—প্রতীকী চিত্র।
দলের ব্লক সভাপতি বদল হয়েছে এক দিন আগে। তাতে ক্ষোভ জমেছে দলের অন্দরের। চণ্ডীপুরের রদবদল ঘিরে এতটাই ক্ষুব্ধ তৃণমূলের একাংশ যে, সেখানের পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ দিব্যেন্দু ভক্ত-সহ চার কর্মাধ্যক্ষ বৃহস্পতিবারই তমলুকের মহকুমাশাসকের অফিসে গিয়ে পদত্যাগ করতে চেয়েছিলেন। দলের এই গোষ্ঠী কোন্দলের সরাসরি প্রভাব এবার পড়ল চণ্ডীপুরের একটি সমবায় সমিতির নির্বাচনে। গতবার যে সমবায়ের পরিচালন বোর্ড ছিল তৃণমূলের দখলে, শুক্রবার তা গিয়েছে বিরোধীদের হাতে।
চণ্ডীপুরে তৃণমূলের ব্লক সভাপতি বদলের পরে দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসেছিল বৃহস্পতিবার। ব্লকের সভাপতি পদ থেকে স্নেহাংশু পণ্ডিতকে সরিয়ে নতুন সভাপতি করা হয়েছে সুনীল প্রধানকে। এর প্রতিবাদে চণ্ডীপুর পঞ্চায়েত সমিতির চারজন কর্মাধ্যক্ষ ওই দিনই পদত্যাগ করতে চেয়েছিলেন। ওই চারজনের পদত্যাগপত্র সে দিন জমা নেওয়া হয়নি। এর পরে শুক্রবারও ওই চারজন মহকুমাশাসকের অফিসে গিয়েছিলেন পদত্যাগ পত্র জমা দেওয়ার জন্য। এমন আবহে এ দিনই চণ্ডীপুরের ব্রজলালচক মধ্য ও পশ্চিম গ্রামসভা সমবায় সমিতির পরিচালক মণ্ডলীর বোর্ড গঠনের ভোট ছিল।
সমবায় সূত্রের খবর, ব্রজলালচকের ওই সমবায়ের নতুন বোর্ড গঠনের জন্য ৫১ জন প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছিলেন। সদস্য প্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য ভোটাভুটি না করে আলোচনার ভিত্তিতে বিভিন্ন রাজনৈতিকদলের সদস্যরা প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হন। এভাবে মোট ৫১ জন প্রতিনিধিদের নিয়ে ন’জন পরিচালকমণ্ডলীর সদস্য নির্বাচন করার কথা। ওই ৯ জনের মধ্যে দু’টি মহিলা সংরক্ষিত আসন। সেটির একটিতে তৃণমূল এবং একটিতে সিপিএম প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আগেই জয়ী হয়েছিল। আর এসস-এসটিদের সংরক্ষিত আসেন নির্দল প্রার্থী জিতেছিলেন।
পরিচালক মণ্ডলীর বাকি ছ’জন সদস্য নির্বাচন করতে এ দিন সমবায় সমিতির অফিসে ভোটাভুটি হয়েছিল। আর তাতে সিপিএম, তৃণমূল, বিজেপি, নির্দলের সমর্থিত মিলিয়ে মোট ১০ জন প্রার্থী লড়াইয়ে ছিলেন। ওই ছ’টি আসনের মধ্যে তিনটিতে সিপিএম, একটিতে বিজেপি, একটিতে তৃণমূল এবং একটি আসনে নির্দল প্রার্থী জিতেছে। অর্থাৎ সমবায়ের পরিচালক মণ্ডলীর ৯ জন সদস্যের মধ্যে সাতটি আসনে বিরোধীরা জিতেছে। আর দু’টি আসনে জিতেছে তৃণমূল। সিপিএমের ব্রজলালচক শাখার সম্পাদক শ্যামল মল্লিক বলেন, ‘‘তৃণমূল ক্ষমতায় থাকার সময়ে এই সমবায়ে দুর্নীতি হয়েছিল। তাই সমবায় বাঁচানোর জন্য আমরা তৃণমূলের বিরুদ্ধে প্রার্থী দিয়ে লড়াই করেছিলাম। এতে সমবায়ের ৫১ জন প্রতিনিধিদের মধ্যে অধিকাংশই তৃণমূলের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ভোট দিয়ে আমাদের জিতিয়েছে।’’
তৃণমূল সূত্রের খবর, ওই সমবায়ের ৫১ জন প্রতিনিধির মধ্যে বেশির ভাগ তৃণমূলের কর্মী-সমর্থক থাকলেও এদিন পরিচালক মণ্ডলীর সদস্য নির্বাচনে অধিকাংশ বিরোধী দলের সদস্যদের সমর্থন করেছেন। এতেই বিরোধী দলের প্রার্থীরা জিতে গিয়েছেন। কিন্তু কেন এমনটা হল? কারণ, হিসাবে উঠে আসছে সেই গোষ্ঠী কোন্দল। দলের পুরনো ব্লক সভাপতি বদলের জেরে সমবায়ে তৃণমূলের একাংশ প্রতিনিধি বিরোধী প্রার্থীদের সমর্থন করেছেন বলে দাবি।
স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য কোন্দলের তত্ত্ব এড়িয়ে ওই সমবায় নির্বাচনে সিপিএম, বিজেপির বিরুদ্ধে জোট বাঁধার অভিযোগ তুলেছেন। চণ্ডীপুরের প্রাক্তন বিধায়ক ও তৃণমূল নেতা অমিয়কান্তি ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ওই সমবায়ের সদস্যরা আলোচনার মাধ্যমেই সদস্য প্রতিনিধি নির্বাচিত করেছিলেন। রাজনৈতিক কোনও হস্তক্ষেপ করা হয়নি। পরিচালক মণ্ডলীর সদস্য নির্বাচনে সিপিএম ও বিজেপি জোট বেঁধে লড়াই করেছে বলে জানতে পেরেছি। তাতে ওদের কয়েকজন জিতেছেন। দলে কোন্দলের অভিযোগ ভিত্তিহীন।’’ যদিও জোট বাঁধার দাবি উড়িয়ে দিয়েছে সিপিএম।