বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ভবন। নিজস্ব চিত্র।
ঠিক ছিল, আদিবাসী দিবসের (৯ অগস্ট) দিনই সাধু রামচাঁদ মুর্মু বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ভবনের দ্বারোদ্ঘাটন হবে। তবে তা হয়নি। অবশেষে ৫ সেপ্টেম্বর শিক্ষক দিবসের দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাস চালু হবে। জানা গিয়েছে, কলকাতার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়াম থেকে ভার্চুয়ালি ক্যাম্পাসের উদ্বোধন করবেন মুখ্যমন্ত্রী। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে খবর, শিক্ষক দিবসের দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বারোদ্ঘাটনের বিষয়টি উচ্চ শিক্ষা দফতরের পক্ষ থেকে মৈখিক জানানোও হয়েছে।
ঝাড়গ্রাম গ্রামীণের জিতুশোলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ভবন তৈরির কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। আসবাবপত্র দিয়ে ভবন সাজানোর কাজও প্রায় শেষ। সূত্রের খবর, অরণ্যশহরের রাজ মহিলা কলেজের অস্থায়ী ভবন থেকে শীঘ্রই বিশ্ববিদ্যালয় সরছে নতুন ক্যাম্পাসে। ইতিমধ্যে আসবাবপত্র তৈরির জন্য দু’কোটি ২০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছে অর্থ দফতর। ‘ওয়েস্টবেঙ্গল স্মল ইন্ডাস্ট্রিজ ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন’এর মাধ্যমে আসবাবপত্র সরবরাহ করা হচ্ছে। আপাতত ক্যাম্পাসের প্রতিটি ঘরে বিদ্যুতের লাইন বসানোর কাজ চলছে। মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য-সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল আধিকারিকেরা ক্যাম্পাস পরিদর্শন করেন। ছিলেন পূর্ত দফতরের ইঞ্জিনিয়ারেরাও। বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ভবনে পঠন-পাঠন চালুর জন্য পূর্ত দফতরের কাছে প্রশাসনিক ভবন ও তিনটি অ্যাকাডেমিক ব্লকের ৪২টি ঘর চেয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে ১৫টি ক্লাসরুম, একটি রিসেপশন, অধ্যাপকদের বসার জন্য চারটি ঘর, প্রশাসনিক আধিকারিকদের জন্য ২০টি ঘর থাকবে। তবে আপাতত বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফ থেকে ১৫টি ক্লাসরুম প্রস্তুত করার কথা বলা হয়েছে।
গত বছর অরণ্যশহরে ঝাড়গ্রাম রাজ মহিলা কলেজে ভবনের চারতলায় অস্থায়ী ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাজকর্ম শুরু হয়েছে। সেখানেই বসছেন উপাচার্য, রেজিস্ট্রার, পরীক্ষা নিয়ামক-সহ বিভিন্ন আধিকারিকরা। গত বছর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে সাঁওতালি, ইংরেজি, অঙ্ক এবং সাংবাদিকতা ও জনসংযোগ— এই চারটি বিষয়ের পঠন-পাঠন শুরু হয়েছে। চারটি বিভাগে প্রথম বর্ষে মোট ১৭৫ জন পড়ুয়া রয়েছেন। রাজ মহিলা কলেজে ভবনের চারতলায় চারটি ঘরে প্রথম বর্ষের পড়ুয়াদের পড়ানো হয়। কিন্তু চলতি শিক্ষাবর্ষে আরও ছ’টি বিষয়ে (বাংলা, ইতিহাস, ভূগোল, লাইব্রেরি সায়েন্স, পুষ্টি ও জনস্বাস্থ্য, মিউজিক অ্যান্ড পারফর্মিং আর্ট) স্নাতকোত্তর কোর্স চালু হচ্ছে। এ ছাড়াও কুড়মালি ও ঝুমুর বিষয়ে স্বল্পমেয়াদী পাঠক্রমও চালু হচ্ছে। তাই আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে ১৫টি ক্লাসরুম প্রয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আধিকারিক উদ্বোধন প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘মৈখিক ভাবে মুখ্যমন্ত্রী ভার্চুয়ালি উদ্বোধনের কথা জানানো হয়েছে। লিখিত ভাবে আগামী দু’-একদিনের মধ্যে চলে আসবে আশা করছি।’’ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অমিয়কুমার পাণ্ডার ভাষায়, ‘‘আমরা প্রস্তুত রয়েছি।’’
২০১৭ সালের এপ্রিলে ঝাড়গ্রাম জেলার আত্মপ্রকাশের পর জেলায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় গড়া হবে বলে ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঝাড়গ্রাম শহর থেকে কিলোমিটার দশেক দূরে ঝাড়গ্রাম-লোধাশুলি রাজ্য সড়কের ধারে জিতুশোল এলাকায় ২৮ একর সরকারি জমিতে বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে। এই খাতে খরচ ধরা হয়েছিল ১২৫ কোটি টাকা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন ও শিক্ষা ভবন, অতিথিশালা ও ছাত্রীনিবাস ইতিমধ্যেই তৈরি হয়ে গিয়েছে। পরবর্তী পর্যায়ে তৈরি হবে তিনটি অ্যাকাডেমিক ব্লক, অ্যাক্টিভিটি সেন্টার, ছাত্রাবাস, কর্মী আবাসন, গ্রন্থাগার ভবন ও স্টেডিয়াম।