টিউশনরাজ বন্ধের দাবি পড়ুয়াদের

প্রথম বর্ষের রচনা দাসের অপমৃত্যু ঘিরে মঙ্গলবারও উত্তেজনা ছিল মেদিনীপুর কলেজে। এ দিনও বিক্ষোভ দেখিয়েছেন ছাত্রছাত্রীরা। রচনার মৃত্যুর যথাযথ তদন্তের পাশাপাশি কলেজ শিক্ষকদদের ‘টিউশনরাজ’ বন্ধের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০১৭ ১৩:৪০
Share:

প্রতিবাদ: মেদিনীপুর কলেজে বিক্ষোভ। নিজস্ব চিত্র

প্রথম বর্ষের রচনা দাসের অপমৃত্যু ঘিরে মঙ্গলবারও উত্তেজনা ছিল মেদিনীপুর কলেজে। এ দিনও বিক্ষোভ দেখিয়েছেন ছাত্রছাত্রীরা। রচনার মৃত্যুর যথাযথ তদন্তের পাশাপাশি কলেজ শিক্ষকদদের ‘টিউশনরাজ’ বন্ধের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। এ দিন একাধিক বিভাগের বেশ কয়েকজন পড়ুয়া ইন্টারন্যাল পরীক্ষা ‘বয়কট’ও করেন। মেদিনীপুর কলেজের অধ্যক্ষ গোপালচন্দ্র বেরা অবশ্য বলেন, “আমার কাছে এমন কোনও খবর নেই। হতে পারে কেউ কেউ হয়তো পরীক্ষা দিতে আসেনি।”

Advertisement

বিক্ষোভরত পড়ুয়াদের অভিযোগ, এই কলেজের শিক্ষকের কাছে টিউশন না নিলে পরীক্ষায় বেশি নম্বর পাওয়া যায় না। ‘অভিযোগ কি ঠিক? অধ্যক্ষের জবাব, “ছাত্রছাত্রীদের কেউ কেউ বিষয়টি নিয়ে বলেছেন। খতিয়ে দেখছি।” কলেজের এক শিক্ষকের অবশ্য সংযোজন, “সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এলে প্রয়োজনে খাতা দেখা হবে। খাতা দেখলেই বোঝা যাবে কে, কী লিখেছে আর কত নম্বর পেয়েছে।”

কলেজের গার্লস হস্টেলে রচনার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধারের পর থেকেই অভিযোগ উঠছিল, প্রাইভেট টিউশন না নেওয়ায় তিনি প্রথম সেমেস্টারের পরীক্ষায় ভাল ফল করতে পারেননি। সোমবার রচনার বাবা-মা পুলিশে অভিযোগও দায়ের করেন। তাঁদের দাবি, রচনা আত্মহত্যা করতে পারে না। ঘটনার পিছনে অন্য কোনও কারণ রয়েছে। রচনার বাবা রামশঙ্কর দাসের কথায়, “মেয়ের এই মৃত্যু আমার কাছে রহস্যজনক। মৃত্যুর প্রকৃত কারণ সামনে আসুক।” রামশঙ্করবাবুর আরও বক্তব্য, “মেয়ের সঙ্গে প্রায়ই ফোনে কথা হত। ও বলত, যারা কলেজের শিক্ষকদের কাছে টিউশন পড়ে তারাই বেশি নম্বর পায়। আমার মেয়ে কলেজের শিক্ষকদের কাছে টিউশন পড়ত না। জানি না এর সঙ্গে নম্বর কম পাওয়ার সম্পর্ক আছে কি না। পুলিশ তদন্তে সব দিক দেখুক।”

Advertisement

মেদিনীপুর কলেজ স্বশাসিত। নিয়ম অনুযায়ী, স্বশাসিত কলেজের শিক্ষকেরা গৃহশিক্ষকতা করতে পারেন না। কিন্তু নিয়ম ভেঙেই একাংশ শিক্ষক তা করছেন বলে খবর। কলেজের এক সূত্রে খবর, এ নিয়ে শিক্ষকদের সতর্ক করেও বিশেষ লাভ হয়নি। কলেজের ইংরেজি বিভাগের এক শিক্ষকের আবার ব্যাখ্যা, “ছাত্রছাত্রীরা গিয়ে যদি সাহায্য চায়, তাহলে তো ফিরিয়ে দিতে পারি না!” কলেজের অন্য এক শিক্ষকেরও বক্তব্য, “ছাত্রছাত্রীরা নিজেরাই এসে কয়েকটি বিষয় বুঝিয়ে দিতে বলে। তাদের ফেরানো সম্ভব নয়।”

ছাত্রছাত্রীদের অবশ্য অভিযোগ, নেহাত সাহায্য নয়, একাংশ শিক্ষক রীতিমতো ‘ফি’ নিয়ে গৃহশিক্ষকতা করেন। টাকার অঙ্কও মোটা। ইলেকট্রনিক্স বিভাগের এক ছাত্রীর কথায়, “সেমেস্টারপিছু তিন হাজার টাকা ফি নেন এক একজন শিক্ষক।” পড়ুয়াদের আরও দাবি, কলেজে ভালভাবে পড়ানো হয় না। তাই বাধ্য হয়ে টিউশন নিতে যেতে হয়। প্র্যাকটিক্যাল ক্লাসও ভাল করে হয় না। শুধু তাই নয়, ছাত্রছাত্রীদের আরও অভিযোগ, টিউশন না নিতে গেলে কবে পরীক্ষা, কবে প্র্যাকটিক্যাল কিছুই জানা যায় না। কলেজের এক শিক্ষকের অবশ্য দাবি, “এ সব ভিত্তিহীন অভিযোগ। পরীক্ষার নির্ঘণ্ট নোটিস দিয়ে জানানো হয়। বোর্ডেও নোটিস থাকে।” স্বশাসিত এই কলেজে পরিকাঠামোগত নানা সমস্যা রয়েছে বলেও দাবি করেছেন পড়ুয়ারা। অধ্যক্ষ গোপালচন্দ্রবাবুর আশ্বাস, “আরও পরিকাঠামো উন্নয়নের সব রকম চেষ্টা চলছে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement