কাটমানিতে নাম সমবায় সেলের জেলা সভাপতিরও

ইতিমধ্যেই শহিদ মাতঙ্গিনী পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি দিবাকর জানা, বামদেব গুছাইত-সহ একাধিক তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে কাটমানি নেওয়ার অভিযোগ তুলে টাকা ফেরতের দাবিতে পোস্টার পড়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

তমলুক শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০১৯ ০০:২৭
Share:

সমবায় সেলের সভাপতির বিরুদ্ধে সেই পোস্টার। নিজস্ব চিত্র

কয়েকদিন আগেই তৃণমূলের জেলা কমিটির বৈঠকে তাঁর বিরুদ্ধে দলের স্থানীয় নেতৃত্বকে এড়িয়ে কর্মসূচি পালনের অভিযোগ উঠেছিল। জেলা সমবায় সেলের সভাপতি গোপাল মাইতির বিরুদ্ধে এ বার চাকরি দেওয়ার নামে কাটমানি নেওয়া এবং সমবায় সমিতির প্রায় ১ কোটি টাকা তছরুপের অভিযোগ তুলে পোস্টার পড়ল। শুক্রবার নন্দকুমার ব্লকের সুলোচনা বাজারে তমলুক-ঘাটাল কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের সামনে এই নিয়ে বিক্ষোভ দেখানোর পাশাপাশি পোস্টার মারে বিজেপির নগর মণ্ডল কমিটি।

Advertisement

ওই সমবায় ব্যাঙ্কের পরিচালন কমিটির সভাপতি পদে রয়েছেন গোপাল। ইতিমধ্যেই শহিদ মাতঙ্গিনী পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি দিবাকর জানা, বামদেব গুছাইত-সহ একাধিক তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে কাটমানি নেওয়ার অভিযোগ তুলে টাকা ফেরতের দাবিতে পোস্টার পড়েছে। এ দিন সকালে তমলুক-শ্রীরামপুর রাজ্য সড়কে সুলোচনা বাজারে একটি দোকানের সামনে গোপালের ছবি-সহ তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে পোস্টারে এলাকায় শোরগোল পড়ে। ‘সচেতন নাগরিক মঞ্চ’-র নামে দেওয়া পোস্টারে লেখা, ‘মাননীয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশমত ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রাক্তন নেতা তথা বর্তমান তৃণমূল সহসভাপতি, তৎসহ পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সমবায় সেল, তমলুক-ঘাটাল সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান গোপালচন্দ্র মাইতি (চোরা গোপাল) পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকার থেকে বর্তমান ক্ষমতাসীন তৃণমূল সরকারের রাজত্বকালে আপনি গরিব-বেকার যুবকদের কাছ থেকে চাকরির নাম করে, গরিব কৃষকদের কাছ থেকে কৃষক ভাতার নাম করে যে লক্ষ লক্ষ-কোটি কোটি টাকা কাটমানি খেয়েছেন এবং বাবলপুর সমবায় সমিতির গরিব কৃষকদের এক কোটি টাকা তছরুপ করে গরিব সাধারণ মানুষের সঙ্গে যে প্রতারণা করেছেন, সেইসব কাটমানির টাকা অবিলম্বে গরিব মানুষদের ফেরত দিন’।

প্রসঙ্গত, এবার লোকসভা ভোটের প্রচারে তমলুকের কুমরগঞ্জে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনসভায় নিজের অনুগামী সমর্থকদের নিয়ে যাওয়ার জন্য সমবায় সেলের তরফে গাড়ি ও আলাদা পরিচয়পত্র দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন গোপাল। যা নিয়ে তখন গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের অভিযোগ উঠেছিল। সুলোচনা বাজার সংলগ্ন এলাকাতেই গোপালের বাড়ি। স্থানীয় বাবলপুর সমবায় সমিতির সঙ্গে চিনি দীর্ঘদিন ধরে জড়িত। বছর তিনেক আগে তিনি ফরওয়ার্ড ব্লক ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন। এদিন দুপুরে তমলুক- ঘাটাল কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের সামনে গোপাল মাইতির বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ দেখান বিজেপি কর্মীরা। বিক্ষোভের নেতৃত্বে থাকা বিজেপির তমলুক নগর মণ্ডল সভাপতি মধুসূদন প্রামাণিকের অভিযোগ, ‘‘সমবায় সার্ভিস কমিশনকে এড়িয়ে ৫২ জন কর্মী নিয়োগের পরীক্ষা নিয়েছেন সমবায় ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে ওই কর্মী নিয়োগের চেষ্টা হচ্ছে। তাই কর্মী নিয়োগ বন্ধ করা ও ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান গোপাল মাইতির পদত্যাগ দাবি করছি।’’

Advertisement

তাঁর বিরুদ্ধে পোস্টার ও বিক্ষোভ নিয়ে গোপাল বলেন, ‘‘মিথ্যা অভিযোগ তুলে পোস্টার দেওয়া হয়েছে। এই নিয়ে আমি আইনি পদক্ষেপ করব। বিজেপি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিক্ষোভ করছে।’’ কর্মী নিয়োগ নিয়ে তাঁর দাবি, ‘‘নিয়ম মেনেই নিয়োগ হচ্ছে। বিজেপি কোনও প্রমাণ ছাড়াই মিথ্যা অভিযোগ করছে।’’

দলের জেলা সভাপতি শিশির অধিকারী বলেন, ‘‘ফরওয়ার্ড ব্লকে থাকার সময়েই গোপালবাবু নন্দীগ্রাম আন্দোলনে আমাদের সাহায্য করেছিলেন। তাই সিপিএমের লোকজন এখন বিজেপিতে গিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে এ সব করছে।’’ তৃণমূল জেলা কার্যকরী সভাপতি অখিল গিরি এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement