পুরপ্রধান কে হবে, সে বিষয়ে সরাসরি জয়ী কাউন্সিলরদের মতামত জানতে চাইলেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব।
পশ্চিম মেদিনীপুরে ঘাটাল, চন্দ্রকোনা, ক্ষীরপাই, খড়ার পুরসভায় একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে তৃণমূল। খড়্গপুর ও রামজীবনপুর পুরসভায় ফল ত্রিশঙ্কু। যদিও পুরপ্রধান নির্বাচন নিয়ে অস্বস্তি কাটাতে দলের জয়ী কাউন্সিলর ও জেলা নেতাদের কলকাতায় বৈঠকে ডাকেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সুব্রত বক্সী। দলীয় সূত্রে খবর, কাদের পুরপ্রধান ও উপ পুরপ্রধান করা যেতে পারে, বৈঠকে সে বিষয়ে কাউন্সিলর ও নেতাদের মতামত জানতে চান সুব্রতবাবু। কাউন্সিলরদের প্রস্তাবিত নামই শেষ পর্যন্ত স্বীকৃতি পায় বলে জানা গিয়েছে।
কোন পুরসভায় কে পুরপ্রধান হতে পারেন? দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রাথমিকভাবে কাউন্সিলরদের পক্ষ থেকে যে প্রস্তাব গিয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে ঘাটাল পুরসভায় বিভাস ঘোষ, খড়ারে উত্তম মুখোপাধ্যায়, চন্দ্রকোনায় অরূপ ধাড়া ও ক্ষীরপাইয়ে দুর্গাশঙ্কর পানের নাম রয়েছে। ক্ষীরপাই পুরসভায় দুর্গাশঙ্কর পানকে পুরপ্রধান করার প্রস্তাব দেন কাউন্সিলর সুজয় পাত্র। মুহূর্তের মধ্যে তা সমর্থন করেন সুজয় পাত্রের একেবারে উল্টো মেরুতে থাকা গৌতম ভট্টাচার্যও। যা দেখে বিস্মিত দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীও।
দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দুর্গাশঙ্কর পান আগেও ক্ষীরপাই পুরসভার পুরপ্রধান ছিলেন। তখন পুরবোর্ড ছিল সিপিএমের দখলে। পরবর্তীকালে দুর্গাশঙ্করবাবু দলবদল করলে পুরসভা তৃণমূলের দখলে আসে। তখনও অবশ্য তিনিই পুরপ্রধান ছিলেন। কিন্তু এ বার ক্ষীরপাইয়ের দুই নেতা সুজয় পাত্র ও গৌতম ভট্টাচার্য নিজেরা নির্বাচনে দাঁড়িয়েছিলেন। দু’জনেই তৃণমূলের পুরনো কর্মী। ভোটে জিতে দু’জনেরই পুরপ্রধান হওয়ার আশা ছিল বলে দলীয় সূত্রে খবর। ফলে এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে দ্বন্দ্বের আশঙ্কায় ছিলেন দলীয় নেতৃত্ব। তবে সোমবারের বৈঠকের পরে স্বস্তিতে দল।
এটা কীভাবে সম্ভব হল? দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পুরপ্রধান হওয়া নিয়ে দুই গোষ্ঠী বিবাদে জড়ালে মুখ্যমন্ত্রী তথা দলনেত্রী - দু’জনকে পুরপ্রধান করা তো দূরের কথা, উপ-পুরপ্রধানও না করতে পারেন। তাই কেউ আর ঝুঁকি নেননি। তবে উপ-পুরপ্রধান হওয়ার দৌড়ে থাকার চেষ্টায় মরিয়া দু’পক্ষই।
তবে উপ-পুরপ্রধান করার বিষয়টি এখনও প্রকাশ্যে আনতে রাজি হননি তৃণমূল নেতৃত্ব। তাই ওই দিনই সমস্ত কাউন্সিলরদের গোপন ভোট নেওয়া হয়। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শীঘ্রই পুরপ্রধানের নাম ঘোষণা করা হবে। তারপরই উপ-পুরপ্রধানের ক্ষেত্রে কাউন্সিলরদের ভোটে কে এগিয়ে তা দেখে সিদ্ধান্ত নেবেন রাজ্য নেতৃত্ব।
