TMC

TMC-BJP: তৃণমূল-বিজেপির ঠান্ডা লড়াই কালীপুজোতেও 

গতবছরও শহরে বিভিন্ন ক্লাবের পুজোর উদ্বোধক হিসেবে একচেটিয়া আধিপত্য ছিল তৎকালীন তৃণমূল নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

তমলুক শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০২১ ০৯:২১
Share:

প্রতীকী ছবি।

প্রাচীনকাল থেকেই শক্তির আরাধনার পীঠস্থান হিসেবে পরিচিত তমলুক। প্রতি বছর কালীপুজোর আয়োজন ও তাকে ঘিরে তমলুক শহরে দীপাবলি উৎসবে উন্মাদনা থাকে তমলুক শহরে। পারিবারিক পুজোর আয়োজন ছাড়াও বিভিন্ন ক্লাব ও সংগঠনের সর্বজনীন মিলিয়ে শতাধিক কালীপুজোর আয়োজন হয়ে থাকে শহরে।

Advertisement

সময়ের সাথে কালীপুজোতেও থিমের মণ্ডপ, প্রতিমা, আলোকসজ্জা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন ঘিরে বিভিন্ন ক্লাবের মধ্যে ঠান্ডা লড়াই চলে। তবে এবার সেই লড়াইয়ে অন্যমাত্রা যোগ করেছে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল ও বিরোধীদল বিজেপি প্রভাবিত বিভিন্ন ক্লাবের কালীপুজোর উদ্বোধক হিসেবে আমন্ত্রিত নেতার উপস্থিতি।

গতবছরও শহরে বিভিন্ন ক্লাবের পুজোর উদ্বোধক হিসেবে একচেটিয়া আধিপত্য ছিল তৎকালীন তৃণমূল নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর। শহরের বিগ বাজেটের পুজোগুলির প্রায় সবেতেই উদ্বোধক ছিলেন শুভেন্দু। কিন্তু গত ডিসেম্বর মাসে শুভেন্দু তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার রাজনীতির সমীকরণ বদলে গিয়েছে। তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্বের নির্দেশে জেলায় তৃণমূলের রাজনীতিতে ফের সক্রিয় হয়ে ওঠেন সেসময় পিংলার বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র। চলতি বছর বিধানসভা ভোটে তমলুক কেন্দ্রে জিতে বিধায়ক ও রাজ্যের সেচমন্ত্রী হয়েছেন সৌমেন। অন্যদিকে নন্দীগ্রাম বিধানসভায় বিজেপি প্রার্থী হিসেবে জিতে বিধানসভার বিরোধী দলনেতা হয়েছেন শুভেন্দু। আর জেলার রাজনীতিতে দুই শিবিরের দুই হেভিওয়েট নেতার
উপস্থিতিতে এবার তমলুক শহরে বিভিন্ন ক্লাবের কালীপুজোর উদ্বোধন ঘিরে রাজনৈতিক বিভাজন স্পষ্ট
হয়ে উঠেছে।

Advertisement

মঙ্গলবার থেকেই শহরের বিভিন্ন ক্লাবের কালীপুজোর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন শুরু হয়েছে। আর এদিন সন্ধ্যে থেকে রাত পর্যন্ত শহরের মানিকতলায় এভারগ্রিন ক্লাব, রাজময়দানে ফ্রেন্ডস ক্লাব, নিউ ব্রাইট স্টার, কলেজপাড়ায় ভাই ভাই সংঘ, দে পাড়ায় ইউরেকা, টাউনস্কুল পাড়ায় ভিবজিওর, দক্ষিণচড়ায় রিভারপ্লেট, নিমতলা স্পোর্টস ইউনিট, রেলস্টেশন রোডে প্রতিদান সংঘ ও স্টেডিয়াম গেটে কিশোর সংঘ প্রভৃতি মিলিয়ে তৃণমূল প্রভাবিত ১২টি ক্লাবের কালীপুজোর উদ্বোধন করেন সেচমন্ত্রী সৌমেন। ওই সমস্ত কালীপুজোর উদ্বোধনে সৌমেন ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন তৃণমূলের তমলুক শহর সভাপতি চঞ্চল খাঁড়া, তমলুক পুরসভার প্রশাসক বোর্ডের চেয়ারপার্সন দীপেন্দ্রনারায়ণ রায় ও আইএনটিটিইউসি-র প্রাক্তন জেলা সভাপতি দিব্যেন্দু রায় সহ অন্য নেতৃত্ব। বৃহস্পতিবারও শহরের হাসপাতাল মোড়ে ফাইভস্টার ক্লাব, শালগেছিয়ায় অমর সঙ্ঘ-সহ একাধিক ক্লাবের কালীপুজোর উদ্বোধন করেন সৌমেন। এরমধ্যে ফাইভ স্টার ক্লাবের সভাপতি পদে রয়েছেন চঞ্চল খাঁড়া।

বুধবার রাতে শহরের বাদামতলায় উত্তরায়ণ ক্লাব, বড়বাজারের কাছে ১১ পল্লি ইয়ংস্টার ক্লাব, দক্ষিণচড়ায় আদ্যাশক্তি, পদুমবসানে ওয়ান স্টার ক্লাব, দে পাড়ায় ‘আমাদের পরিবার’ ও শালগেছিয়ায় সবুজ সঙ্ঘ-সহ বিজেপি প্রভাবিত ছয়টি ক্লাবের কালীপুজোর উদ্বোধন করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। ওই সমস্ত কালীপুজোর উদ্বোধনে শুভেন্দুর সাথে ছিলেন বিজেপি জেলা (তমলুক) সভাপতি নবারুণ নায়েক, তমলুক নগর মণ্ডল সভাপতি সুকান্ত চৌধুরী ও সহ-সভাপতি আনন্দ নায়েক সহ শহরের অন্যান্য বিজেপি নেতৃত্ব।

তবে কালীপুজোর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানগুলিতে সৌমেন ও শুভেন্দু কাউকেই কোনও রাজনৈতিক মন্তব্য করতে শোনা যায়নি। কিন্তু শহরের কালীপুজোর উদ্বোধনে এবারই প্রথম বিজেপি নেতা হিসেবে শুভেন্দু অধিকারী সহ অন্যান্য বিজেপি নেতাদের ডাকা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে চর্চা শুরু হয়েছে। বিজেপির তমলুক নগর মণ্ডল সভাপতি সুকান্ত চৌধুরী বলেন, ‘‘গত বছর পর্যন্ত শহরে কোনও ক্লাবের তরফে আমাদের দলের নেতৃত্বকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। এবারই বিভিন্ন পুজোর উদ্যোক্তারা শুভেন্দুবাবু সহ আমাদের দলের জেলা ও স্থানীয় নেতৃত্বকে আমন্ত্রণ করেছেন। এটা আমাদের পক্ষে আশাব্যঞ্জক।’’

যদিও তৃণমূল নেতা তথা তমলুক পুরসভার প্রশাসক বোর্ডের চেয়ারপার্সন দীপেন্দ্রনারায়ণ রায় বলেন, ‘‘কালীপুজোর আয়োজক ক্লাবগুলিতে সব রাজনৈতিক দলের লোকজন থাকেন। পুজো উদ্বোধনের জন্য কাকে আমন্ত্রণ করা হবে তা ক্লাবের নিজস্ব ব্যাপার। এতে রাজনীতির কোনও বিষয় নেই।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement