পুলিশের চাকরি পেয়েও কাজে গরহাজির
Maoist

তলব প্রাক্তন মাওবাদীদের

পুলিশের এক সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার পশ্চিম মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রাম জেলার বাসিন্দা, পেশায় হোমগার্ড ৩৩ জনকে মেদিনীপুরে ডেকে পাঠানো হয়েছে। এরমধ্যে ১০ জনই স্পেশাল হোমগার্ড।

Advertisement

কিংশুক গুপ্ত ও বরুণ দে

ঝাড়গ্রাম ও মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০২০ ০১:৩৬
Share:

প্রতীকী চিত্র।

স্পেশাল হোমগার্ডদের একাংশ এখন কাজে যোগ দিচ্ছেন না। তাই তাঁদের তলব করা হল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায়। আপাত দৃষ্টিতে এটা পুলিশের রুটিন কাজ। পুলিশ-প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলাও হচ্ছে তাই। কিন্তু সাম্প্রতিক কিছু ঘটনাবলির পরিপ্রেক্ষিতে এই কাজ আলাদা তাৎপর্য পাচ্ছে। ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়িতে মাওবাদী নামাঙ্কিত পোস্টার উদ্ধার হয়। পরে বেলপাহাড়ি পরিদর্শনে এসেছিলেন রাজ্য পুলিশের ডিজি বীরেন্দ্র। ঝাড়গ্রামে এসে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিষয়ে পর্যালোচনা বৈঠকও করেন বীরেন্দ্র। ডিজি-র ওই পর্যালোচনা বৈঠকের দিন কয়েক পরে মেদিনীপুরে স্পেশাল হোমগার্ডদের নিয়ে বৈঠক হয়। বৈঠকে শীর্ষ পুলিশ আধিকারিকেরা ছিলেন। দিন কয়েক পরে কাজে গরহাজির স্পেশাল হোমগার্ডদের ডেকে পাঠানো হল জেলায়।

Advertisement

জঙ্গলমহলকে শান্ত করতে প্রাক্তন মাওবাদীদের স্পেশাল হোমগার্ড পদে নিয়োগ করেছিল তৃণমূল সরকার। যাঁরা এক সময়ে জঙ্গলমহলে সন্ত্রাসের আবহ তৈরি করেছিলেন, এখন তাঁরাই পুলিশের সবচেয়ে বড় ভরসা! মাওবাদীদের গোপন গতিবিধির উপরে নজর রাখতে স্পেশ্যাল হোমগার্ডদের উপরে অনেকটাই নির্ভর করতে হয় পুলিশকে। তাই সাম্প্রতিক ঘটনাবলির পরিপ্রেক্ষিতে এই স্পেশাল হোমগার্ডদের একাংশের গরহাজিরা উদ্বেগ বাড়াচ্ছে পুলিশকর্তাদের। তাই এই তলব বলে পুলিশ সূত্রের খবর। বাহিনীর পোশাক পরেই হাজির হতে বলা হয়েছে। যদিও পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা পুলিশ সুপার দীনেশ কুমার বলছেন, ‘‘এমন কিছু জানা নেই।’’

পুলিশের এক সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার পশ্চিম মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রাম জেলার বাসিন্দা, পেশায় হোমগার্ড ৩৩ জনকে মেদিনীপুরে ডেকে পাঠানো হয়েছে। এরমধ্যে ১০ জনই স্পেশাল হোমগার্ড। যাঁদের মেদিনীপুরে ডেকে পাঠানো হয়েছে, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন রাজু হাঁসদা, করণ হেমব্রম, শুকচাঁদ মুর্মু, সুবল মান্ডি প্রমুখ। সাঁকরাইল থানার স্পেশ্যাল হোমগার্ড রাজু হাঁসদার বাড়ি লালগড়ের খাসজঙ্গলে। ২০০৮- ’০৯ সালে জনসাধারণের কমিটির আন্দোলনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন রাজু। লালগড় ব্লক যুব তৃণমূলের সভাপতি পদ থেকে শুভেন্দু অধিকারীর ঘনিষ্ঠ তন্ময় রায়কে সরিয়ে কয়েকদিন আগেই ছত্রধর মাহাতোর ঘনিষ্ঠ রাজুকে নতুন যুব সভাপতি করা হয়েছে। এখনও সাংগঠনিক কর্মসূচি শুরু করেননি রাজু। তার মধ্যেই তলব। তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক ছত্রধর মাহাতোর দাবি, ‘‘রাজু এখন পুলিশের চাকরি করছেন না। উনি চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন।’’ রাজু বলেন, ‘‘পুলিশের চাকরি করে কী হবে। আমি ছেড়ে দিয়েছি।’’ আপনি ডাক পেয়েছেন? রাজুর জবাব, ‘‘ওসব আমি কিছু জানি না।’’ শালবনির মাজুরকাটার শুকচাঁদ মুর্মু এ দিন বলেন, ‘‘আমার শরীর ভাল নেই। তাই কয়েক দিন কাজে যেতে পারিনি।" তাঁর কথায়, ‘‘আমি শুনেছি, আমাকে কাল ডেকে পাঠানো হয়েছে। কাল না- যেতে পারলেও পরশু যাব।’’

Advertisement

জঙ্গলমহলের এক অঞ্চলের তৃণমূল সভাপতি বলেন, ‘‘আমার এলাকার একজনকে মেদিনীপুরে ডাকা হয়েছে বলে শুনেছি। ও আগে জনসাধারণের কমিটি করত। আত্মসমর্পণের পরে পুলিশের চাকরি পায়। এখন শুনছি, ও বিজেপির সঙ্গে মেলামেশা করছে।’’ ২০১১ সালে রাজ্যে পরিবর্তনের পরে জঙ্গলমহলে মাওবাদীদের অনেকেই আত্মসমর্পণ করে সমাজের মূলস্রোতে ফিরেছেন। প্রশিক্ষণ নিয়ে স্পেশাল হোমগার্ড হিসেবে বিভিন্ন থানায় রয়েছেন। তবে বিগত পঞ্চায়েত ভোটের পর থেকে জঙ্গলমহলে শক্তি বেড়েছে বিজেপির। সামনে বিধানসভা ভোট। ফের ইতিউতি উদ্ধার হচ্ছে মাওবাদী নামাঙ্কিত পোস্টার। স্পেশাল হোমগার্ডদের তলবের সঙ্গে কি এর কোনও যোগসূত্র রয়েছে? জেলা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘আত্মসমর্পণকারী মাওবাদীদের স্পেশাল হোমগার্ডের চাকরি দেওয়া হয়েছে। ওঁরা সমাজের মূলস্রোতে রয়েছেন। সকলে ভাল করে চাকরি করে জীবনযাপন করুন, এটাই চাই।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement