জেলাশাসকের দফতরের সামনে ধর্না। নিজস্ব চিত্র
ভুল চিকিৎসায় দু’টি চোখের দৃষ্টিশক্তিই হারাতে বসেছেন, এই অভিযোগে মঙ্গলবার সকালে পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসকের দফতরের সামনে ধর্নায় বসেন এক মহিলা। সঙ্গে ছিলেন তাঁর স্বামী ও দুই ছেলেও।
হাবিবা বিবি নামে ওই মহিলার বাড়ি কেশপুরের আমড়াকুচির চরকায়। হাবিবার অভিযোগ, সরকারি হাসপাতালে তাঁর ভুল চিকিৎসা হয়েছে। তিনি বাতের সমস্যায় ভুগছিলেন। অথচ, তাঁর যক্ষ্মার চিকিৎসা হয়েছে। আর যক্ষ্মার ওষুধ খেয়েই দু’টি চোখের দৃষ্টিশক্তি হারাতে বসেছে বলে অভিযোগ হাবিবার। হাবিবার স্বামী শেখ জোয়াদ আলি বলেন, ‘‘একমাস ওষুধ খাওয়ার পরেই স্ত্রীর চোখে সমস্যা দেখা দেয়। ডাক্তারকে জানিয়েছিলাম। তখন বলা হয়েছিল, এটা এমন কিছু নয়। যক্ষ্মার ওষুধ চলাকালীন এই রকম সমস্যা দেখা দেয়ই। পরে স্ত্রীর দু’টি চোখের দৃষ্টিই ঝাপসা হতে শুরু করে।’’
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের অবশ্য দাবি, ওই মহিলার যক্ষ্মাই হয়েছিল। সেই মতো তাঁর চিকিৎসা শুরু হয়েছিল। গত বছর মার্চে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এসে ডাক্তার দেখান হাবিবা। পরে মেদিনীপুর মেডিক্যাল থেকে তাঁকে কেশপুর গ্রামীণ হাসপাতালে পাঠানো হয়। কেশপুরেই তাঁর যক্ষ্মার চিকিৎসা শুরু হয়। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরাও বলছেন, ‘‘ভুল চিকিৎসা হয়নি। ওই মহিলা যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। সেই মতো চিকিৎসা হয়েছে।’’
তাহলে কেন দৃষ্টিশক্তি হারালেন হাবিবা?
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের মতে, যক্ষ্মার ওষুধ নিয়ম মেনে খেলে কোনও সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কিন্তু ডোজের গোলমালে বা রোগীর অন্য কোনও শারীরিক সমস্যা থাকলে চোখের অসুবিধা হতে পারে। গিরীশবাবুর কথায়, ‘‘তবে এমন চোখের সমস্যা এক লাখে কয়েকজনের হয়।’’ জেলার যক্ষ্মা আধিকারিক শক্তিপদ মুর্মুরও বক্তব্য, ‘‘বিশেষ ক্ষেত্রে যক্ষ্মার ওষুধ থেকে চোখের সমস্যা হতে পারে। এ ক্ষেত্রে তো মহিলার যক্ষ্মার পাশাপাশি বাতের সমস্যাও ছিল।’’
এ দিন সপরিবার জেলাশাসকের দফতরের সামনে ওই মহিলা ধর্নায় বসায় শোরগোল পড়ে কালেক্টরেট চত্বরে। ছুটে আসেন প্রশাসনিক কর্তারা। নানা ভাবে তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা করেন। হাবিবা অবশ্য তাঁর অভিযোগে অনড়। তিনি বলেন, ‘‘ভুল চিকিৎসাতেই আমার চোখের এই হাল। অনেক জায়গায় অভিযোগ জানিয়েছি। সুরাহা হয়নি। সুবিচার চাইতেই ডিএমের কাছে এসেছি।’’ জেলাশাসক পি মোহনগাঁধী বলেন, ‘‘এখন বাঙুরে ওই মহিলার চিকিৎসা চলছে। চিকিৎসার দিকে নজর রাখতে সিএমওএইচ- কে বলেছি। প্রয়োজনে মেডিক্যাল বোর্ড বসিয়ে পদক্ষেপ করা হবে।’’
হাবিবা ও তাঁর স্বামী শেখ জোয়াদ আলি দু’জনেই দিনমজুর। বড় ছেলে বছর বারোর জাহির আলি ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। ছোট ছেলে বছর দশকের ওয়াসিম আলি চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র। হাবিবাদের দাবি, অসুস্থতার জেরে আর্থিক অনটন আরও বেড়েছে। দুই ছেলের পড়াশোনা বন্ধ হওয়ার মুখে। জেলাশাসকের আশ্বাস, ‘‘ওই মহিলার পরিবারের যে সব সরকারি সুযোগ- সুবিধে পাওয়ার কথা তা যাতে পায় দেখছি। জেলা থেকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিতভাবেই করা হবে।’’ এ দিন প্রশাসনের আশ্বাসেই ধর্না তুলে নিয়েছেন হাবিবারা।
যক্ষ্মা কী
যক্ষ্মা একটি সংক্রামক ব্যাক্টেরিয়াজনিত রোগ। জীবাণুর নাম মাইকোব্যাক্টেরিয়াম টিউবারকুলোসিস। যক্ষ্মা দেহের যে কোনও অঙ্গে হতে পারে। যখন এটা ফুসফুসকে আক্রমণ করে তখন তাকে ফুসফুসের যক্ষ্মা বলা হয়। সব থেকে পরিচিত যক্ষ্মা হল ফুসফুসের যক্ষ্মা
• সাধারণ যক্ষ্মা ৬- ৯ মাসের চিকিৎসায় যক্ষ্মা সারে
• প্রতিরোধী যক্ষ্মা সারতে নূন্যতম ২৪- ২৭ মাস লাগে
• যক্ষ্মার চিকিৎসা চলাকালীন কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যেমন, জন্ডিস ও চোখের সমস্যা হতে পারে
• এই সমস্যা যাতে প্রকট না হয় সে জন্য নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি
• যক্ষ্মা থেকে চোখের সমস্যা খুবই বিরল, এক লাখে কয়েকজনেরই হয়
তথ্য সূত্র: পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা স্বাস্থ্য দফতর