গায় যা ঘটল তাতে বিরোধীদের প্রশ্ন— আদৌ কি সভা ভার্চুয়াল থাকল!
কেশিয়াড়িতে করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন বিডিও। আক্রান্ত উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের স্বাস্থ্য আধিকারিকও। সেই কেশিয়াড়িতেই এ দিন হাজার দুয়েক তৃণমূল কর্মী-সমর্থকের মিছিল বেরোয়। মূল উদ্যোক্তা খড়্গপুর মহকুমা কিসান ও খেতমজুর সংগঠনের সভাপতি তথা তৃণমূল নেতৃত্ব ফটিকরঞ্জন পাহাড়ি। তৃণমূল সূত্রের খবর, কিছুদিন অন্তরালে থাকার পর সম্প্রতি তাঁকে দলীয় কর্মসূচিতে দেখা যাচ্ছে। কর্মীদের উৎসাহ দিতে মিছিলে হেঁটেছেন জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ মামনি মান্ডিও। স্থানীয় সূত্রের খবর, মিছিলে মানা হয়নি দূরত্ব বিধি, অনেকের মুখে ছিল না মাস্ক। ছোট গাড়িতে গাদাগাদি করে শিশু-সহ অনেকে যোগ দিয়েছেন। একই ভাবে ফিরেও গিয়েছেন। ফটিক বলছেন, ‘‘নিয়ম মেনেই মিছিল হয়েছে।’’
দুপুর সওয়া দু’টো। শাসক দলের পতাকা উত্তোলনে শামিল তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। হাজির কয়েকজন খুদেও। নেই ন্যূনতম সামাজিক দূরত্বও। ছবিটা মেদিনীপুর গ্রামীণের চাঁদড়ার এক এলাকার। স্থানীয় তৃণমূল নেতা নয়ন দে- র মন্তব্য, ‘‘পতাকা উত্তোলন হচ্ছে দেখে উৎসাহী কয়েকজন ছেলেমেয়ে চলে এসেছিল। পরে ওদের বাড়ি পাঠানো হয়েছে।’’
এ দিন পশ্চিম মেদিনীপুরের কোথাও তৃণমূলের মিছিল বেরিয়েছে, কোথাও বড় পর্দার সামনে নেত্রীর ভার্চুয়াল সভা দেখতে ভিড় জমেছে। মেদিনীপুর শহরের পঞ্চুরচকে বড় পর্দায় সভা দেখানো হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় রক্তদান, বৃক্ষরোপণের আয়োজন ছিল। তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতির দাবি, ‘‘কোথাও বড় জমায়েত হয়নি। স্বাস্থ্যবিধি মেনেই সর্বত্র শহিদ স্মরণ হয়েছে।’’ এ দিন মমতা ডাক দিয়েছেন, অন্য দল ছেড়ে তৃণমূলে যোগদান করুন। অজিতের দাবি, ‘‘জেলার প্রায় সব বুথেই যোগদান কর্মসূচি হয়েছে।’’ বিজেপির জেলা সভাপতি শমিত দাশের অবশ্য কটাক্ষ বলেন, ‘‘ভুলভাল দাবি। মাথা খারাপ না- হলে এখন আর কেউ তৃণমূলে যায় না!’’
ঝাড়গ্রামে বিধিভঙ্গের ছবি বিশেষ চোখে পড়েনি। তৃণমূলের মূল কর্মসূচিটি হয় ঝাড়গ্রাম শহরের পাঁচ মাথা মোড়ে। দলের শাখা সংগঠনগুলিও দিনটি পালন করে। দলনেত্রী বিজেপির বিরুদ্ধে অভিযোগ করতেই জেলা তৃণমূলের সভানেত্রী বিরবাহা সরেন, তৃণমূলের এসটি সেলের রাজ্য নেতা রবিন টুডু একযোগে বলেন, ‘‘বিনপুরের রাজকুসমায় আদিবাসী মহিলা খুন, বেলপাহাড়ির জমায়েত থেকে পুলিশের উপর হামলা চালানো হুঁশিয়ারির মতো ঘটনাগুলির পিছনে বিজেপি-র মদত রয়েছে।’’ জেলা বিজেপি-র সভাপতি সুখময় শতপথী পাল্টা বলছেন, ‘‘ছত্রধরের মতো লোকজনকে এলাকায় ফিরিয়ে এনে তৃণমূলই সন্ত্রাস ছড়াতে চাইছে।’’