সুশান্ত ঘোষের ব্যক্তিগত হোয়াটসঅ্যাপের ডিপিতে রয়েছে এই ছবি।
বিতর্ক যার নিত্যসঙ্গী সেই সিপিএম নেতা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী সুশান্ত ঘোষ তাঁর ব্যক্তিগত হোয়াটসঅ্যাপের ডিপিতে (ডিসপ্লে পিকচার) প্রয়াত রাষ্ট্রপতি তথা কংগ্রেসের নেতা প্রণব মুখোপাধ্যায়ের ছবি রেখেছেন। সুশান্ত বলছেন, ব্যক্তিগত সম্পর্কের খাতিরে এই ছবি রেখেছেন তিনি। এক অবাম নেতার সরস মন্তব্য, ‘‘সমাজমাধ্যম সব পারে! অবাম-বামকেও মেলাতে পারে!’’
সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক সুশান্তের হোয়াটসঅ্যাপ ডিপিতে জ্বলজ্বল করছে তাঁর সঙ্গে প্রণবের কথোপকথনের একটি ছবি। সুশান্তের ডিপিতে এই ছবি বেশ কয়েকবছর ধরেই আছে। তাঁর ঘনিষ্ঠমহল সূত্রে জানা গিয়েছে, যখন থেকে তিনি হোয়াটসঅ্যাপ খুলেছেন, সেই প্রথম থেকেই এই ছবি রয়েছে তাঁর ডিপিতে। কংগ্রেসি রাজনীতিতে প্রণব মুখোপাধ্যায় যখন মধ্য গগনে, সেই আশির দশকের মাঝামাঝিতে বিধানসভার উপনির্বাচনে জিতে আলোকবৃত্তে আসেন সিপিএমের। তৃণমূল প্রতিষ্ঠা হওয়ার আগে পর্যন্ত বামেদের সঙ্গে সমানে টক্কর হত কংগ্রেসের। সেইসময় সিপিএমের বিরুদ্ধে প্রচারে কংগ্রেসের মুখ হিসাবে প্রণব মুখোপাধ্যায় মাঝেমধ্যেই এসেছেন মেদিনীপুরে। গড়বেতাতেও সুশান্ত ঘোষের দলের বিরুদ্ধে নির্বাচনী প্রচারে দেখা গিয়েছে প্রণবকে।
বিরোধী মতাদর্শের এক নেতার ছবি নিজের হোয়াটসঅ্যাপ ডিপিতে রেখেছেন কেন? চন্দ্রকোনা রোডে দলের কার্যালয়ে বসে সুশান্ত বলেন, ‘‘প্রণববাবু আমার পিতৃতূল্য। আমাকে পুত্রবৎ খুব স্নেহ করতেন। ওঁর সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক খুব ভাল ছিল। তাই ওঁর সঙ্গে তোলা একটি ছবি ডিপিতে রেখেছি প্রথম থেকেই। এটা ওঁকে শ্রদ্ধা জানানো।’’ এরপরই নিজের স্মার্টফোনে জমা রাখা প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সাথে তাঁর একাধিক ছবি দেখিয়ে স্মৃতিতে ডুব দেন এই সিপিএম নেতা। সুশান্ত বলেন, ‘‘যখন রাষ্ট্রপতি ছিলেন, সেইসময়ও তাঁর সঙ্গে আমার যোগাযোগ ছিল। তখন বীরভূমের বাড়িতে যখনই আসতেন, আমি যেতাম। শেষবার যখন বাড়ির দুর্গাপুজোয় এসেছিলেন, সেইসময় ওঁর সঙ্গে আমার অনেক ছবিই আছে। মাঝেমধ্যে দেখলে মন খারাপ হয়ে যায়।’’ প্রণবের সঙ্গে নিজের ছবি হোয়াটসঅ্যাপ ডিপিতে দেওয়ায় দলের মধ্যে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়নি? সুশান্তের জবাব, ‘‘বামপন্থীরা বরাবর সৌজন্যের রাজনীতিতে বিশ্বাসী। তাই এই প্রশ্ন ওঠাও অমূলক।’’
জেলা কংগ্রেস সভাপতি সমীর রায় বলেন, ‘‘কেউ পিতৃতুল্য মনে করলে প্রোফাইল পিকচারে রাখতেই পারেন, এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না।’’ তবে তৃণমূলের বিধায়ক তথা জেলাপরিষদের সভাধিপতি উত্তরা সিংহ হাজরার খোঁচা, ‘‘সুশান্ত যা পাপ করেছেন, তা গুণী একজন মানুষের সঙ্গে নিজের ছবি দিয়ে ঢাকা দেওয়া যাবে না।’’
বিজেপি অবশ্য এতে দোষের কিছু দেখছে না। বিজেপির জেলা সভাপতি তাপস মিশ্র বলছেন, ‘‘প্রণব মুখোপাধ্যায় কংগ্রেসের তাবড় নেতা, দীর্ঘদিন অর্থমন্ত্রী ছিলেন। পরে রাষ্ট্রপতিও হয়েছিলেন। উনিও (সুশান্ত) রাজ্যের মন্ত্রী ছিলেন। একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ থাকতেই পারে। ফলে ছবিও থাকতে পারে। এসব রাজনীতির সৌজন্য। এ নিয়ে মন্তব্য করা উচিত নয়।’’