বিধানসভা ভোটে হলদিয়ায় হারের জেরে তৃণমূলের হলদিয়া শহর ও সুতাহাটা ব্লক কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়েছিল আগেই। এ বার একই পথে হেঁটে দলের যুব সংগঠনের ভগবানপুর-১, সুতাহাটা ও হলদিয়া শহর কমিটিও ভেঙে দেওয়া হল। ওই তিন এলাকায় তৃণমূলের যুব সংগঠনের কাজের জন্য আপাতত অস্থায়ী ভাবে আহ্বায়ক নিয়োগ করা হয়েছে।
৮ জুলাই তমলুকে যুব তৃণমূলের জেলা কমিটির বৈঠকে এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে।এ নিয়ে যুব তৃণমূলের পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সভাপতি আনিসুর রহমান বলেন, ‘‘বিধানসভা নির্বাচনে ওই এলাকাগুলিতে আশানুরূপ ফল না হওয়ায় সাংগঠনিক ভাবে হলদিয়া পুরসভা, সুতাহাটা ও ভগবানপুর-১ ব্লকের কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। নতুন কমিটি গঠনের আগে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতৃত্বকে ২১ জুলাই পর্যন্ত অস্থায়ীভাবে কাজ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’
বিধানসভা ভোটে জেলার হলদিয়া, তমলুক ও পূর্ব পাঁশকুড়া বিধানসভা কেন্দ্রে হারের মুখ দেখতে হয়েছে তৃণমূলকে। হলদিয়া বিধানসভা এলাকায় তৃণমূল প্রার্থী তথা জেলা পরিষদের সভাধিপতি মধুরিমা মণ্ডল প্রায় ২২ হাজার ভোটে সিপিএম প্রার্থী তাপসী মণ্ডলের কাছে পরাজিত হয়েছেন। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, বিপুল জয়ের মাঝে হলদিয়ার মতো কেন্দ্র হাতছাড়া হওয়াটা শাসকদলকে অস্বস্তিতে রেখেছে। চিন্তা বাড়িয়েছে তমলুক ও পাঁশকুড়া পূর্ব আসনে পরাজয়। তাই জেলার কয়েকটি এলাকায় খারাপ ফলের কারণ খুঁজতে সাংগঠনিক পর্যালোচনায় নামেন তৃণমূল নেতৃত্ব।
দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, হলদিয়া বিধানসভায় হারের জন্য হলদিয়া শহর ও সুতাহাটা ব্লক এলাকায় দলের একাংশ স্থানীয় নেতার ভূমিকা নিয়ে অভিযোগ ওঠে। তার জেরে দলের হলদিয়া পুরসভা ও সুতাহাটা ব্লক কমিটি ভেঙে দেন তৃণমূল জেলা নেতৃত্ব। এরপরেই হলদিয়া শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন কারখানায় দায়িত্বপ্রাপ্ত দলের শ্রমিক সংগঠনের নেতাদেরও সরিয়ে দেওয়া হয়।
একইভাবে, এ বার দলের যুব সংগঠনের তিনটি এলাকার কমিটিও ভেঙে দেওয়া হল। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সুতাহাটার বিদায়ী ব্লক যুব তৃণমূল সভাপতি দীয়ানৎ মোল্লা ও মহাপ্রসাদ পাত্রকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে আপাতত সাংগঠনিক কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
অন্য দিকে, যুব তৃণমূলের হলদিয়া শহর ব্লক সভাপতি হিসেবে কেউ দায়িত্বে ছিলেন না। দল বিরোধী কাজের অভিযোগে প্রায় এক বছর আগে যুব তৃণমূলের ব্লক সভাপতি রুহুল আমিনকে অপসারণ করা হয়। এ বার তৃণমূলের যুব সংগঠনের হলদিয়া শহর ব্লক কমিটির বিদায়ী কার্যকরী সভাপতি অর্ণব দেবনাথ ও সাধারণ সম্পাদক আয়ুব খানকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে অস্থায়ীভাবে সাংগঠনিক দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
ভগবানপুর-১ ব্লকের চণ্ডীপুর ও ভগবানপুর বিধানসভায় তৃণমূলের প্রার্থীরাই জয়ী হয়েছেন। প্রশ্ন উঠছে, তারপরেও কেন যুব তৃণমূলের ব্লক কমিটি ভেঙে দেওয়া হল? তৃণমূলের এক সূত্রে খবর, ওই দুই বিধানসভায় জয় এলেও দলের ফল আশানুরূপ হয়নি। সেই কারণে সাংগঠনিক ভাবে পর্যালোচনা করে ওই ব্লক কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। ব্লকের বিদায়ী যুব তৃণমূল সভাপতি হারুন রশিদ ও সাধারণ সম্পাদক রজব আলিকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে অস্থায়ীভাবে সাংগঠনিক কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ভগবানপুর -১ পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সভাপতি শেখ হারুন রশিদ বর্তমানে জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ পদে রয়েছেন। যদিও কমিটি ভাঙার বিষয়ে হারুন রশিদ বলেন, ‘‘ব্লকের যুব সংগঠন ভেঙে দেওয়ার বিষয়ে আমি জানি না। আমাকে এখনও এ বিষয়ে জানানো হয়নি।’’