সপরিবার তৃণমূল নেতা কার্তিক দিগার। নিজস্ব চিত্র
কাটমানির ক্ষোভে পড়ে স্ত্রী, ছেলে নিয়ে ঘরছাড়া শাসকদলের নেতা। করতে পারছেন না জমির চাষ। স্কুলে যেতে পারছে না এক ছেলে।
চন্দ্রকোনা রোডের উড়িয়াসাই অঞ্চলের মহাবনকাটি গ্রামের প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্য কার্তিক দিগারের ঠিকানা এখন পাশের ব্লকের এক আত্মীয় বাড়ি। একমাস ধরে তিনি গ্রামছাড়া হয়ে স্ত্রী ও দুই ছেলেকে নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন গোয়ালতোড়ের ওই আত্মীয় বাড়িতে।
২০১৩-’ ১৮ পর্যন্ত গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূলের নির্বাচিত সদস্য ছিলেন কার্তিক। গত বছরের পঞ্চায়েত ভোটে মহাবনকাটি বুথে তৃণমূল জয়ী হয়। এমনকি, এ বারের লোকসভা ভোটেও এই বুথে ‘লিড’ পেয়েছে তৃণমূল। তবু কেনও ঘরছাড়া? বৃহস্পতিবার কার্তিক বলেন, ‘‘গত ৫ অগস্ট রাত্রে মহাবনকাটি গ্রামের আটচালায় গ্রামের কয়েকজন মাতব্বর সালিশি সভায় আমাদের কয়েকজনকে ডাকেন। আমাকে বলা হয়েছিল, আমি নাকি অনেক টাকা কাটমানি খেয়েছি। তাই তিনদিনের মধ্যে আমাকে ১ লক্ষ ৭২ হাজার টাকা ফেরত দিতে হবে।’’ ওইদিনই টাকা ফেরত চেয়ে তাঁকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ কার্তিকের। এরপরই স্ত্রী ও দুই ছেলেকে নিয়ে ঘরছেড়ে পালিয়ে যান ওই তৃণমূল নেতা। তাঁর কথায়, ‘‘ভয়ে পালিয়ে গিয়েছি। আমি কোনও টাকাপয়সা, কাটমানি নিইনি। তবুও আমাকে চাপ দেওয়া হচ্ছিল। প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হচ্ছিল।’’
শুধু ঘর ছাড়াই নয়। কার্তিককে তাঁর নিজের জমির চাষ করতে দেওয়া হচ্ছে না বলেও অভিযোগ। কার্তিক বলেন, ‘‘চাষ করতে পারছি না। এ বার ধান লাগাতেও পারিনি। আমরা কৃষিজীবী পরিবার। চাষ না হলে চলবে কী করে!’’ কার্তিকের স্ত্রী জাহ্নবীর কথায়, ‘‘বড়ছেলে চন্দ্রকোনা রোডের কলেজে, ছোট ছেলে গ্রামের পাশে মানিকবাঁধ হাইস্কুলে পড়ে। বড় ছেলে কলেজে যেতে পারলেও ছোট ছেলে সে ভয়ে স্কুল যেতে পারছে না।’’
ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ স্থানীয় একজনকে গ্রেফতার করেছে। ঘটনার তদন্ত এখনও চলছে। কার্তিক যাতে ঘে ফিরে জমিতে চাষ করতে পারেন, সেজন্য চেষ্টা করেছিল পুলিশ। কিন্তু ভয়ে ঘরে ঢুকতে পারছেন না শাসকদলের এই নেতা। তৃণমূলের উড়িয়াসাই অঞ্চলের পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য জ্ঞানেঞ্জন মণ্ডল বলেন, ‘‘কার্তিক গ্রাম ছেড়েছে। তবুও তিনি অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেনি।"
তৃণমূলের চন্দ্রকোনা রোড ব্লকের কার্যকরী সভাপতি রাজীব ঘোষ বলেন, ‘‘একমাস ধরে আমাদের প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্য কার্তিক দিগার ঘরছাড়া। চাষ করতে পারছেন না। সিপিএমের অত্যাচারীদের মদতে বিজেপি অরাজকতার পরিবেশ সৃষ্টি করছে।’’ অভিযোগ উড়িয়ে বিজেপির চন্দ্রকোনা রোড পূর্ব মণ্ডলের সভাপতি দেবব্রত ঘটক বলেন, ‘‘মহাবনকাটির ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই। এটা গ্রাম্য বিবাদের ঘটনা বলেই শুনেছি। তবুও খোঁজ নিচ্ছি।"