বামেদের পথ অবরোধ, তীব্র গরমে ভোগান্তি

বামপন্থী কৃষক সংগঠনগুলোর পথ অবরোধের জেরে চূড়ান্ত দুর্ভোগে পড়লেন সাধারণ মানুষ। ব্যাহত হল যান চলাচল। সোমবার সকালে মেদিনীপুর শহর সংলগ্ন চারটি এলাকায় বিক্ষোভ-অবরোধ কর্মসূচি হয়। শহরের পাশ দিয়েই চলে গিয়েছে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক। অবরোধের জেরে জাতীয় সড়কে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে বাস-লরি । নাকাল হন নিত্যযাত্রীরা। অনেকে বাস থেকে নেমে হেঁটে শহরে পৌঁছন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০১৫ ০০:৪১
Share:

বামপন্থী কৃষক সংগঠনগুলির উদ্যোগে পথ অবরোধে দুর্ভোগ। ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক ও ঘাটাল-মেদিনীপুর রাজ্য সড়কের সংযোগস্থলে ধর্মায়।

বামপন্থী কৃষক সংগঠনগুলোর পথ অবরোধের জেরে চূড়ান্ত দুর্ভোগে পড়লেন সাধারণ মানুষ। ব্যাহত হল যান চলাচল।

Advertisement

সোমবার সকালে মেদিনীপুর শহর সংলগ্ন চারটি এলাকায় বিক্ষোভ-অবরোধ কর্মসূচি হয়। শহরের পাশ দিয়েই চলে গিয়েছে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক। অবরোধের জেরে জাতীয় সড়কে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে বাস-লরি । নাকাল হন নিত্যযাত্রীরা। অনেকে বাস থেকে নেমে হেঁটে শহরে পৌঁছন। অমিয় রাণা, সীমা দোলুই প্রমুখ নিত্যযাত্রীর বক্তব্য, “এই গরমে এমন কর্মসূচি হলে মানুষের সমস্যা হবেই। এমনিতেই শরীরের ঘাম শুকনো যেন দায় হয়ে উঠছে। এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকা বাসের মধ্যে এক-দেড় ঘন্টা বসে থাকা অসম্ভব।”

পরিস্থিতি দেখে বামেদের বিঁধতে ছাড়ছে না তৃণমূল। তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায় বলেন, “এই অরাজকতা মানুষ আর কতদিন সহ্য করবে? একটা লোকও ওই কর্মসূচির সমর্থনে ছিল না! যে কয়েকজন অবরোধে ছিল, তারা সকলেই বাইরের। অবরোধ করে হাজার হাজার মানুষকে সমস্যায় ফেলা হল। মানুষ আর এই রাজনীতি চায় না।” পথ অবরোধের জেরে সাধারণ মানুষ যে সমস্যায় পড়েছেন, তা মানছে বামপন্থী কৃষক সংগঠনগুলোও। সংগঠনগুলোর পক্ষে হরেকৃষ্ণ সামন্ত বলেন, “সরকারই চাইছে মানুষ সমস্যায় পড়ুক! এমন কর্মসূচি না- হলে তো সরকারের টনক নড়বে না।” তাঁর কথায়, “এটা পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি ছিল। আমরা আগেই জানিয়েছিলাম, প্রতিবাদ কর্মসূচি হবে। জেলা সদর অবরুদ্ধ
হতে পারে।”

Advertisement


খড়্গপুরের মোহনপুরে বামেদের অবরোধ কর্মসূচি।
বক্তব্য রাখছেন সিপিএমের জেলা সম্পাদক তরুণ রায়।

আত্মহত্যাকারি আলু চাষি পরিবারগুলোকে ১ লক্ষ টাকা করে অনুদান দেওয়া, ক্ষতিগ্রস্ত আলু চাষিদেরও বিঘা প্রতি কমপক্ষে ১০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া, অবিলম্বে প্রত্যেক গ্রাম পঞ্চায়েতে সরকারি ক্রয় কেন্দ্র চালু করে সহায়ক মূল্যে ধান কেনার ব্যবস্থা করা সহ বেশ কিছু দাবিতে এদিন পথ অবরোধ হয়। কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের জমি অধিগ্রহন সংক্রান্ত অর্ডিন্যান্স বাতিল করারও দাবি জানানো হয়। পাশাপাশি, বনরক্ষা কমিটিগুলোকে সচল করে বনরক্ষার জন্য তাদের প্রাপ্ত অর্থ মিটিয়ে দেওয়া, সব গরিব মানুষকে প্রতি মাসে ২টাকা কেজি দরে ৩৫ কেজি চাল বা গম সরবরাহের ব্যবস্থা করার দাবি জানানো হয়।

মোহনপুর, ধর্মা, কেরানিচটি এবং রাঙামাটি, মেদিনীপুর শহরের আশপাশের এই চারটি এলাকায় সোমবার সকাল ন’টা থেকে অবস্থান- বিক্ষোভ শুরু হয়। চলে সকাল এগারোটা পর্যন্ত। মোহনপুর এবং ধর্মায় ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করা হয়। জাতীয় সড়কের উপর দিয়ে প্রচুর গাড়ি চলাচল করে। মিনিট পনেরো-কুড়ি অবরোধ হলেই সারি দিয়ে একের পর এক বাস- লরি দাঁড়িয়ে পড়ে। এদিন দীর্ঘক্ষণ অবরোধ চলায় সমস্যা আরও জটিল হয়। বেলা বারোটা নাগাদও ধর্মায় সারি দিয়ে বেশ কিছু লরি দাঁড়িয়ে ছিল। একে একে সেগুলো ছাড়া হয়। বামপন্থী কৃষক সংগঠনগুলোর দাবি, মানুষের স্বার্থেই এই আন্দোলন। হরেকৃষ্ণবাবু বলেন, “গোটা দেশেই সঙ্কট চলছে। এ রাজ্যে সঙ্কট আরও বেশি। চাষিরা ফসলের দাম না- পেয়ে আত্মহত্যা করছেন। অথচ, সরকারের ভ্রুক্ষেপ নেই।’’ তাঁর কথায়, “বলা হচ্ছে, সহায়ক মূল্যে ধান কেনা হয়েছে। কিন্তু, কোথায় হয়েছে চাষিরা জানেন না। আমরাও দেখতে পাইনি। একশো দিনের কাজের মজুরি বকেয়া রয়েছে। তা-ও মেটানো হচ্ছে না।” এ দিনও মেদিনীপুরের তাপমাত্রা ঘোরাঘুরি করেছে ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশপাশে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অস্বস্তিকর গরমও বেড়েছে। তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোত্‌ ঘোষ বলেন, “কলেজে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এই সময় অবরোধ করে সিপিএম কার স্বার্থ রক্ষা করল বুঝতে পারছি না! বরং মানুষের কষ্ট হল।”

— নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement