ভাবাচ্ছে তমলুকে উপ-নির্বাচন

দলের কোন্দল সামলাতে বৈঠক শুভেন্দুর

বিপুল জনসমর্থন নিয়ে ফের রাজ্যে ক্ষমতায় এসেছে তৃণমূল। কিন্তু তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি পূর্ব মেদিনীপুরে ১৬টি আসনের মধ্যে হাত থেকে বেরিয়ে গিয়েছে তিনটি আসন। হলদিয়া, তমলুক ও পূর্ব পাঁশকুড়া বিধানসভায় হার তাই অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছে শাসকদলকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

তমলুক শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০১৬ ০০:৪০
Share:

বিপুল জনসমর্থন নিয়ে ফের রাজ্যে ক্ষমতায় এসেছে তৃণমূল। কিন্তু তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি পূর্ব মেদিনীপুরে ১৬টি আসনের মধ্যে হাত থেকে বেরিয়ে গিয়েছে তিনটি আসন। হলদিয়া, তমলুক ও পূর্ব পাঁশকুড়া বিধানসভায় হার তাই অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছে শাসকদলকে। সর্বোপরি শুভেন্দু অধিকারীর খাস তালুক হিসেবে পরিচিত এই জেলায় তিন আসন খোয়ানোয় নিজের এলাকায় রাজনৈতিক সমর্থন হারানো নিয়েও উঠছে প্রশ্ন।

Advertisement

আর নন্দীগ্রাম বিধানসভায় জিতে আসার পর তমলুক লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন শুভেন্দুবাবু। ফলে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ফের তমলুক লোকসভার উপ-নির্বাচন অনিবার্য। এই পরিস্থিতিতে তমলুক লোকসভায় তৃণমূলের তরফে যাকেই প্রার্থী করা হোক তাঁকে জেতানো একটা বড়সড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে শাসকদলের কাছে। তাই বিধানসভা ভোটে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার তিন আসনে হারের পর নড়েচড়ে বসেছে জেলা নেতৃত্ব।

তৃণমূলের দলীয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলার তিন আসনে হারের কারণ হিসেবে তৃণমূলের স্থানীয় নেতাদের কোন্দলকে চিহ্নিত করেছে জেলা নেতৃত্ব। ভোটের ফল প্রকাশ হওয়ার পরই হলদিয়া বিধানসভা এলাকার মধ্যে থাকা হলদিয়া পুরসভা ও সুতাহাটা ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস কমিটি ভেঙে দিয়েছে জেলা নেতৃত্ব। আর তমলুক বিধানসভা এলাকার মধ্যে থাকা শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের যুযুধান দুই গোষ্ঠীর নেতাদের কোন্দল মেটাতে হস্তক্ষেপ করেছেন খোদ শুভেন্দু অধিকারী। দলের একাংশের মতে, শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকে শুভেন্দুবাবুর অনুগামী হিসেবে পরিচিত দিবাকর জানা, সেলিম আলি, বিভাস কর’দের সঙ্গে তমলুকের বিদায়ী বিধায়ক তথা রাজ্যের জলসম্পদ মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্রের অনুগামীদের বিরোধ চরমে ওঠে। সেই দলে রয়েছেন তৃণমূলের ব্লক কার্যকরী সভাপতি শরৎ মেট্যা, আতিয়ার রহমান, ব্লক তৃণমূল যুবকংগ্রেস সভাপতি জয়দেব বর্মণরা। এমনকি ভোটের আগে তমলুক কেন্দ্র থেকে সৌমেন মহাপাত্রকে সরিয়ে পাশের জেলা থেকে ভোটে দাঁড় করানোয় ক্ষুব্ধ ছিলেন তাঁর সমর্থকরা। তাই তাঁর অনুগামীরা তমলুকের তৃণমূল প্রার্থী নির্বেদ রায়ের হয়ে সেভাবে প্রচারে নামেনি বলেও অভিযোগ ওঠে। ফলপ্রকাশের পর দেখা যায় নির্বেদ রায় বাম-কংগ্রেস জোটের সিপিআই প্রার্থী অশোক দিন্দার কাছে ৫২০ ভোটের ব্যবধানে হেরে যান।

Advertisement

২০১১ সালের বিধানসভা ভোটে তমলুক কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী সৌমেন মহাপাত্র প্রায় ২০ হাজার ব্যবধানে সিপিআই প্রার্থী জগন্নাথ মিত্রকে হারিয়ে জয়ী হন। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে তমলুক লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী সিপিএম প্রার্থী ইব্রাহিম আলির চেয়ে ৩০ হাজার এগিয়ে ছিলেন। কিন্তু মাত্র দু’বছরের ব্যবধানে এবারের বিধানসভা ভোটে সেই তমলুক কেন্দ্রেই হেরে গেল তৃণমূল। জানা গিয়েছে, এর মধ্যে শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের মধ্যে ১০ টি গ্রামপঞ্চায়েতে তৃণমূল ক্ষমতায় থাকলেও এবার ভোট প্রাপ্তির নিরিখে ৯ টি গ্রামপঞ্চায়েতে পিছিয়ে পড়েছে রাজ্যের শাসক দল।

আর এই ফলাফলই চিন্তা বাড়িয়েছে শাসকদলের। জানা গিয়েছে, ব্লকের যুযুধান দুই গোষ্ঠীর নেতাদের মধ্যে বিরোধ মেটাতে সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের স্থানীয় নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন। বৈঠকে শুভেন্দুবাবু দলের দুই গোষ্ঠীর নেতাদের বক্তব্য শোনার পাশাপাশি দলের এই কোন্দল দূর করে একসঙ্গে দলীয় কাজ করার নির্দেশ দেন বলে জানা গিয়েছে । দিবাকরবাবু বলেন, ‘‘দলে নিজেদের মধ্যে কিছুটা মনোমালিন্য হয়েছিল। সেই মনোমালিন্য দূর করতে শুভেন্দুবাবু বৈঠক করেছেন। শুভেন্দুবাবুর নির্দেশ অনুযায়ী একসঙ্গে সবাই মিলে চলার বিষয়ে ঐক্যমত্য হয়েছে ।’’ বৈঠকের প্রসঙ্গে জয়দেববাবু বলেন, ‘‘দলে নিজেদের মধ্যে কিছুটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যা মেটাতে শুভেন্দুবাবু উদ্যোগ নেওয়ায় আমরা খুশি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement