প্রার্থী তালিকা প্রকাশ না হলেও বিজেপি প্রার্থীর সমর্থনে শুরু হয়েছে দেওয়াল লিখন।
সংরক্ষণের গেরোয় প্রার্থী হতে পারেননি অনেক কাউন্সিলার। সে ক্ষেত্রে ওই কাউন্সিলারের স্ত্রী বা স্বামী জায়গা করে নিয়েছেন প্রার্থী তালিকায়। শুক্রবার তমলুক পুরসভার একটি ওয়ার্ড (৭ নম্বর) বাদে বাকি ১৯টি ওয়ার্ডের চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করল তৃণমূল। ফলে প্রার্থী তালিকা নিয়ে পরিবারতন্ত্রের অভিযোগে সরব দলেরই একাংশ নেতা-কর্মী। এ দিনই কাঁথি পুরসভারও তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা প্রকাশিত হয়।
তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্ব আগেই ঘোষণা করেছিলেন, আসন সংরক্ষণের গেরোয় না পড়লে পুরসভা নির্বাচনে বর্তমান কাউন্সিলরই ফের প্রার্থী হবেন। এরফলে পুরসভার অধিকাংশ আসনে বর্তমান কাউন্সিলররাই প্রার্থী হয়েছেন। সংরক্ষণের কোপে পড়ে নিজে প্রার্থী হতে পারেননি কয়েকজন কাউন্সিলর। নিজের স্ত্রীকে প্রার্থী করার জন্য তাঁদের মধ্যে তৎপরতাও ছিল চোখে পড়ার মতো।
তমলুক পুরসভার পুরপ্রধান দেবিকা মাইতি (১৭ নম্বর), উপ-পুরপ্রধান দীপেন্দ্র নারায়ণ (৬ নম্বর) নিজের ওয়ার্ডেই ফের প্রার্থী হচ্ছেন। এ ছাড়াও নিজের ওয়ার্ডেই প্রার্থী হচ্ছেন দুই প্রাক্তন পুরপ্রধান রবীন্দ্রনাথ সেন, পৃত্থীশ নন্দী এবং চন্দন প্রধান, চামেলি সামন্ত, সুফিয়া বিবি, রঞ্জিতা জানা। পুরসভার ৯ নম্বর ও ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী পদে স্থান পেয়েছেন বর্তমান কাউন্সিলরদের স্ত্রী। আর পুরসভার ৪ নম্বর ও ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী হচ্ছেন বর্তমান কাউন্সিলরের স্বামীরা।
তৃণমূলের তমলুক শহর কমিটির সভাপতি দিব্যেন্দু রায় শুক্রবার জানান, পুরসভার নির্বাচনে লড়াই করার জন্য প্রায় সব ওয়ার্ডেই দলের প্রার্থী স্থির হয়ে গিয়েছে। দলের ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের অনুমোদনের পরে দলীয়ভাবে প্রার্থীদের নাম জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, পুরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর কল্পনা সাহার বদলে এ বার প্রার্থী হচ্ছেন তাঁর স্বামী ভানুপদ সাহা। এরআগে একাধিকবারের কাউন্সিলর ভানুপদবাবু উপ-পুরপ্রধানও হয়েছিলন। একইভাবে, পুরসভার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর তৃপ্তি বর্মণ খাঁড়ার জায়গায় এ বার প্রার্থী করা হয়েছে তাঁর স্বামী চঞ্চল খাঁড়াকে। জেলা যুব তৃণমূলের সহ-সভাপতি চঞ্চলবাবু এ বারই প্রথম পুরসভায় প্রার্থী হচ্ছেন। অন্য দিকে, মহিলাদের জন্য আসন সংরক্ষিত হওয়ার জেরে পুরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর সৈয়দ আবেদ আলি শাহ-র জায়গায় এ বার প্রার্থী করা হয়েছে তাঁর স্ত্রী আনোয়ারা বেগমকে। একইভাবে, ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর গৌরহরি সামন্তের জায়গায় এ বার প্রার্থী করা হয়েছে তাঁর স্ত্রী স্মিতা সামন্তকে।
পিছিয়ে নেই শাসকদলও। তমলুকে।
অন্য দিকে, সংরক্ষণের জেরে এ বার প্রার্থী তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর ঝন্টু জানা। ওই ওয়ার্ডে প্রার্থী করা হয়েছে শম্পা বেরাকে। একই কারণে ১২ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী করা হয়েছে লীনা রায়কে। আর ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর জয়া দাস নায়েক প্রার্থী তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন।
অন্য দিকে, এ দিন কাঁথি পুরসভার ২১টি ওয়ার্ডের তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা প্রকাশিত হল। তালিকা প্রকাশ করে জেলা তৃণমূল সভাপতি শিশির অধিকারী বলেন, “প্রবীণ আর নবীণ দুই মিলিয়েই কাঁথি পুরসভায় এ বারের প্রার্থী তালিকা তৈরি করা হয়েছে। গত দু’বারের মতো এ বারও ভোটে কাঁথি পুরসভা বিরোধীশূন্য পুরসভা হবে। জেলার তমলুক ও এগরা পুরসভাতেও তৃণমূল জয়ী হবে।”
এ দিনই এগরা পুরসভার প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে বলেও জানান তিনি। এ বারের প্রার্থী তালিকায় সবচেয়ে বড় চমক উত্তর কাঁথির তৃণমূল বিধায়ক ও গতবারের কাঁথি পুরসভার কাউন্সিলার বনশ্রী মাইতির নাম না থাকা। বনশ্রী মাইতি গত পুরভোটে ১০ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জয়ী হয়েছিলেন। অন্য দিকে, দক্ষিণ কাঁথির বিধায়ক দিব্যেন্দু অধিকারী ১৭ নম্বর ওয়ার্ড থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁর নিজের ১৬ নম্বর ওয়ার্ড মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত হয়েছে। পুরপ্রধান সৌমেন্দু অধিকারীর ১৯ নম্বর ওয়ার্ডও মহিলাদের জন্য সরক্ষিত হয়েছে। তাই নম্বর ২১ ওয়ার্ড থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সৌমেন্দুবাবু। গতবারের কাউন্সিলার সুপ্রকাশ মাইতি, চন্দন সিংহ, ভবতোষ বেরার নাম প্রার্থী তালিকা থেকে বাদ পড়েছে। অন্য দিকে, ৭ নম্বর ওয়ার্ডে গতবারের কাউন্সিলার সুমিতা গিরির স্বামী অতনু গিরি, ১১ নম্বর ওয়ার্ডে মালবিকা বেরার স্বামী তরুণ বেরা, ১২ নম্বর ওয়ার্ডে সিদ্ধার্থ মাইতির স্ত্রী পম্পা মাইতি প্রার্থী হয়েছেন।
এ বারে নতুন মুখ হিসেবে ১ নম্বর ওয়ার্ডে শেখ সাবুল, ২ নম্বর ওয়ার্ডে মঞ্জুরানি পাল, ৩ নম্বর ওয়ার্ডে জাভেদ আখতার, ৪ নম্বর ওয়ার্ডে আলেম আলি খান, ৫ নম্বর ওয়ার্ডে সুনীতা ত্রিপাঠী, ৬ নম্বর ওয়ার্ডে প্রকাশ মাইতি, ৮ নম্বর ওয়ার্ডে সীতারাম মাঝি, ৯ নম্বর ওয়ার্ডে সুমিতা সিংহ, ১০ নম্বর ওয়ার্ডে দিলীপ কুমার মাইতি, ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে কাকলি শীট ও ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে কমলা বেরা ও ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে উত্তম মহাপাত্র প্রার্থী হয়েছেন।
ছবি: পার্থপ্রতিম দাস।