শুভঙ্কর মণ্ডল। নিজস্ব চিত্র keshabmanna23@gmail.com
প্রাথমিকের টেট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। তবু 'ঘুষ' দিতে না পারায় চাকরি মেলেনি বলে তাঁর অভিযোগ। টেট উত্তীর্ণ সেই চাকরি প্রার্থী এবার রাহুল গান্ধীর 'ভারত জোড়ো যাত্রা'য় অনুপ্রাণিত হয়ে পঞ্চায়েতে কংগ্রেসের প্রার্থী হলেন। হাঁটার শক্তিটুকু পর্যন্ত নেই। তবু ট্রাই সাইকেলে একাই বুধবার গিয়ে মনোনয়ন জমা দেন শুভঙ্কর মণ্ডল। খেজুরির জাহানাবাদের বাসিন্দা। কয়েক বছর আগে বাবা মারা যান। বাড়িতে মা,দাদা আর ছোট বোন আছে। জন্ম থেকেই 'মেনিনগ্রো মাইনোসিস' নামের বিরল রোগে আক্রান্ত বছর চল্লিশের শুভঙ্কর। তা নিয়েই লড়াই করে স্নাতক হন। ২০১৬ সালে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের টেট পরীক্ষায় বসেছিলেন। সেখানে পাশও করেন। তবে চাকরি হয়নি। আপাতত বাড়ি থেকে তিন কিলোমিটার দূরে কলাগেছিয়ায় একটি ইমিটেশন দোকান চালান শুভঙ্কর।
বুধবার একাই তিন চাকার রিকশা চালিয়ে খেজুরি-১ বিডিও অফিসে যান তিনি। কলাগেছিয়া গ্রাম-পঞ্চায়েতের অন্তর্গত পঞ্চায়েত সমিতির একটি আসনে কংগ্রেসের টিকিটে প্রার্থী হয়েছেন তিনি। বিডিও অফিস চত্বরে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মীরাই তাঁকে রিকশা থেকে কোলে করে নিয়ে গিয়ে মনোনয়ন জমায় সাহায্য করেন। শুভঙ্করের দাবি, ‘‘শিক্ষা নিয়ে এ রাজ্যে যা চলছে তাতে যার কাছে টাকা নেই পড়াশোনা করলেও তার চাকরি নেই। এভাবে সমাজ চলতে পারে না। তার জন্য পঞ্চায়েত থেকে বদল চাইতে সকলকে বোঝাব।’’
রাজ্যে নিয়োগ দুর্নীতির বিরোধিতায় বিজেপি ও সিপিএম যতটা সক্রিয়, তুলনায় কংগ্রেস সেরকম আন্দোলন করেনি বলেই মনে করে রাজনৈতিক মহল। তবে কেন কংগ্রেসের প্রার্থী হলেন? শুভঙ্করের জবাব, "ভারত জোড়ো যাত্রায় বেরিয়ে রাহুল গান্ধী প্রতিবন্ধীদের জড়িয়ে ধরেছিলেন। তা ছাড়া অধীর চৌধুরীর লড়াকু মানসিকতা আমাকে অনুপ্রাণিত করে। যা এই রাজ্যে শাসক দল কিংবা অন্য বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাদের ক্ষেত্রে দেখা যায়নি।" তাঁর দাবি, ‘‘প্রতিবন্ধী হিসেবে একটি ট্রাই সাইকেল পাওয়ার জন্য জনপ্রতিনিধিদের পাশাপাশি শাসক দলের অনেক নেতাকেই বলেছিলাম। কেউই সাড়া দেয়নি। এলাকার এক প্রাক্তন জয়েন্ট বিডিও আমার কথা জেনে ব্যক্তিগতভাবে সাহায্য করেছেন।’’
স্বাধীনতার এত বছর বাদেও এলাকার রাস্তাঘাট, রাজনৈতিক হানাহানি নিয়ে তীব্র অসন্তোষ রয়েছে শুভঙ্করের। তাই টেট পাশ করে এখন নিজের চাকরি নয়, গ্রামের ছেলেমেয়েদের উপযুক্ত শিক্ষিত করে তোলার দাবি তুলে পঞ্চায়েত ভোটযুদ্ধ সামিল শুভঙ্কর।