কাউন্সিলরদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, প্রত্যেকে যে ভাবে নিজেদের পছন্দের নাম দিয়ে এসেছেন তাতে ঘাটাল পুরসভার ক্ষেত্রে উপ-পুরপ্রধান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে উদয়সিংহ রায়ের। আর খড়ারে সুজিত রায় উপ-পুরপ্রধান হতে পারেন। তবে জটিলতা রয়েছে ক্ষীরপাইয়ে উপ-পুরপ্রধান নির্বাচনের ক্ষেত্রে। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ৬ জন কাউন্সিলরের মধ্যে ৩ জন সুজয় পাত্রকে ও ৩ জন গৌতম ভট্টাচার্যকে সমর্থন জানিয়ে এসেছেন। সেক্ষেত্রে শেষ হাসি কে হাসবেন তা বলা কঠিন।
চন্দ্রকোনার ক্ষেত্রে জট আরও গভীর বলেই দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। কারণ, বেশিরভাগ কাউন্সিলরই নিজেকে উপ-পুরপ্রধান করা হোক বলে নিজের পক্ষে ভোট দিয়ে এসেছেন। চন্দ্রকোনা নিয়ে আরও একটি বিতর্কও অবশ্য রয়েছে। ১১ জন কাউন্সিলরের মধ্যে ৬ জন মহিলা জয়ী হয়েছেন। বিজয়ী হিসাবে মহিলারা সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ায় পুরপ্রধান পদে কোনও মহিলাকে বসানো যায় কিনা সে রকম চিন্তাভাবনাও শুরু হয়েছে দলে। সেক্ষেত্রে সর্বসম্মত প্রস্তাবে অরূপবাবুর নাম এলেও তাঁকে সরতে হতে পারে।
তবে সে ক্ষেত্রে উপ-পুরপ্রধানের পদটি তাঁর পাকা সে বিষয়ে সন্দেহ নেই বলেই দলীয় সূত্রে খবর। পুরপ্রধান পদের জন্য দু’জন মহিলার নাম উঠে এসেছে। তাঁরা হলেন প্রতিমা পাত্র ও পাপিয়া দলবেরা। দু’জনেই শিক্ষিকা।
এ নিয়ে আবার বিতর্কও হতে পারে বলে আশঙ্কা তৃণমূলের। কারণ, সর্বসম্মত প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার পর অরূপবাবুর পরিবর্তে কোনও মহিলাকে পুরপ্রধান পদে বসালে সমস্যা বাড়তে পারে। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রাথমিকভাবে সমস্যা দূর করতে রাজ্য সভাপতি সকলের সঙ্গে কথা বলে একটি রূপরেখা তৈরি করলেন। চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন মুখ্যমন্ত্রী। এ ব্যাপারে জেলা নেতৃত্ব অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে চাননি। জেলা কার্যকরী সভাপতি আশিস চক্রবর্তী, অজিত মাইতিরা বলেন, “রাজ্য নেতৃত্ব সকলের মতামত নিয়ে নিয়েছেন। শীঘ্রই এ ব্যাপারে চুড়ান্ত সিদ্ধান্তও জানিয়ে দেবেন। তখনই সকলে এ বিষয়ে জানতে পারবেন।” এ দিনের বৈঠকে কাউন্সিলরদের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন ঘাটাল ও চন্দ্রকোনার বিধায়ক শঙ্কর দোলুই, ছায়া দোলুই, জেলা সভাপতি দীনেন রায় ও কার্যকরী সভাপতি আশিস চক্রবর্তী, অজিত মাইতি, নির্মল ঘোষ ও প্রদ্যোত্ ঘোষ।